|
|
|
|
পুজোর স্পন্দন ঘরের ভিতর
|
পুজোর আগে ঘরের টোটাল মেক-ওভার হলে মন্দ হয় না। কিন্তু সাজাবে কে?
খরচও তো পেল্লাই! কে বলে? সবই আপনার হাতে। পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় |
মা দুগ্গা বাংলায় ঢুকবেন আর ক’দিন পরেই তো! কিন্তু বাড়ির সেই দু’বছরের পুরনো অন্দরসজ্জা আর আপনার দেখতে ভাল লাগছে না, কী করবেন? সোজা উত্তর, পাল্টে দেবেন। খেয়াল রাখুন, ঘর নিয়ে বেশ বড় মাপের কারিকুরি করার সময় নেই, তা-ই বিশাল একটা কর্মযজ্ঞ ফেঁদে না বসে, ছোটখাট জিনিস দিয়েই শুরু করুন।
ঘরের মধ্যে একখানা ফোয়ারা বসানো সাধ অনেকেরই থাকে। কিন্তু খরচে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তার জায়গায় ঘরের এক কোণে রেখে দিন একটা ‘বুদ্ধ ফাউন্টেন।’ দু’হাতে ধরা সাদা পদ্মের মধ্য দিয়ে জল ঝরবে কুলকুল করে। মূর্তির তলায় পাম্প থাকায় জল পড়া বন্ধ হবে না। দাম পড়বে আট-ন’হাজার টাকার কাছাকাছি। এত খরচ করতে না চাইলে লিভিং রুমের সেন্টার টেবিলের ওপর নানা আকারের রঙিন ক্যান্ডেল বসিয়ে দিতে পারেন। আকারের ওপর নির্ভর করবে দাম। স্টাডি টেবিলে একগাদা বই ফেলে না রেখে বাহারি বুক-এন্ড কিনে নিতে পারেন। দু’দিকে দু’টো রেখে মাঝখানে পরপর দাঁড় করিয়ে দিন বইগুলো। বই পড়ে যাওয়ার ভয়ও থাকবে না, আবার শো-পিস হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। বুক-এন্ড সেট কিনতে গেলে খরচ হতে পারে আড়াই হাজার মতো। পুরনো টেবিল কভারটা বাতিল করতে চাইলে হাতে বোনা একটা রানার টেবিলে ঝুলিয়ে দিন। এগুলো অনেকটা মাদুরের মতো দেখতে। অনেক সময় দেওয়ালের এক জায়গার রং চটে গেলে খুব খারাপ দেখতে লাগে। ওই জায়গাটা ঢেকে দিতে পারেন লম্বাটে গড়নের বাহারি আদিবাসী মুখোশ দিয়ে। একটু বড়সড় মুখোশ কিনতে গেলে খরচ পড়তে পারে হাজার দশেক টাকা। ঘরের জন্য বেশি খরচে আপত্তি নেই তো? তা হলে দেওয়ালের বেশ খানিকটা অংশ খালি করে সেখানে টাঙিয়ে দিন গোল ওয়াল প্যানেল। কাঠের ওপর আইভরি কাজ করা প্যানেলগুলোর যত্নআত্তিও বিশেষ দরকার লাগে না।
|
|
শুধু একটু শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে, ব্রাশ দিয়ে কোণগুলো ঝেড়ে নিলেই চলবে। চকিতে ঘরের ভোল বদলের জন্য প্রয়োজনীয় টুকিটাকি প্রচুর জিনিসের খোঁজ পেতে পারেন ‘রেন ট্রি’-তে। ব্যাংকক, তাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হয় এই শৌখিন জিনিসগুলি। টিভি টেবিলের ঠিক পাশেই রাখার মতো বিশেষ কিছু থাকে না। এখানে কাচের ওপর ছোট ছোট বিড দিয়ে ল্যামিনেট করা ভাস (vase) দাঁড় করিয়ে দিন। দু’টো সোফার মাঝখানেও সাজিয়ে রাখতে পারেন সেরামিকের ওপর টুকরো টুকরো কাচ বসানো ভাস। ড্রেসিং টেবিলের এক পাশ থেকে সাজের জিনিসগুলো সরিয়ে, সেখানে