পালাবদলের মমতাকে
নিয়েই সরগরম পালার আসর
ই বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদলের নেত্রী তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময়ে তাঁকে যাত্রাপালার নায়িকাদের সঙ্গে তুলনা করে বিস্তর কান ঝালাপালা করেছেন বাম শাসকরা। বাস্তবেও বাংলার যাত্রা জগতে মমতাই কিন্তু এ মুহূর্তের সেরা ‘আইকন’। তাঁকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে মাঠে নামছে গোটা দশেক পালা।
ঝাঁ-চকচকে মেক-আপ, চড়া আলোর পালা-জগতেও তবে ‘পরিবর্তন’ এল! নায়িকার পরনে সবুজ পাড় সাদা শাড়ি, পায়ে হাওয়াই চটি! আর তাই নিয়েই বিপুল ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছে যাত্রাপাড়া। আনন্দবীণা অপেরার পালার নাম ‘বাংলার ক্ষমতায় এ বার মমতা’। অপেরার কর্ণধার কনক ভট্টাচার্য বললেন, “অকল্পনীয় সাড়া মিলেছে। রথযাত্রা থেকে শুরু করে এর মধ্যেই ৫০টির উপর পালার বায়না হয়ে গিয়েছে। ১০০ ছাড়িয়ে যাব বলে আশা করছি।” আনন্দবীণার মতো বড় দল পালা-প্রতি গড়ে ৬০-৬৫ হাজার টাকা নেয়। তাতেও মমতার নামে বুকিংয়ের ঢল নেমেছে।
একই রকম সাড়া পাচ্ছেন অঞ্জলি অপেরার কর্ণধার তাপস দাস। তাঁরা পালা প্রতি ৪৫-৫০ হাজার টাকা নেন। ইতিমধ্যেই তাঁদের ‘বাংলার মসনদে মমতা’র বায়না ৫০ ছাপিয়ে গিয়েছে। ১০০ বায়না ছাপিয়ে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন তাপসবাবু। বললেন, “এর আগে জ্যোতি বসুকে নিয়েও পালা করেছি। কিন্তু মমতার পালা নিয়ে মানুষের মাতামাতি অনেক বেশি।” কনকবাবু ও তাপসবাবু দু’জনেই কিঞ্চিৎ কৌতুকের সঙ্গে জানালেন বেশ কিছু বুকিং হয়েছে কেশপুর, গড়বেতা, চন্দ্রকোণা রোডের মতো এলাকাতেও। অর্থাৎ, সুশান্ত ঘোষের একদা খাস তালুকেও মমতার নামে চুটিয়ে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে!
যাত্রাজগতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত বিশ্বনাথ পাল জানালেন, এক সময় মাও-লেনিন-স্তালিনের মতো নেতাকে নিয়ে পালা করেছেন তরুণ অপেরার শান্তিগোপাল। উৎপল দত্তও এমন চরিত্র নিয়ে লোকনাট্য করেছেন। কিন্তু কোনও একটি চরিত্রকে নিয়ে পালা বাঁধার হিড়িক একসঙ্গে এত জনের মধ্যে আগে দেখা যায়নি। প্রায় গোটা দশেক বড় ও মাঝারি দল তো বটেই, মেদিনীপুর-সহ কয়েকটি জেলার ছোট, অনামী দলও আসরে নামছে। লাভের মুখ দেখতে তাদের কম টাকায় বেশি সংখ্যায় পালা করতে হয়। ছোট দলগুলির আশা, তারা ২০০র বেশি পালা করবে।
মমতাকে নিয়ে এমন উৎসাহের কারণ? সমাজতত্ত্ববিদ প্রশান্ত রায় মনে করছেন, “লেনিন, স্তালিন, হিটলারের সঙ্গে সাধারণ মানুষ নিজেকে মেলাতে পারেনি। জ্যোতি বসুকে নিয়ে যখন পালা হয়েছে, তখন তিনি পরিণত রাজনীতিক। ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত। তাই নাটকের তেমন উপাদান মেলেনি। কিন্তু মমতার সাধারণ জীবনযাত্রার মধ্যে মানুষ কোথাও একটা নিজেদের মিল খুঁজে পাচ্ছে। সঙ্গে খানিকটা হুজুগ তো রয়েছেই।”
