মনোরঞ্জন ৩...
দেব-প্রস্তুতি
ভাবে, এমন মেঘলা দিনে যে তাঁর সঙ্গে দেখা হবে ভাবতেই পারিনি।
খিদিরপুর বন্দর তখন সুনসান। তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। খালি নোঙর-ফেলা তিনতলা-সমান বিশালাকার জাহাজগুলো সামান্য দুলছে। দুটো পাগলা দৈত্যের ঘুম ভাঙছে যেন। জলের ওপর কালো মেঘটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বলে। একটু দূরেই একটা বাতানুকূুল বাস। দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চুপ। তার ভেতরে তখন কী ম্যাজিক চলছে কে জানে! সেই ম্যাজিকের খেল দেখতেই তো এই ঝড়-জলে ছুটতে ছুটতে আসা।
বৃষ্টি ধরে এল। বাসের চারদিকে কিছু ইতস্তত লোকজন। তার পর হঠাৎ, একেবারে আচমকা, বাসের দরজা খুলে নেমে এলেন তিনি। দেব। নিখুঁত ভাস্কর্যের শরীরে ঘন কালো ইনার বসেছে যেন আলেকজেন্ডারের বর্ম। কালো, চাপা ট্রাউজার। কালো জুতো। বাঁ হাতের কব্জিতে কালো ঘড়ি। এত কালোর মাঝে ফুঁড়ে-ওঠা বাঁ-কানের লতিতে এক কুচি হিরে। ঠোঁটের কোনায় সেই বিষ-হাসি। ‘কখন এলেন?’ মাথা নেড়ে জানালাম, অনেকক্ষণ। ‘চলুন হাঁটি’, বললেন তিনি।
ওপরে কৃষ্ণ-কালো মেঘ, পাশে জলের ছলাৎ, পায়ের নিচে পাথর ফুঁড়ে ওঠা ঘাস, পাশে তিনি। হাঁটলাম। এক পরিত্যক্ত গ্যারেজ। ভেতর থেকে ভেসে আসা তীব্র বোঁটকা গন্ধে সম্বিৎ ফিরল। কে যেন বলল, এটাই বন্দরের পরিচিত গন্ধ। ঢুকেই তাঁর অন্য রূপ। ‘একটু দাঁড়ান।’ গলালেন একটা চেক শার্ট। নিমেষে, সারল্যমাখা মুখে বাজ পাখির ব্যগ্রতা। শরীরে খেলে গেল চিতা বাঘের গতি। বাহুর পেশির সঙ্গে তাল দিয়ে ফুলে উঠল চোখের পেশি। তেড়ে আসা গুন্ডাদের মারলেন যেমন, মারও খেলেন উল্টে। তার মধ্যেই কাঠের স্তূপের ফাঁক দিয়ে মুহূর্তের চোখা-চোখি। বুকের রক্ত চলকে গলায়। আর স্তূপের ওপার থেকে চোখের কোণে আশ্বাসের চিলতে ছোঁয়া।
খিদিরপুর বন্দরে ‘খোকাবাবু’
শেষ হল গুন্ডা পেটানো। এবার তাঁর ডেরায় ফেরা। সেই বাস-এ।
বসলাম মুখোমুখি। হাসছেন মৃদু মৃদু।
নির্জন বাসের ভেতর মাদকতার রেশ ভাঙা প্রায় দুঃসাধ্য। চৌম্বক শক্তির ধার কেটে বললাম, আর কত দিন গুন্ডা পেটাবেন? ‘কেন, ক্ষতি কী?’ হাসতে হাসতে বললেন। চোখে ঝিলিক তুলে বললেন, ‘আমার মুখে যে সারল্যটা আছে সেটাকেই তো কাজে লাগাচ্ছি। আমি, আমার প্রযোজক, পরিচালকও। এখন আমি চাইলেই তো আর ‘আমি সুভাষ বলছি’ ‘অটোগ্রাফ’, ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’, বা ‘মনের মানুষ’ করতে পারব না। তা ছাড়া, সে রকম রোল আমার কাছে আসতেও তো হবে। আর এগুলো করার জন্য আরও পরিণতমনস্ক হতে হবে। এক্ষুনি অত ‘চাওয়া’ আমার ঠিক হবে না। আস্তে আস্তে এগোচ্ছি’ বলে থামলেন, “তবে বাংলা ছবিতে রিমেকের দিন ২০১২তেই শেষ। আরে, রিমেক করার জন্যেও তো ছবি চাই,’’ দুর্লভ হাসিটি আরেকটু চোখা হল।
আর পুজোর ক’টা দিন? ‘দূর, দূর! যতই ভাবি প্যান্ডেলে যাব, ঠাকুর দেখব, ফুচকা খাব, হয় কোথায়? গাড়ি নিয়েও বেরোতে পারি না। দু’টো মেয়েকে যে ‘লাইন’ মারব, সে সুযোগও, ছাই, পাই না। ওমনি তিনটে ছেলে কোথা থেকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে! সত্যি কথা বলি? এখন খালি বাড়িতে বসে কান খাড়া করে প্যান্ডেলে আমার কটা গান বাজল, তাই শোনার চেষ্টা করি। গত বছর থেকে আমার সঙ্গে আমার মা, বাবা আছেন। ওঁদের নিয়ে বেরব এক দিন,’ বললেন তিনি।
হতে পারেন ‘খোকাবাবু’। চরিত্রটা প্রচণ্ড ঢপবাজ। তাঁর থেকেও বেশি? ‘না, আমি একটু কম। তবে এটুকু বলতে পারি, এমন চরিত্র আগে কখনও করি নি,’’ আবার হাসি। এই চরিত্রায়নেই প্রত্যেক দিন সকাল সাতটা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত এক টানা শু্যটিং করছেন। মাঝে এক কাপ চা, হয়তো বা একটা বিস্কিট। একটা শট শেষ হতেই চোখ রাখছেন মনিটরে। এ ভাবেই বন্দরের দুর্গন্ধ, তুমুল বৃষ্টি তুচ্ছ করে ছুরি শানাচ্ছেন কঠিন একাগ্রতায়। নিজের মতো করে।
বাইরে সন্ধে নেমে গেছে।
ফাঁকা বন্দরে ঝিঁ ঝিঁর তীব্র তিরস্কার। খিদিরপুর শহর থেকে একটু দূরে। এ বার ফেরার পালা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.