পুজোর বেড়ানো
ডাকছে ইতিহাস
কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। পুজোর ছুটিতে কে কোথায় বেড়াতে যাবেন, তার পরিকল্পনাও নিশ্চয়ই মোটামুটি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যাঁরা এখনও দোনামোনায়, তাঁদের বেড়ানোর আদর্শ জায়গা হতে পারে মাদুরাই। পাহাড় আর মন্দিরে ঘেরা তামিলনাড়ুর এই শহর থেকে সড়কপথে অনায়াসে পৌঁছনো যাবে আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থানে।
এ শহরের ইতিহাসের পরতে পরতে রয়েছে রোমাঞ্চকর কাহিনি। কখনও বিদেশি বেনিয়ারা এখানে এসে ব্যবসা করে গিয়েছেন। কখনও যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে এলাকা দখল করে রেখেছে কোনও মানবগোষ্ঠী। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী মাদুরাই। আর এই ঐতিহাসিক স্থান মাহাত্ম্যের জন্যই ‘পুবের আথেন্স’ নামে পরিচিত এই শহর।
শহরটা আয়তনে বেশ বড়। লোকসংখ্যা এক কোটির বেশি। ভাইগাই নদীর বুক চিরে গড়ে ওঠা শহরটাকে ঘিরে রেখেছে পাহাড় আর মন্দির। তার স্থাপত্য আর ঐতিহ্য মাদুরাইকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে বাণিজ্য নগরী হিসাবেও মাদুরাই বেশ প্রতিষ্ঠিত। মূলত বস্ত্রশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ এই শহর। বহু মিল ছড়িয়ে রয়েছে শহরের বুকে। পাহাড়ের গায়ে জুঁই ফুলের চাষ মাদুরাইয়ের এক অনন্য আকর্ষণ। এই ফুল চলে যায় দেশের অন্যান্য রাজ্যেও। এই শহরে দূষণের মাত্রা অনেক কম। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। লোকাল ট্রেন নেই। বাস আর অটোই প্রধান যান। জাতীয় সড়ক ধরে দূরপাল্লার বাসে এখান থেকে পৌঁছে যেতে পারেন রামেশ্বরম (২২৫ কিলোমিটার), কোদাইকানাল (১৪৫ কিলোমিটার) এবং কন্যাকুমারী (২৩৫ কিলোমিটার)।
তবে নিঃসন্দেহে এই শহরের মূল আকর্ষণ মীনাক্ষী মন্দির। রং আর স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন এই মন্দির। জন্মকালে নাম ছিল মাধুরাপুরী। পরে সেটাই নাম বদলে হয়েছে মীনাক্ষী। শহরের যে কোনও প্রান্ত থেকে দেখা যায় এই মন্দিরের সুউচ্চ চারটি গেটের একটি। পুরাণের কাহিনি অনুসারে, এই মন্দির চত্বরেই বসেছিল মীনাক্ষী (পার্বতী) আর সুন্দরেশ্বর (শিব)-এর বিয়ের আসর। মন্দিরের ভিতরে তাই শিবেরও একটি মন্দির রয়েছে। পাণ্ডাদের উপদ্রব ছাড়াই সেরে ফেলা যাবে পুজোর কাজ। দেবীর গর্ভগৃহটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত।
এই শহরের অন্যতম আকর্ষণ থিরুমালাই নায়েকের রাজপ্রাসাদ। লোকে এখানে প্রায় সারা দিনের জন্য, সপরিবার আসেন। এখানেই একাধিক ছবির শু্যটিং হয়েছে। রয়েছে আলাগড় কোভিল পাহাড়ের কোলে কার্তিকের মন্দির। থিরুপারান কুন্দ্রন আরও এক দ্রষ্টব্য, যেখানে কার্তিকের মন্দির রয়েছে। কথিত আছে, কার্তিকের পাঁচটি বাড়ির মধ্যে মাদুরাইতেই রয়েছে দু’টি। মাদুরাই গেলে দেখতেই হবে গাঁধী মিউজিয়াম, কামরাজ বিশ্ববিদ্যালয়।
মাদুরাইয়ের আর এক ঐতিহ্যবাহী জায়গা হল তাজ গ্রুপের গেটওয়ে হোটেল। বস্তুত, শহরের উপকণ্ঠে ব্রিটিশ উপনিবেশের চোখধাঁধানো ঐতিহ্য যেন বহন করে নিয়ে চলেছে এই গেটওয়ে হোটেল। ১৮৯০ সালে এখানে ছিল এক বস্ত্রশিল্প সংস্থার সিইও-র অফিস। ঠিক একশো বছর পরে ৬৩ একরের এই সম্পত্তি কিনে নেয় তাজ গ্রুপ।
পশুমালাই পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ক্রমশ উপরে উঠেছে পিচ রাস্তা। ভেসে আসছে অজস্র পাখির ডাক। আসলে গোটাটাই হোটেলের চত্বর। এই ভাবে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন হোটেলের মূল ফটকে। ঢালের গায়ে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে টালির চাল দেওয়া কটেজ। অনেকটা ছোট ছোট দ্বীপের মতো। চতুর্দিকে খেলে বেড়াচ্ছে ময়ূরের দল। ঘর থেকেই চোখে পড়বে মীনাক্ষী মন্দিরের চূড়া।
পাহাড়ের গায়ে, ছ’টি ব্লকে ছড়িয়ে রয়েছে ৬৩টি ঘর। ইতালি-সিঙ্গাপুর-ভিয়েতনামের নানা খাবার, ভিয়েতনামের বিখ্যাত ‘বাসা’ মাছ পাওয়া যাবে গেটওয়ে অল ডে (গ্যাড) রেস্তোরাঁয়।
মাদুরাইয়ে পাঁচতারা থেকে মাঝারি মানের নানা হোটেলে থাকা যায়। যেমন, হোটেল চেনটুন, পার্ক প্লাজা, হোটেল ইন্টারন্যাশনাল, মাদুরাই রেসিডেন্সি প্রভৃতি।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.