সম্পাদকীয় ১...
বিলম্বিত
বশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করিতে উদ্যোগী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সন্ত্রাসবাদের সূতিকাগারকেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক ধরিয়া লইয়া সেই লড়াই জোরদার করিতে পাকিস্তানকে শত-শত কোটি ডলারের আর্থিক অনুদান দেওয়াও শুরু করেন। কিন্তু আল-কায়দার প্রধান ওসামা বিন লাদেনের পাক ভূখণ্ডে নিশ্চিন্ত নিরাপত্তায় আত্মগোপন করিয়া থাকার তথ্যটি উদ্ঘাটিত হওয়ার পরেই মার্কিন কংগ্রেসে জোরালো দাবি ওঠে পাকিস্তানকে চাপে রাখার। প্রশ্ন ওঠে, আমেরিকানদের ঘাতকের আশ্রয়দাতাকে কেন আমেরিকা অর্থসাহায্য করিয়া যাইবে? আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক লক্ষ্যবস্তুগুলিতে একের পর এক পাক মদতপুষ্ট হাক্কানি গোষ্ঠীর ফিদাইন হামলার পর মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ধিক্কারে আরও মুখর হন। পাক সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আইয়ের সহিত হাক্কানি গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ ও ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশের বিষয়টি মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে উন্মোচিত হওয়ার পর ইসলামাবাদকে যাবতীয় মার্কিন সাহায্য বন্ধ করার দাবি জোরদার। ইতিমধ্যেই পাক সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা সাপেক্ষে ওই সাহায্য মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে।
ইসলামাবাদের কাছে ইহা একটা বড় ধাক্কা। বিশেষত নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন এই প্রকাশ্য মার্কিন অবস্থান তাহার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ণ করিবে। মার্কিন সেনাধ্যক্ষ মাইক মুলেন যেমন পাক সেনাধ্যক্ষ পারভেজ কায়ানিকে কড়া ভাষায় বকুনি দিয়াছেন, বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনও তেমনই পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার-কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মার্কিন সাহায্য বন্ধের সম্ভাবনার কথা শুনাইয়া দিয়াছেন। পাকিস্তান তাহার ভূখণ্ডে আশ্রিত হাক্কানি গোষ্ঠীকে দমন না করিলে মার্কিন বাহিনীই যে একতরফা ভাবে তাহা করিবে (ঠিক যেমন বিন লাদেনকে মারার অভিযানে করা হয়), ওয়াশিংটন সে-কথাও জানাইয়া দিয়াছে। ইহাতে যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হইতে পারে, তাহা লইয়া ওয়াশিংটনের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নাই। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের ওয়াজিরিস্তানে তো জেহাদি তালিবানদের নিশানা করিয়া নিয়মিত পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করিয়াই মার্কিন ড্রোন-বিমানের হানাদারি চলিয়াছে। এক দিকে তালিবানকে দিয়া আফগানিস্তানে নিজের রণনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধ করা, অন্য দিকে লস্কর-ই-তইবা সহ ন্যান্য জেহাদি গোষ্ঠীকে দিয়া কাশ্মীর সহ ভারতে অন্তর্ঘাত ও নাশকতা চালানোপাকিস্তানের এই পরিকল্পিত অপকর্ম যে পাক রাজনীতিক, সামরিক আমলা ও গোয়েন্দাদের সক্রিয় তৎপরতায় ঘটিতেছে, নয়াদিল্লি সে-কথা বহু কাল ধরিয়া পশ্চিমী বিশ্বকে জানাইয়াছে।
কিন্তু ‘পাকিস্তান নিজেও সন্ত্রাসবাদের শিকার, সেখানেও নিত্য জঙ্গি হামলায় নিরীহ মানুষ মরিতেছে’, এই যুক্তিতে সন্ত্রাস প্রতিপালনে ইসলামাবাদের ভূমিকা লঘু করিয়া দেখানোর চেষ্টা হইয়াছে। ফলে এক দিকে চিন, অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই হাত ভরিয়া রকমারি অনুদান ও সহায়তা উজাড় করিয়া দিয়াছে। ওই সাহায্য যে পথ ঘুরিয়া জেহাদিদের কাছেই পৌঁছাইয়াছে, পুষ্ট করিয়াছে সন্ত্রাসবাদের শিবির, এত দিনে আমেরিকা ও চিন উভয়েই তাহা বুঝিতে পারিয়া ইসলামাবাদকে তিরস্কার করিতেছে। চিনা নেতৃত্বকে তুষ্ট করিতে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি সহ পাক মন্ত্রিপরিষদ দফায়-দফায় উপর্যুপরি চিন সফর করিয়া হাতে-পায়ে ধরিয়া অবস্থা সামাল দিতেছেন। ওয়াশিংটনের বেলায় কিন্তু পাকিস্তান ফোঁস করিতে ছাড়ে নাই। পাক বিদেশমন্ত্রী তো পাল্টা হুমকিই দিয়াছেন, সাহায্য বন্ধ করিলে আমেরিকা পাকিস্তানের বন্ধুত্ব হারাইবে এবং তাহার ফলও আমেরিকাকেই ভোগ করিতে হইবে। ইহা কূটনৈতিক গড়াপেটার লোকদেখানো হুঙ্কারও হইতে পারে। তবে নয়াদিল্লির এত দিনের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তাহা এ বার প্রমাণিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.