সম্পাদকীয় ২...
সাবালক হউন
মালিনী মুর্মু আত্মঘাতী হইয়াছেন। দৃশ্যত, তাঁহার প্রাক্তন প্রণয়ী ফেসবুকে তাঁহাদের ভাঙা সম্পর্ক লইয়া মন্তব্য করায় মালিনী মানসিক ভাবে আহত হইয়াছিলেন। সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় প্রণয়ী নাকি খুশি। দমবন্ধ দশা হইতে তিনি নাকি মুক্ত। এই মন্তব্যে মালিনী আহত হইয়াছিলেন। এই মানসিক নিগ্রহ হয়তো তাঁহার আত্মহননের অন্যতম কারণ। দেশের আইন অনুসারে তদন্তসাপেক্ষে স্থির হইবে, মালিনীর পূর্বতন প্রেমিক অপরাধী কি না! তবে সামাজিকতার পক্ষ হইতে যদি দেখা যায়, তাহা হইলে স্বীকার করিতেই হইবে, যে এক জন ব্যক্তিমানুষ অপর এক জন ব্যক্তি সম্পর্কে কতটা বলিবেন বা বলিবেন না, তাহা একটি গুরুতর প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে দুই জন পরিণত মানুষ স্বেচ্ছায় পরস্পর সম্পর্ক গড়িয়া তুলিয়াছিলেন। কোনও কারণে সেই সম্পর্ক ভাঙিয়া গিয়াছিল। ভাঙিতেই পারে। সম্পর্ক যে চিরন্তন হইবে তাহা মনে করিবার কারণ নাই। কিন্তু দুই জন পরিণত আত্মনির্ভর মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হইলে তাহা লইয়া গণ-পরিসরে একতরফা মন্তব্য প্রচার করা অবিধেয় রুচিহীনতা। শুধু বলাই রুচিহীনতা নয়, শোনাও রুচিহীনতা। যাহা একদা ব্যক্তিগত ছিল তাহা আজ কেবল সম্পর্ক নাই বলিয়াই দলগত কৌতুকের বিষয় হইবে কেন! মালিনীর পূর্বতন প্রেমিক যাহা করিয়াছেন তাহা সমর্থনযোগ্য নহে। বরং এ এক ক্ষতিকর নাবালকত্ব।
হালে নানা ভাবে নাকি ভারতীয়রা মুক্ত ও স্বাধীন হইয়াছেন। ভাল। কিন্তু স্বাধীনতার দায়িত্ব লইবার মতো সাবালক অনেকেই হন নাই। নানা ক্ষেত্রে তাহা টের পাওয়া যাইতেছে। গাড়ি পাইয়াছেন বলিয়া যানবিধি মানিবার দায় নাই, মদ্যপানের অধিকার পাইয়াছেন বলিয়া অপরের পক্ষে বিরক্তিকর বা ক্ষতিকর মাতলামি করিবার নেশা চাপিয়াছে, লিভ-ইন-এর স্বাধীনতা পাইয়াছেন বলিয়া সঙ্গীকে ইচ্ছামত অসম্মানের ইচ্ছা জাগিয়াছে। ইতিহাস ও পুরাণ বলিতেছে, প্রাচীন ভারত মানসিক ভাবে এ কালের চাহিতে অধিকতর সাবালক ছিল। ইচ্ছা মতো রথ ছুটাইবার, আসবপানে উন্মত্ত না হইবার দায়িত্ব সে সমাজ লইত। আপাতত নর-নারীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেই দেখা যাক না কেন! উদাহরণটি মহাভারতীয়। মহাভারতে দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামী এই পাঁচ সম্পর্কের মধ্যে ‘প্রাইভেট’ ও ‘পাবলিক’-এর বিভাজনটি দক্ষ ভাবে রক্ষা করা হইত। দ্রৌপদী যখন এক জনের সহিত আলাপ করিবেন, তখন অপর স্বামীর সেখানে গমন নিষেধ। দুইয়ের মধ্যে তিন ঢুকিবেন না। এই বিধিটিকে সম্প্রসারিত অর্থে গ্রহণ করা যাইতে পারে। যাহা দুই জনের প্রাইভেট, তাহাতে তৃতীয়ের মাথা গলাইবার প্রয়োজন নাই। বহুবিবাহ এখন নাই, কিন্তু সম্পর্ক এখনও এক নয়, বহু। কোনওটি প্রণয়ের, কোনওটি বন্ধুতার। প্রতিটি সম্পর্কই স্বাধীন ও গুরুত্বপূর্ণ। বিবাহ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাঁহারা রহিয়াছেন তাঁহাদেরও নানা মানবিক সম্পর্ক থাকিতে পারে। আধুনিক পরিণত মানুষ সম্পর্কের নানাত্বে ও বহুত্বে বিশ্বাসী। ব্যক্তিত্বের নির্মাণে তাহা জরুরিও বটে। এই সম্পর্কগুলিকে সম্মান করিতে হইবে। প্রতি দুই জন মানুষের সম্পর্কের যে নিভৃতি ও ঐকান্তিকতা, তাহা স্বীকার করিতে হইবে। দুই জনের সম্পর্কে হামলাইয়া পড়িয়া যেমন তৃতীয় কেহ দখলদারি ফলাইতে চাহিবেন না, তেমনই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাঙিয়া পড়িলে তাহা লইয়া ঢাক পিটাইবারও যুক্তি নাই। ইহাই সাবালকত্ব। ভারতীয়রা সাবালক হউন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.