উৎসবের আলো
সাজলেই হিরো
চেক শার্ট নাকি কাঁথাকাজের তসর পাঞ্জাবি? কোন সাজে এ বার ‘হিরো’ হয়ে ওঠা যাবে পাড়ার মণ্ডপে সুন্দরীদের ভিড়ে?
পুজোর ফ্যাশনের হালচাল বলছে দুটোই এ বার মাত করেছে পুজোর বাজার। সদ্য কলেজে পা দেওয়া উচ্ছল তরুণ থেকে ব্যস্ত কর্পোরেট চেক ও স্ট্রাইপে মজেছেন প্রত্যেকেই। শার্ট হোক বা পাঞ্জাবি, কুর্তা হোক বা শেরওয়ানি, অনেকেই তাতে চাইছেন চেক বা স্ট্রাইপ।
আর পুজো মানেই পাঞ্জাবির বাঙালিয়ানা তো রয়েছেই।
আনোয়ার শাহ্ রোডের একটি শপিং মলে বিভিন্ন দোকানে চেক প্রিন্টেরই কদর বেশি। হলুদ, নীলের বিভিন্ন উজ্জ্বল শেডে চেকসেই সাজতে চাইছেন প্রায় সব বয়সী পুরুষ। ট্রাউজারের ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই বেশি চাহিদা রয়েছে নানা ধরনের জিন্সের। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন-মরসুম মেনে চলা আর একটি দোকানে চাহিদা রয়েছে অটাম-উইন্টার কালেকশনের। মূলত চেক্স এবং লিনেনের দিকেই ক্রেতারা ঝুঁকছেন বলে জানালেন কর্মীরা। রঙের ক্ষেত্রে বাজারে হিট ‘সামার কালার্স’। আর একটি দোকানের কর্মীরা জানান, আশির দশকের ভিনটেজ সোয়েট শার্ট এ বার ফিরেছে ফ্যাশনে। প্রায় একই ছবি ছিল বাইপাসের আর একটি শপিং মলেও। গড়িয়াহাটের একটি পোশাক-বিপণির কর্মীরা আবার জানালেন, চেক শার্টের পাশাপাশি গাঢ় রঙা শার্ট এবং ক্যাজুয়াল শার্টেরও চাহিদা আছে ভালই। কদর রয়েছে টিশার্টেরও। হাল্কা রঙের টিশার্ট, চেক প্রিন্ট এবং ফ্যান্সি টিশার্টের দিকেই ঝোঁকটা বেশি।
ট্রাউজারের ক্ষেত্রে এ বছরও ডিজাইনার জিন্স বাছছেন অনেকেই। চাহিদা আছে কার্গোরও। নিউ মার্কেটের এক পোশাক বিপণির বিভিন্ন দোকানেও সব বয়সীরাই চাইছেন এ সবই। ধর্মতলার এক বিপণির একটি দোকানের এক কর্মী সুদীপ দাস জানালেন, সবেতেই মূলত কালো এবং নীল রঙের চেক ও স্ট্রাইপেরই কদর বেশি। রাউন্ড নেক এবং কলারওয়ালা টিশার্টও বাজারে ‘হিট’।
আর এক দোকানের এক কর্মী জানান, শার্ট, টিশার্ট, জিন্সের পাশাপাশি তুমুল চাহিদা রয়েছে পাঠানিরও।
শহরের একটি পোশাক বিপণি-চেনে আবার বিভিন্ন রকম চেক শার্টের পাশাপাশি দেদার বিকোচ্ছে উজ্জ্বল মাল্টিকালার্ড টিশার্ট। টিশার্টের বুকে বড় আকারের প্রিন্ট এবং এমব্রয়ডারিরও চাহিদা রয়েছে ভাল। এ ছাড়া, এ বারও ফ্যাশনে রয়েছে নানা ধরনের কুর্তা এবং শর্ট কুর্তা। কুর্তার ক্ষেত্রেও কমবয়সী ক্রেতাদের বেশির ভাগই ঝুঁকছেন চেক্স এবং স্ট্রাইপের দিকে, যা পাজামা বা চুড়িদারের পাশাপাশি জিন্সের সঙ্গেও দিব্যি পরে ফেলা যাবে। একটু এথনিক সাজই যাঁদের পছন্দের, তাঁরা আবার বাছছেন এমব্রয়ডারি করা কুর্তা। টালিগঞ্জের একটি বুটিকেও দেখা গেল অনেকেই নিয়ে যাচ্ছেন এথনিক কুর্তা।
