|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
শৃঙ্খলাহীন |
টু জি স্পেকট্রামের অনিয়ম রোধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম ততটা তৎপর হন নাই— এই মর্মে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরিত অর্থ মন্ত্রকের নথি লইয়া শোরগোল শুরু হইয়াছে। নথিটি কেন এত কাল অপ্রকাশিত ছিল, সেই প্রশ্ন যেমন উঠিতেছে, তেমনই এই সময় (যখন স্পেকট্রাম বিতরণ সংক্রান্ত মামলায় সরকার বিপাকে, তখনই) তাহা গণমাধ্যমে ফাঁস করা হইল কেন, প্রশ্ন তাহা লইয়াও। এবং এই সব প্রশ্নের আড়ালে যে গভীরতর প্রশ্নটি উঁকি মারিতেছে, তাহা হইল ইউ পি এ সরকারের দুই বরিষ্ঠ মন্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েন, যাহা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বেকায়দায় পড়া সরকারকে আরও বেকায়দায় ফেলিয়া দিয়াছে। কেননা নোটটি ইতিপূর্বে তদন্তকারী যৌথ সংসদীয় কমিটি কিংবা সি বি আই-এর হাতে তুলিয়া দেওয়া হয় নাই কেন, অতঃপর কমিটির তরফে সেই প্রশ্ন উঠিবে। সর্বোচ্চ আদালতেও প্রশ্নটি তুলিতে চলিয়াছেন মামলাকারী সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। শীর্ষ আদালত যদি ওই নথির তদন্তে সি বি আইকে নির্দেশ দেয়, সরকারের বিপন্নতা বাড়িবে।
বিপন্নতার চরিত্রটি স্পষ্ট হইয়া ওঠে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মার্কিন সফরের মধ্যেই। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়াও তাঁহাকে স্বদেশে চিদম্বরমের সহিত বিষয়টি লইয়া বিশদে কথা বলিতে হয়। তাহার পর সফররত অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও জরুরি ভিত্তিতে ডাকিয়া পাঠাইয়া তাঁহার ব্যাখ্যা ও বক্তব্য জানিতে হয়। শুধু তাহাই নহে, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধীকেও প্রথমে চিদম্বরম ও পরে প্রণববাবুকে ডাকিয়া আগুন নিভাইবার চেষ্টা করিতে হইতেছে। আগুনের শিখা তত লেলিহান না হইলেও দুই মন্ত্রীর মধ্যে দুঃসম্পর্কের আগুন যে ধিকিধিকি জ্বলিতেছে, তাহার সংকেত প্রচ্ছন্ন নহে। প্রধানমন্ত্রীর দমকলগিরিতে তাহা নিভিতেছে না, ইহাও অনুমেয়। ইহা সরকারের ভাবমূর্তিই যে কেবল মলিন করিতেছে, তাহা নয়, তাহার কার্যকারিতাও বহুলাংশে বিনষ্ট করিতেছে। দুই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মধ্যে যদি এমন বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তবে সরকারি কাজে সমন্বয়ের অভাব ঘটিতে বাধ্য। আর ঠিক তাহাই ঘটিতেছে। দোষ বা দায় কাহার, সেই প্রশ্নে না গিয়াও বলা চলে, দুই বরিষ্ঠ মন্ত্রীর মনোমালিন্য সরকারের পক্ষে শুভ ও মঙ্গলজনক হইতে পারে না। তবে একটা কথা নিশ্চিতরূপেই বলা যায়, তাহা হইল, মন্ত্রিসভায় এ ধরনের মনকষাকষির চূড়ান্ত দায় শেষ বিচারে প্রধানমন্ত্রীর, মন্ত্রিসভা গঠন ও পরিচালনা একান্ত ভাবেই যাঁহার এক্তিয়ার।
মনমোহন সিংহ ব্যক্তিগত ভাবে সৎ হইতে পারেন। কিন্তু সেটাই ভারত সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার একমাত্র নিরিখ বা যোগ্যতা হইতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনিই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নেতা, গোটা দলটির মধ্যে সংহতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও তাঁহার। তিনি যদি দেখেন, তাঁহারই নিযুক্ত কোনও মন্ত্রী অন্য মন্ত্রীর সহিত অনাবশ্যক বিরোধে লিপ্ত, তবে তাঁহাকে কঠোর ভাবে পথে আনা তাঁহারই কাজ। প্রয়োজনে তিনি বিচ্যুত মন্ত্রীকে ছুটিতে যাইতে বলিতে পারেন, ইংল্যান্ডে যেমন বলা হয়। দলনেতা হিসাবে দলের বিপথগামী সদস্যকে তিনি তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করিতে পারেন, এমনকী বরখাস্তও করিতে পারেন। তাঁহার হইয়া এ কাজ অন্য কেহ কিন্তু করিয়া দিতে পারে না, এমনকী সনিয়া গাঁধীও নহেন। এমন সব চাপান-উতোর চলিতে থাকিলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমন্বয়ের কাজটিই ক্ষতিগ্রস্ত হইতে বাধ্য। উল্টা পরস্পরের পিছনে লাগা কিংবা হেয় করার অস্বাস্থ্যকর প্রবণতাই প্রাধান্য পাইবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দলপতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতে হইবে। তিনি নিজের মতো চলিলে হইবে না। তাঁহাকে সমগ্র মন্ত্রিসভার উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে এবং দলে শৃঙ্খলাপরায়ণতার আবাদ করিতে হইবে। এ ব্যাপারে কোনও রকম নমনীয়তা দেখানো দুর্বলতারই নামান্তর। |
|
|
|
|
|