উৎসবের আলো
সাবেক বনাম থিম
কাশের মুখ গোমড়া। তবু মাঝেমাঝেই কোনও এক শিল্পীর তুলির টানের মতো এসে হাজির হয় পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। একটু অন্য রকম লাগে দুপুরের রোদটা। বিকেলের পড়ন্ত রোদটাও অদ্ভুত একটা আলো ছড়িয়ে দেয়। আকাশের দিকে তাকালে বুঝতে এক মুহূর্তও দেরি হয় না, শরৎ এসেছে। প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার মধ্যেই সেজে উঠছে পুজোমণ্ডপগুলো। চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
এ বার পুজোয় মহাকাশযানে চেপে সোজা অন্য এক গ্রহে চলে গিয়ে দুর্গাদর্শন করা যাবে ভিআইপি রোডের শ্রীভূমির মণ্ডপে গেলে। মণ্ডপের ভিতর চলবে লেজার রশ্মির খেলা। আর তার মাধ্যমেই দূর কোনও গ্রহে দেখা যাবে দুর্গাপ্রতিমাকে।
পাতিপুকুর রেলওয়ে কোয়ার্টার্স অধিবাসীবৃন্দ-এর দুর্গাও পাড়ি দিয়েছেন অন্য এক গ্রহে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবী ছেড়ে তিনি রয়েছেন সবুজে ভরা সুন্দর এক গ্রহে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে কমে যাচ্ছে সমুদ্রের জলস্তর, গলছে হিমবাহ ছবির মাধ্যমে এ সমস্তই বর্ণনা করা থাকবে গোটা মণ্ডপ জুড়ে।
নানা রঙের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ আর শুভ শক্তির জয়ের বার্তা মিলবে লেকটাউন প্রদীপ সঙ্ঘে। মণ্ডপের ভিতরে নানা রঙের পুরনো জিন্স দিয়ে তৈরি হবে ক্যানভাস। এমনকী জিন্স দিয়েই তৈরি হচ্ছে টুকরো টুকরো কোলাজ। মণ্ডপের মধ্যে অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখা মিলবে বেশ কিছু অসুরের, সেগুলিও তৈরি জিন্স দিয়েই। মণ্ডপে ঢুকলে মাথার উপর দেখা যাবে আলোয় সাজানো রামধনু।
লেকটাউনের এক নম্বর পল্লিশ্রীর পুজো মণ্ডপের থিম: লঙ্কাবধে ভুবনজয়। এই জয় এ বারের বিশ্বকাপের। সচিন, ধোনি, হরভজনদের ছবিতে ভরে থাকবে মণ্ডপ। তবে শুধুই ক্রিকেট নয়, পাশাপাশি থাকবে রামের লঙ্কাজয়ের ছবিও। হনুমানের সোনার লঙ্কা ছারখার করে দেওয়া বা রাম-রাবণের যুদ্ধ, ছবির আকারে সবেরই দেখা মিলবে এখানে।
বিহারের মিথিলার মধুবনী হস্তশিল্পের দেখা মিলবে লেকটাউনের নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো মণ্ডপে এলে। মণ্ডপে এলে মনে হবে যেন উঠে এসেছে একটুকরো মধুবনী গ্রাম।
লেকটাউন অধিবাসীবৃন্দের মণ্ডপে এ বার দেখা মিলবে শুধুই গাছের। গাছের বিভিন্ন অংশ দিয়ে তৈরি নানা রকম নকশা।
এ দিকে, বাঙুরের আবার বেশির ভাগ পুজোই সাবেক রীতির। পিতলের নানা উপকরণ ও বেত দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বাঙুর এ ব্লক প্রতিরোধ বাহিনীর পুজো মণ্ডপ। সাবেকিয়ানার ছোঁয়া থাকবে গোটা মণ্ডপ জুড়ে। ভিতরে আলোকসজ্জায় থাকবে অভিনব ঝাড়লন্ঠন। সাবেক পুজো করছে বাঙুর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বাঙুর যুবক বৃন্দ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও।
প্রতি বছরের মতো এ বারও চমক রয়েছে দমদম পার্কের ভারতচক্রের পুজোয়। তাদের থিম: জীবন জানে গাছের মানে। অসুরই এখানে দূষণের প্রতীক। আর গাছের মধ্যে ফুটে উঠবে দুর্গার রূপ। ভারতচক্রের পাশাপাশি দমদম পার্কে রয়েছে আরও কিছু পুজো, যা দেখতে ভিড় শুরু হয় ষষ্ঠী থেকেই।
যেমন, দমদম তরুণ দলের পুজোমণ্ডপ তৈরি হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন নাটকের কোলাজ নিয়ে। এ দিকে, দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপে বাঁশি আর মন্দিরার সুর অন্য এক জগতে নিয়ে যাবে দর্শকদের।
ক্রমশ থিমপুজোর দিকে ঝুঁকছে কেষ্টপুরও। ত্রিপুরার রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে কেষ্টপুর মাস্টারদা স্মৃতিসঙ্ঘ। আবার, কেষ্টপুর প্রফুল্লকানন বালকবৃন্দের পুজো মণ্ডপে এলে মনে হবে চলে এসেছেন রাজস্থানের কোনও এক গ্রামে। কেষ্টপুরের শিবকালী পুজো মণ্ডপে দেখা যাবে অশুভ শক্তির সঙ্গে মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত জয় হয় শুভ শক্তিরই।
বেশ কয়েকটি ছোট-বড় পুজো হয় বাগুইআটি জোড়ামন্দির এলাকায়। তার কয়েকটিতে রয়েছে থিমের চমক। যেমন, বাগুইআটি জোড়ামন্দির শাস্ত্রীবাগান স্পোর্টিং ক্লাবে এলে দর্শন হয়ে যাবে মহাবালেশ্বরের শিব মন্দিরের। মণ্ডপে ঢোকার সময় মনে হবে চলেছেন বাংলার কোনও নাটমন্দিরের ভিতর দিয়ে। সিঁড়ি দিয়ে চাতালে উঠেই দেখা মিলবে দুর্গা প্রতিমার। এর কাছেই নির্ভীক সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপ সেজে উঠছে নদিয়ার লোকশিল্পে। নদিয়া জেলার এক শিবমন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। সঙ্গে থাকবে মানানসই গ্রাম্য পরিবেশ। পটচিত্র, পুতুল দিয়েও সাজানো হবে এই মণ্ডপ। মন্দিরের আদলে সেজে উঠছে বাগুইআটি রেলপুকুর পাড় ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। আবার, চাইনিজ বামের ঢাকনা ও শিশি দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাগুইআটি দক্ষিণপাড়া যুব পরিষদের পুজোমণ্ডপ। রাজস্থানের প্রাচীন মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে বাগুইআটি দক্ষিণপাড়া সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপ। বাগুইআটি এলাকার প্রাচীন পুজোর মধ্যে অন্যতম বাগুইপাড়া অধিবাসীবৃন্দের বাগুইআটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব। প্রতি বছরের মতো এ বছরও এই পুজোয় থাকছে নানা অনুষ্ঠান। আর বাগুইআটি দেশবন্ধুনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব (পাঠশালা) এ বার পা দিল ৭৫ বছরে। তাদের পুজো সাবেক।

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.