বছরভরের পশ্চিমি পোশাক তাকে তুলে রেখে পুজোর দিনগুলো সাবেক বাঙালি সাজেও কাটাতে চান অনেকে। আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলে যেমন ভি-নেক বা কাঁথাকাজের পাঞ্জাবি, খাদির কুর্তারও তুমুল চাহিদা। একটি দোকানের এক কর্মী জানালেন, অফ হোয়াইট তসর পাঞ্জাবির কদর সবচেয়ে বেশি হলেও পাশাপাশি গাঢ় রঙের এমব্রয়ডারি করা পাঞ্জাবি-কুর্তারও চাহিদা আছে যথেষ্ট। আর যদি চান অবাঙালি ধাঁচের সাবেকি পোশাক? তা-ও আছে। ধর্মতলার পোশাক বিপণিতে একটি দোকানের তরফে জানানো হয়, সাদা, কালো, মেরুন রঙে লং এবং শর্ট পাঠানি, ভি নেক শেরওয়ানি, চিকন কুর্তা এ বার চাইছেন অনেকেই। কুর্তা শেরওয়ানিতে জরির কাজ বা এমব্রয়ডারির পাশাপাশি এক্সক্লুসিভ সাবেক কাজের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা।
পুজোয় পুরুষদের অবশ্য ছিমছাম সাজতেই পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনার কিরণউত্তম ঘোষ। তিনি বলেন, “সাবেক বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি, কুর্তা-চোস্ত, পাঞ্জাবি-পাজামাই হোক বা শার্ট-ট্রাউজার, তা যেন গরমের উপযোগী আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি হয়। আর উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি পুরুষদের ফ্যাশনে এ বার রয়েছে গাঢ় বেগুনি বা নীলের বিভিন্ন শেড। তবে রং বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শরীরের গড়ন এবং গায়ের রঙের কথা মাথায় রাখা জরুরি।”
ডিজাইনার চৈতালি দাশগুপ্তও পুজোর দিনগুলোয় পুরুষদের ছিমছাম সাবেক সাজে দেখতে ভালবাসেন। বললেন, “পুজোর দিনগুলোয় ধুতি-পাঞ্জাবি বা কুর্তা-চোস্তে ভাল দেখায়। অফ-হোয়াইটের পাশাপাশি শরতের নীল, লালের মতো উজ্জ্বল রং মনকেও উজ্জ্বল করে। এখন অনেকেই দেখি জমকালো পোশাক পরেন। তবে আমার মনে হয়, পোশাকে ভারী কাজের চেয়ে ছিমছাম, নান্দনিক কাজ আরামদায়কও হয়, চোখেও আরাম লাগে। পোশাক যেন ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে না যায়, সেটা মাথায় রাখা জরুরি।”
আর এক ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল অবশ্য ছেলেদের দেখতে চান ‘এক্সপেরিমেন্টাল লুক’-এ। তাঁর কথায়, “হাল্কা কাজ করা র’ সিল্ক, লিনেন, জুটের কুর্তার সঙ্গে প্রিন্টেড ধুতি বা টিশার্ট, নেহরু জ্যাকেটের সঙ্গে যোধপুরী বন্ধগলা বা জহর কোটের সঙ্গে ধুতি একটা ফিউশন সাজ। এমনিতে এ বার ‘ইন’ নানা ধরনের চেক্স আর স্ট্রাইপ্স। বাছা যায় কালো, ধূসর, অফ হোয়াইট, বেইজ, লেমন ইয়েলোর মতো রং।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.