পেট্রাপোল
চাষিদের বাধায় বন্ধ সুসংহত চেকপোস্ট তৈরির কাজ
শিলান্যাসের পরে এক মাসও পেরোয়নি। ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাষিদের বাধায় বন্ধ হয়ে গেল পেট্রাপোল সীমান্তে প্রস্তাবিত সুসংহত চেকপোস্ট তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ। চাষিদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে সিপিএম। আর এই আন্দোলনের পিছনে সিপিএমের ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ দেখছে তৃণমূল।
শুক্রবার সকালে জয়ন্তীপুর বাজার থেকে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে বেশ কিছু চাষি স্থানীয় পিরোজপুরে প্রকল্প-এলাকায় যান। সেখানে শ্রমিকেরা মাটি সমান করা এবং জঙ্গল সাফাইয়ের কাজ করছিলেন। চাষিরা গিয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করতে না দেওয়ারও ‘হুমকি’ দেন।
উত্তর ২৪ পরগনার ওই সীমান্তে ১৭২ কোটি টাকায় সুসংহত চেকপোস্ট তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর। উদ্দেশ্য, অভিবাসন, শুল্ক, মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র-সহ বিভিন্ন দফতরকে এক ছাতার তলায় আনা। গত ২৭ অগস্ট প্রকল্পের শিলান্যাস করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।
প্রকল্পটির জন্য পেট্রাপোল এবং পিরোজপুর মৌজা থেকে প্রায় ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে বেশির ভাগই কৃষিজমি। চাষিরা প্রথমে জমি দিতে আপত্তি করেছিলেন। পরে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে জমি দিতে সম্মত হন। বিঘাপ্রতি ৮ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ জমিদাতাই চেক নিয়েছেন।
চেক পাননি ৫১ জন। তাঁরাই রয়েছেন আন্দোলনের পুরোভাগে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক জনকে চাকরি, কৃষি পেনশন চালু করা, খেতমজুর ও ভাগচাষিদের সীমান্তে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজে বহাল করা এমনই সব দাবিতে ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন আরও কিছু চাষি। প্রশাসনের তরফে প্রথমে জানানো হয়েছিল, ওই ৫১ জনের নামে জমির কাগজপত্র ‘ঠিকঠাক না থাকায়’ চেক দেওয়া যায়নি। তাঁরা যথাযথ নথিপত্র আনলে চেক দিয়ে দেওয়া হবে।
ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাষিদের বিক্ষোভ। ছবি: পার্থসারথি নন্দী।
চলতি মাসের ৩ তারিখে ওই চাষিরা পিরোজপুরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। প্রতিবাদ-মিছিল হয়। মহকুমাশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, পরে জেলা জমি অধিগ্রহণ আধিকারিক মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে ওই চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার)-এর দফতরে দাবি পুনর্বিবেচনার আবেদন (অ্যাপিল পিটিশন) জানাতে বলা হয়। ওই আবেদন জমা দেওয়ায় ১২ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ৫১ জনের মধ্যে ২০ জনের শুনানি হয় ডিএমের দফতরে।
মহকুমাশাসক (বনগাঁ) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “৫১ জনের মধ্যে ২০ জনের সমস্যা শুনানিতে মিটে গিয়েছে।” আগামী সোমবার চাষিদের নিয়ে তিনি ফের বৈঠকে বসবেন এবং ততদিন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হবে বলে জানান মহকুমাশাসক। তাঁর আশ্বাস, “প্রকল্পের কাজ এবং বাকি চাষিদের শুনানির কাজও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা হবে।” কৃষি পেনশন চালু-সহ বাকি দাবিগুলিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু প্রশাসনিক ভূমিকায় ‘সন্তুষ্ট’ নন স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা বনগাঁ ব্লক কৃষকসভার সহ-সম্পাদক গোবিন্দ মণ্ডল। তাঁর কথায়, “মহকুমাশাসক আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, সব চাষিরা যতক্ষণ না ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন, তত ক্ষণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। কিন্তু প্রকল্পে কাজ হচ্ছিল। তাই ক্ষুব্ধ চাষিরা তা বন্ধ করে দিয়েছেন। চাষিদের দাবির সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করছি।” পক্ষান্তরে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওই এলাকায় রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতেই সিপিএম পরিকল্পিত ভাবে এই চক্রান্ত করছে। মানুষ ওই চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.