তৃণমূলকে তোপ বিমান-সূর্যের
অশান্ত কেশপুর, হামলা জামশেদ আলি ভবনে
ক দশক আগের উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি উস্কে কেশপুরে ফের অশান্তি বাড়ছে। সোমবারই কেশপুরের পঞ্চমীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে শেখ সমিয়ত নামে তৃণমূল সমর্থক পরিবারের এক কিশোর। সিপিএমের লোকজনের গুলিতেই এই মৃত্যু বলে অভিযোগ তৃণমূলের। মঙ্গলবার সমিয়তের দেহ নিয়ে শোকমিছিলের সময়ে তৃণমূল কর্মীরা ভাঙচুর চালালেন সিপিএমের জোনাল কার্যালয় জামশেদ আলি ভবনে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসও ছুড়তে হয়। শাসক দলের ৬ জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। হামলায় অভিযুক্ত অন্যদেরও খোঁজ চলেছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি।
কেশপুরে বিধ্বস্ত সিপিএমের জোনাল অফিস জামশেদ আলি ভবন। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
কেশপুরে সিপিএমের এক সময়ের ‘ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল’ জামশেদ আলি ভবনে এই হামলার পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র যে অভিযোগ সিপিএম তুলে আসছে, তা-ও নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, “নিরাপত্তাহীনতায় কেশপুরে আমাদের দলের বহু সাধারণ সমর্থকই ঘরছাড়া। এমনই কয়েক জন জামশেদ আলি ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রশাসনকে বারবার জানানো সত্ত্বেও তাঁদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা হয়নি। এ দিন সেই অসহায় মানুষগুলিই আক্রান্ত হলেন।” সূর্যবাবুর অভিযোগ, “হামলার খবর পেয়ে আমরা পুলিশকে জানাই। কিন্তু পুলিশের সামনেই আরও অনেকক্ষণ ধরে হামলা চলে।” এক লিখিত বিবৃতিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও এ দিনের ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের উপরে হামলা’ বলে চিহ্নিত করে প্রশাসনের কাছে ‘নিরপেক্ষ তদন্ত’ ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের অবশ্য দাবি, “এ দিন যা ঘটেছে তা স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের ফল। তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
দশ বছর আগে এক বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই কেশপুর-গড়বেতার ‘দখল’ নিয়েই সিপিএম-তৃণমূলের নিয়মিত সংঘর্ষে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। সে দফায় পিছু হটতে হয় তৃণমূলকে। এ বার রাজ্যে তৃণমূলের বিপুল জয়ের পরেই আক্রমণের আশঙ্কায় কেশপুরের অনেক সিপিএম নেতা-কর্মী এলাকা ছাড়া হন। মে মাসে এক বার জামশেদ আলি ভবনে ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনা ঘটলেও অশান্তি বেশি দূর গড়ায়নি। ওই ভবনের নিরাপত্তায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়। সেই নিরাপত্তায় ‘আশ্বস্ত’ হয়েই ঘর ছাড়া বেশ কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থক জামশেদ আলি ভবনেই থাকছিলেন।
কেশপুরে জামশেদ আলি ভবনের অদূরে উত্তেজিত তৃণমূল সমর্থকদের
ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
সমিয়তের দেহ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ সরুইয়ের তৃণমূল কার্যালয় থেকে শুরু হয়েছিল কয়েকশো মানুষের শোক-মিছিল। কিলোমিটার দুয়েক দূরের কেশপুর বাজারে মিছিল পৌঁছনোর আগেই বাধে গণ্ডগোল। পর্যাপ্ত পুলিশ না-থাকার সুযোগে মিছিলের কিছু লোক জামশেদ আলি ভবন লক্ষ করে ইট ছুড়তে শুরু করে। কয়েক জন ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। কাগজপত্র বার করে আগুনও লাগানো হয়। এমনকী জামশেদ আলির মূর্তিটিও ভাঙা হয়। ওই জোনাল কার্যালয়ে আশ্রিত এক মহিলা-সহ ৪৫ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থক সন্ত্রন্ত হয়ে পড়েন। প্রাণভয়ে তাঁরা দোতলার একটি ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন।
তৃণমূলের দাবি, জামশেদ আলি ভবন থেকে এক রাউন্ড গুলি ছোড়ার পরেই উত্তেজনা ছড়ায়। তৃণমূলের লোকজন অবশ্য নিজেরা ওই সিপিএম কার্যালয়ে তন্ন-তন্ন করে ‘তল্লাশি’ চালিয়েও কোনও অস্ত্র উদ্ধার করে দেখাতে পারেনি। হামলা বাড়ার খবরে বিশাল বাহিনী নিয়ে পৌঁছন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় ও ডিএসপি (অপারেশন) অনীশ সরকার।
মেদিনীপুরে বৈঠক স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি-র। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশকেই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। এরপরে লাঠি চালাতে শুরু করে পুলিশ। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটানো হয়। পরে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উদ্ধার করে আনা হয় থানায়। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলইয়ের অভিযোগ, “গুলিতে সমিয়তের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তবে ওই ঘটনাও তৃণমূলেরই কোন্দলের জের। আর এ দিনের হামলা পূর্ব পরিকল্পিতই।” কেশপুরের সেই মহম্মদ রফিক, যিনি অধুনা কংগ্রেসের নেতা, তাঁর মন্তব্যও বিশেষ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। রফিকের বক্তব্য, “ভোটের পর সিপিএমের এক দল কর্মী রাতারাতি তৃণমূলে নাম লিখিয়েছে। তাদের মদতেই নতুন করে অশান্তি ছড়াচ্ছে কেশপুরে।” তৃণমূল শিবিরের একাংশেরও অভিযোগ, এই ‘নব্য তৃণমূলীরা’ই আশন্তির মূলে। তলে তলে তারা সিপিএমের নির্দেশেই গোলমাল বাধাচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.