সাজিয়ে রাখুন আফ্রিকার কন্যাদের গয়না পরা ফিগার। অথবা একটা পদ্মের গড়নের প্ল্যাটারের ওপর সাজিয়ে দিন বেশ কিছু ডেকোরেটিভ বল। প্ল্যাটারটা ছড়ানো আর আকারে কিছুটা বড় হলে ডাইনিং টেবিল বা সেন্টার টেবিলের ওপরেও রেখে দিতে পারেন। ভাস আর প্ল্যাটারের খুব সুন্দর কালেকশন পাবেন ‘আরবানো’তে। ঘরের কোণ ঢাকার জন্য চমৎকার কলমকারি কাজ করা চেয়ারও রেখে দিতে পারেন।
বাইলুম-এর পার্টনার কাম ডিজাইনার বাপ্পাদিত্য বিশ্বাস জানালেন, ঘরের সাজ বদলানোর জন্য সব সময় যে জিনিস কিনতে হবে, তার কোনও মানে নেই। বাড়িতেই এমন অনেক জিনিস লুকিয়ে থাকে, যা দিয়ে চমৎকার পরিবর্তন আনা যায়। যেমন ঘরের মধ্যে ইন্ডোর প্লান্টস থাকলে টবটা শুধু বসিয়ে না রেখে একটা ঝুড়ির মধ্যে রেখে দেওয়া যেতে পারে। আবার, সেন্টার টেবিলের ওপরে কোনও ফুলদানি না রেখে একটা কাঁসার পাত্র রেখে তাতে গাঁদা বা রঙ্গনের মতো উজ্জ্বল রঙের কিছু তাজা ফুল ভরে রাখা যেতে পারে। তাজা ফুলের রং ভীষণ তাড়াতাড়ি ঘরের পরিবেশ পাল্টে দেয়। দিওয়ালির সময় এতে প্রদীপও সাজিয়ে রাখা যায়।
বাড়িতে পুরনো বেনারসি বা ঢাকাই শাড়ির ছেঁড়া পাড় একটা সুন্দর ফ্রেমে আটকে দেওয়ালে টাঙিয়ে দিলে একদম অন্য রকম একটা লুক পাওয়া যায়। অনেক সময় সময়ের অভাবে নতুন পর্দা কেনা সম্ভব হয় না। সেখানে কোনও সুন্দর টাঙ্গাইল শাড়ি রড থেকে ঝুলিয়ে দিলে চমৎকার দেখতে লাগে। বাড়িতে গেস্ট আসছে, তাড়াহুড়োয় হয়তো সোফা কভারটা বদলাতে পারলেন না। বরং একটা চওড়া পাড়ের শাড়িকে আধ-ভাঁজ করে সোফার ওপর ক্যাজুয়ালি ফেলে রাখুন। নতুন কভারের দরকার হবে না। |
|
দেওয়ালে রং করার সময় না থাকলে কোনও একটা খালি জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে রড দিয়ে পুরনো শাড়ি, শীতলপাটি বা নকশী কাঁথা ঝুলিয়ে দিতে পারেন। বসার জায়গাটায় রংবেরঙের অনেকগুলো কুশন ছড়িয়ে দিলেও ঘরে বাড়তি রং যোগ হয়। সন্দেশের নানা ধরনের ছাঁচ অনেকের বাড়িতেই থাকে। সেগুলো দেওয়ালে আটকেও চমৎকার নকশা করা যায়।
বাপ্পাদিত্য ঘরের পুরোপুরি অ্যান্টিক বা আধুনিক রূপ কোনওটাই পছন্দ করেন না। অ্যান্টিক ধরনের আসবাব জায়গা নেয় অনেক বেশি, কাজে লাগে কম। আধুনিক ছিমছাম আসবাবের মধ্যে হাইলাইটার হিসেবে অ্যান্টিকের উপস্থিতিই তাঁর পছন্দের। যেমন ঘরের একটা কোণ বেছে নিয়ে সেখানে একটা সুন্দর অ্যান্টিক পাত্র বা বোল সাজানো হল।
অথবা পুরনো দিনের কাজ করা খাটের ব্যাকরেস্টটা দেওয়ালে আটকে দেওয়া হল, আর তলায় রইল একটা ড্রয়ার সমেত খাট। সনাতন আর আধুনিক দুইয়ের মিশেলেই ঘরের রূপ খোলে বেশি।
|
ছবি: অনিরুদ্ধ মজুমদার, সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
সৌজন্য: বাইলুম, রেন ট্রি, আরবানো, লেপাক্ষী |
|
|
|
|
|