তৃণমূলের দু’টি শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে রেষারেষি ও বিবাদের জেরে ধনেখালির একটি বিয়ার কারখানায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, ঠিকাদারের কিছু কর্মী সেখানে গোলমালের আশঙ্কায় শনিবার থেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে ওই কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ, তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের একাংশ কারখানার ভিতরে কোনওরকম নিয়মরীতির তোয়াক্কা না করে নেশা করেন। কারখানার কাজের সময় বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করায় সেখানকার নিরাপত্তা আধিকারিক প্রসেনজিৎ রায়কে সম্প্রতি মারধর করা হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানোয় ক্ষিপ্ত শ্রমিকেরা কারখানার গেটে পদস্থ কর্তাদের হেনস্থা করেন। কারখানার মধ্যে তাঁদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কারখানার কর্তারা ধনেখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অবশ্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়নি বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেন, “আমি কারখানার কর্তা এবং পুলিশকেও বলেছি তৃণমূলের নাম করে কারখানার মধ্যে ঝামেলা করা যাবে না। আমাদের নেতারা ওখানে গেলে দল ব্যবস্থা নেবে। আর আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হলে প্রশাসন তা দেখবে। কারখানা না বাঁচলে শ্রমিকেরা কাজ হারাবেন। এটা সব পক্ষের বোঝা উচিত।”
গত ২০০৮ সালে ডেনমার্কের একটি সংস্থা ধনেখালির বেলমুড়িতে ১০ একর জমির উপর একটি বিয়ার কারখানা তৈরি করেন। কার্লসবার্গ নামে ওই সংস্থার তৈরি বিয়ারের আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। ওই কারখানায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে অন্তত ২৫০ জন চাকরি করেন। সম্প্রতি ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ সেখানে সংস্থার আরও একটি ইউনিট তৈরির কথা ভাবছেন। কিন্তু কারখানার সাম্প্রতিক ঝামেলায় কর্তৃপক্ষ এখন রীতিমতো আশঙ্কিত।
গত জুন মাস থেকে সেখানে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। ওই কারখানায় তৃণমূলের একটি শ্রমিক সংগঠন ছিল। কিন্তু এর পর ওই দলেরই আরও একটি সংগঠন গজিয়ে ওঠে। কারখানায় কর্তৃত্ব নিয়ে শুরু হয় দু’পক্ষের লড়াই। তৃণমূলের জেলা বা রাজ্য নেতৃত্ব বারবার হস্তক্ষেপ করলেও তাতে দু’পক্ষের লড়াই থেমে থাকেনি। নিরাপত্তা আধিকারিককে মারধরের বিষয়টি মিটতে না মিটতেই সম্প্রতি কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকে নতুন করে আশান্তি শুরু হয়েছে। একপক্ষ পুজো বয়কট করে।
কারখানার ভিতরে সংস্থার পদস্থ কর্তা সঞ্জীব তিওয়ারি এবং অভিজিৎ বসুকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় সেখানে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। কর্তৃপক্ষ তাতে প্রমাদ গোনেন। জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বকেও তাঁরা বিষয়টি জানান। এই বিষয়ে কারখানার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “শ্রম সংক্রান্ত কোনও সমস্যা কারখানায় নেই। যা সমস্যা তা দু’টি শ্রমিক সংগঠনের নিজস্ব। তাই নিয়ে অযথা কারখানায় কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি এখনই বন্ধ হওয়া দরকার।”
অন্য দিকে, শুক্রবার রাতে গোঘাটের মদিনা গ্রামের বাজারে একটি কারখানায় চড়াও হয়ে এক ব্যবসায়ী-সহ সাত জনকে লাঠি ও রড দিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। শঙ্কর কুণ্ডু নামে ওই তৃণমূল নেতা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হারাধন মল্লিক নামে ওই ব্যবসায়ী এবং বাকি আহতদের আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হারাধনবাবুর অভিযোগ, দাবি মতো টাকা না-দেওয়াতেই তাঁদের উপরে হামলা চালায় শঙ্করবাবু ও তাঁর দলবল। |