নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
চালকলের মালিকদের বিরুদ্ধে আরামবাগ মহকুমার মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘ দিনের। যত্রতত্র ছাই ফেলার ফলে জেরবার তাঁরা। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কারও কাছে অভিযোগ জানিয়ে ফল পাননি বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, ছাই ফেলার জেরে এক দিকে যেমন দূষণ ছড়াচ্ছে, তেমনই পূর্ত দফতরের রাস্তাগুলির দু’ধারে নালাগুলি বুজে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে নিকাশিতেও। সম্প্রতি পূর্ত দফতর (নির্মাণ) বিষয়টি জানিয়ে বিহিত চেয়েছে মহকুমাশাসকের কাছে।
গোঘাটের রঘুবাটি অঞ্চলের গোবিন্দপুর, মদিনা, বাঘারপাড় প্রভৃতি গ্রামের বাসিন্দা রতন চক্রবর্তী, বৃন্দাবন দাস, ফরিদা বিবিদের অভিযোগ, চিমনি দিয়ে ছাই উড়ে নাজেহাল অবস্থা। জল-খাবারে ছাই পড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি হচ্ছে। ছাই ফেলে নালা বুজিয়ে দিচ্ছে চালকল মালিকেরা। ছাই থেকে হাঁপানি, চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সকলে।
গ্রামের মানুষের অভিযোগকে দীর্ঘ দিন ধরে গুরপুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ থাকলেও এ বার পূর্ত দফতরের অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ দফতরের হুগলি আঞ্চলিক দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পরিবেশ-সংক্রান্ত আইন মেনে চলতে চালকল কর্তৃপক্ষকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে সব তাঁরা মানছেন না। তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি আরামবাব মহকুমায় তদন্তে এসেছিলেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের হুগলি অফিসের বাস্তুকার বিপ্লব বৈদ্য। তিনি জানান, সমস্ত বিষয়টি সরেজমিনে দেখে পর্ষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হচ্ছে।
আরামবাগ মহকুমার পূর্ত দফতরের রাস্তাগুলি দ্রুত ভেঙে যাওয়ার দায় কিছু চালকল মালিকের বিরুদ্ধে চাপিয়েছে পূর্ত দফতর। দফতর সূত্রের খবর, রাস্তার ভৌগলিক অবস্থান এবং কারিগরী অংশ যথাযথ রাখতে দু’দিকে নালাগুলি রাখা হয়। নিকাশিও যার অন্যতম কারণ। কিন্তু ছাইয়ে বোজা নালাগুলি দিয়ে নিকাশির জল আটকে যাওয়ায় রাস্তার উপরেও চাপ বাড়ে। ফলে, তারও আয়ু কমে। আরামবাগ মহকুমার পূর্ত দফতরের (নির্মাণ) সহকারী বাস্তুকার অমলকুমার বিশ্বাসের অভিযোগ, ছাই ফেলা প্রতিহত করতে না পারলে রাস্তা ঠিক রাখাই মুশকিল। তাঁর কথায়, “রাস্তার উপরে রীতিমতো অত্যাচার হচ্ছে। যত্রতত্র ছাইা ফেলার পাশাপাশি জবরদখল হচ্ছে। আটকাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাই ফেলা হচ্ছে লুকিয়ে-চুরিয়ে। চালকলগুলিকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি।” চারটি চালকলের বিরুদ্ধে মহকুমাশাসক, এসডিপিও এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।”
মহকুমায় ৯৮টি চালকল। এগুলির অধিকাংশই আরামবাগ এবং গোঘাটে। অভিযোগ প্রসঙ্গে চালকল মালিক সংগঠনের পক্ষে অচিন্ত্য কুণ্ডু বলেন, “আমরা নিয়ম ভেঙে নিজেরা কোথাও ছাই ফেলছি না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমাদের ছাই কিনে কোথাও ফেললে তাতে আমাদের দায়িত্ব থাকে না।” সরকার থেকে ছাই ফেলার জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে তাঁর অভিযোগ। ‘বিপজ্জনক ব্যবসা’র জন্য তাঁরা সরকারকে নিয়মিত কর দিচ্ছেন বলেও জানান। চালকল মালিকদের পরামর্শ, এই ছাই যদি নিচু জমিতে ফেলা হয়, কিংবা নদী বাঁধ মেরামতিতে ব্যবহার করা হয়, সে বিষয়টি ভেবে দেখুক সরকার। |