‘বাংলার মসনদে মমতা’ পালা লিখেছেন অশোক দে। পরিচালকও তিনি। এর আগে ২০০৯ সালে ‘মা মাটির লড়াই’ এবং ২০১০-এ ‘নতুন সকাল আসছে’ পালায় মমতার রাজনৈতিক আন্দোলনকে তুলে এনেছিলেন তিনি। নতুন পালায় নতুন কী থাকছে? বললেন, “মমতা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও অন্যদের চেয়ে আলাদা। হুটহাট হাসপাতালে সারপ্রাইজ ভিজিট দিচ্ছেন। মহাকরণের কর্মীরা সময়ে আসছেন কি না দেখতে ছুটছেন। নতুন পালায় এ সব রাখছি।”
আগের দু’বারের মতো এ বারও মমতার ভূমিকায় অভিনয় করছেন সীতা ঘোষ। আগের পালাগুলিতে ১৮৪টি শো করে রেকর্ড গড়েছেন। তাঁকে দেখে বহু জায়গায় গ্রামের মানুষ ‘দিদি’ বলে ছুটে এসেছেন। জানালেন, ‘দিদি’র হাঁটার ভঙ্গি, শাড়ি পরার ধরন, চুল বাঁধা, মুখ মোছার ভঙ্গি নকল করার চেষ্টা করছেন। আনন্দবীণা অপেরার ‘মমতা’ রুমা চক্রবর্তীও এক দিন বেলেঘাটার রাস্তায় সাদা শাড়ি, হাওয়াই পরে ‘প্র্যাকটিস’ করছিলেন। চারপাশ থেকে মানুষ ‘দিদি-দিদি’ বলে ছুটে এসেছিলেন।
কিন্তু আগের বারে মমতা ছিলেন বিরোধী নেত্রী। এখন তো মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে টিভি খুললেই দেখা যায়। খবরের কাগজে রোজই ছবি থাকে। এত দৃশ্যমান এক জনকে নিয়ে আবারও পালা দেখতে চাইবেন মানুষ? পালা-কর্তারা মনে করছেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই মমতার পুরনো দিনের কথা জানেন না। তাঁরা সেটা দেখতে আসবেন। রুমা চক্রবর্তীর যুক্তি, “দিদি মানে এমন এক জন মানুষের গল্প, যিনি হারতে জানেন না। সেই অনুপ্রেরণা পেতে মানুষ পালা দেখবেন।” সীতা ঘোষ বললেন, “শহরের মানুষ দিদিকে দেখার যতটা সুযোগ পান, গ্রামে ততটা নয়। তাই তাঁকে নিয়ে পালা হলে তাঁরা আসবেনই।”
ভোটের আগে মমতার মা-মাটি-মানুষের স্লোগানকে যাত্রার শিরোনামের সঙ্গেই তুলনা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এখন যাত্রার আসরে মমতার রমরমা দেখে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলছেন, “সিঙ্গুরে যাত্রা করে উনি (মমতা) রাজ্যের শিল্প-যাত্রা ভঙ্গ করেছেন। ওনার গোটা কর্মকাণ্ডই যাত্রাপালার জন্য আদর্শ স্ক্রিপ্ট। এই যাত্রা কোথায় যে শেষ হবে, আতঙ্কটা সেখানেই।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের পাল্টা উত্তর, “৩৪ বছর ধরে বাংলার মানুষ মেকি বামপন্থার যাত্রা দেখতে দেখতে ক্লান্ত। এই অবস্থায় জনগণের কাছে সম্পূর্ণ প্রত্যখ্যাত হওয়া একটা দল আর কী বা বলতে পারে!” ‘দিদি’কে নিয়ে পালা দেখতে যাবেন নাকি? মুকুলবাবুর সহাস্য জবাব, “এখনও কেউ আমন্ত্রণ জানাননি। আমন্ত্রণ পেলে নিশ্চয় যাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.