মিড-ডে মিল প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে তৎপর হয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। কয়েক দিন আগেই জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আধিকারিক ও বিধায়করা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন।
শুক্রবারই তার প্রথম ধাপ হিসেবে পুরুলিয়া-১ ব্লকের লাগদা বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁরা গেলেন। জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মিশন মিড-ডে মিল প্রোগ্রাম’। মিড-ডে মিলের খাবারের মান নিয়ে, খাবারের পরিমাণ নিয়ে, পড়ুয়ার তুলনায় চাল বেশি তোলা-সহ নানা রকমের অভিযোগ আসত। তাই আমরা ঠিক করি এ বার সরাসরি হঠাৎ বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা খতিয়ে দেখব।” |
এ দিন লটারিতে কয়েকটি স্কুলের মধ্যে ওই স্কুলের নাম ওঠে। তারপরেই সেখানে রওনা দেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জয়ন্ত আইকত, দুই বিধায়ক কে পি সিংদেও ও স্বপন বেলথরিয়া, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) অজয় আচার্য, জেলা খাদ্য নিয়ামক সুনয়কুমার গোস্বামী-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। সকাল সওয়া দশটায় তাঁরা পৌঁছে দেখেন অল্প কয়েকজন পড়ুয়া হাজির হয়েছেন। কিছু ক্ষণ পরে চার জনের মধ্যে দু’জন শিক্ষিকা এসে পৌঁছান। কথাবার্তার ফাঁকেই একজন মিড-ডে মিলের জন্য একটি ব্যাগে চাল, ডাল, আলু, তেল ও রান্নার অন্যান্য উপকরণ নিয়ে স্কুলে উপস্থিত হন। জিজ্ঞাসা করায় আধিকারিকেরা জানতে পারেন, প্রধান শিক্ষিকা মীরা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে আনা হয়েছে। প্রতিদিন এ ভাবেই নিয়ে আসা হয়। কত জন পড়ুয়া উপস্থিত রয়েছে, তা না জেনে রান্নার কাঁচামাল এ ভাবে স্কুলে আনা হয় দেখে তাজ্জব হয়ে যান আধিকারিকেরা। মিড-ডে মিলে কী খেতে দেওয়া হয় তাঁরা পড়ুয়াদের কাছে জানতে চান। পড়ুয়া জগন্নাথ গোস্বামী, চিন্টু বাউরি, রঘুনাথ রাজোয়াড়েরা বলে, “ডাল, ভাত আর সোয়াবিন আলু তরকারি। মাঝে মধ্যে ডিম খেতে দেওয়া হয়।”
আধিকারিকেরা মিড-ডে মিলের হিসেবের খাতা পত্র দেখতে চাইলে জানতে পারেন তা স্কুলে থাকে না। প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে থাকে। খবর পাঠানোয় প্রধআন শিক্ষিকার বাড়ি থেকে এক জন এসে স্কুলে খাতা দিয়ে যান। স্যাঁত স্যাঁতে মিড-ডে মিলের রান্না ঘর ঘুরে দেখেন। প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁরা কোথায় চাল, ডাল মজুত করে রাখা হয় তা ঘুরে দেখেন।
এ দিনের অভিজ্ঞতা সর্ম্পকে জেলাশাসক বলেন, “প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে যাননি। তাঁর যেখানে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার কথা ছিল, সেখানেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায় নি। স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নার জিনিস পত্র কেন তিনি বাড়িতে মজুত করে রেখেছএন তার ব্যাখ্যাও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁকে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে।” পরে প্রধান শিক্ষিকার দাবি, “স্কুল থেকে এক বার রান্নার সরঞ্জাম চুরি হয়েছিল। তাই মিড-ডে মিলের চাল আমার বাড়িতে রাখি। এ দিন ব্যক্তিগত কাজের জন্য ছুটি নিয়ে দুর্গাপুরে গিয়েছিলাম। দুপুরে প্রশিক্ষণে যোগ দিই।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক(উন্নয়ন), মহকুমাশাসকেরা মাসে ৫টি করে, বিডিওরা মাসে ১০টি করে স্কুল পরিদর্শন করবেন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকেরাও মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যাবেন। জেলাশাসক বলেন, “এই পরিদর্শন বাধ্যতামূলক। প্রথম দিন দশেক লটারির মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল বেছে নিয়ে পরিদর্শনে যাওয়া হবে। অসংঙ্গতি দেখলে ‘শো-কজ’ করা হবে। তারপরে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, মিড-ডে মিল প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিয়ে আসা ও দুর্নীতি রোধের পাশাপাশি পরিকাঠামোগত অসুবিধাও পরিদর্শনের সময় লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে, মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রেও তাঁরা পরিদর্শনে যাবেন। |