চিদম্বরমের পাশে সনিয়াও, সফর ছেঁটে প্রণব যাচ্ছেন নিউ ইয়র্ক
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের পরে এ বার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সঙ্কটের মুহূর্তে ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে পালনিয়াপ্পন চিদম্বরমের পাশে দাঁড়ালেন সরকার ও দলের নেতৃত্ব। দাঁড়াতে বললেন গোটা দলকে। আর এই বিতর্কে মনমোহনের সঙ্গে বৈঠক করতে তাঁর ওয়াংশিটন সফর কিছুটা হলেও ছোট করে শনিবার রাতেই নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু এর পরেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, টুজি স্পেকট্রাম বিতর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দুই শীর্ষ মন্ত্রীর মধ্যে যে ‘বিরোধের ছবি’ উঠে এসেছে, এই ভাবে কি সেটা মুছে ফেলতে সফল হবেন সনিয়া-মনমোহন? যাবতীয় বিতর্ক ও সঙ্কট পিছনে ফেলে কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কংগ্রেস?
শুক্রবার রাত পর্যন্ত বরং উল্টো ছবিই দেখা গিয়েছে দিল্লিতে। এই মুহূর্তে বড় প্রশ্ন, যে নোটে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে সেই নোটটি কার নির্দেশে প্রস্তুত করেছিল অর্থ মন্ত্রক? কেন সেই নোট তৈরি করা হয়েছিল, তারও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত মেলেনি। উল্টে জবাব দিতে গিয়ে দৃশ্যতই হিমশিম খাচ্ছে কংগ্রেস। আর সেই সুযোগ নিয়ে আজ সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই আক্রমণের নিশানা করেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, চিদম্বরম অন্যায্য কাজ করা সত্ত্বেও তাঁকে আড়াল করছেন প্রধানমন্ত্রী। কেন? আসলে তিনি জানেন, চিদম্বরম ইস্তফা দিলে স্পেকট্রামের আঁচ সরাসরি তাঁর ওপরই পড়বে।
কংগ্রেস নেতাদের সব থেকে বড় মুশকিল, মনমোহন এবং প্রণব দু’জনেই এখন দেশের বাইরে। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দল ও সরকারের নেতারা এই দু’জনের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়।
কিন্তু এই বিতর্ক বিদেশেও সরকারকে ছাড়েনি। যার জবাব দিতে কাল প্রথা ভেঙে সঙ্গী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া ফোনে তিনি কথা বলেছেন প্রণব ও চিদম্বরমের সঙ্গে। এ বার শনিবার রাতেই ওয়াশিংটন সফর সেরে নিউ ইয়র্ক চলে যাচ্ছেন প্রণববাবু। তিনি যে সফর কাটছাঁট করছেন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রবিবার সকালে নির্ধারিত সাংবাদিক বৈঠকটি আজ বিকেল সাড়ে তিনটেয় (ওয়াশিংটনের সময়) করে ফেলেছেন তিনি। বাকি সফর অবশ্য একই থাকছে। মনে করা হচ্ছে, শনিবার যাবতীয় কর্মসূচি সেরে রাত ১০টায় নিউ ইয়র্কের বিমানে উঠবেন তিনি। সেখানে পৌঁছবেন সাড়ে ১১টায়। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। প্রণববাবু আজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর দেশে ফিরে দফতরের সব কাগজপত্র ভাল করে খতিয়ে দেখে তবেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলবেন।
এই পরিস্থিতিতে দেশে সরকারের মন্ত্রীরা অনেক সাবধানী। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের কথায়, “কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশে ফেরার পর আশা করা যায় তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারবেন।” সলমনের এই মন্তব্য শুনে আবার অনেকে মনে করছেন, সরকার ও কংগ্রেসের একাংশ এখন বল ঠেলে দিচ্ছেন প্রণববাবুর কোর্টে।
প্রণববাবু এ দিন প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, সামগ্রিক ঘটনায় অর্থমন্ত্রী খুবই বিরক্ত ও অসন্তুষ্ট। কেন না, তিনি নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে সেই নোট প্রস্তুত করার নির্দেশ দেননি। ক্যাবিনেট সচিবালয় টুজি স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে একটি নোট প্রস্তুত করতে বলেছিল অর্থ মন্ত্রককে। ক্যাবিনেট সচিবালয়ের সেই নির্দেশ মতো একটি ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ নোট তৈরি করা হয়। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে এ প্রশ্নও তোলা হচ্ছে যে, নোটটি ফাঁস হওয়ার পর প্রণবের কি কোনও রাজনৈতিক লাভ হয়েছে?
কংগ্রেসের মধ্যে প্রতি ইঞ্চি জমির জন্য লড়াই নতুন নয়। কিন্তু স্পেকট্রাম নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের নোট ফাঁস হওয়ার পর দলেরই একাংশ বলছে, এতে কার লাভ হল? কারণ, প্রণববাবু ও চিদম্বরম দু’জনের ভাবমূর্তিই তো ক্ষুণ্ণ হল। আবার অনেকে মনে করছেন, শহিদের মর্যাদা পাচ্ছেন চিদম্বরম। ঔদ্ধত্যের জন্য যে মানুষটির পাশে সচরাচর কংগ্রেস নেতারা দাঁড়ান না, সেই চিদম্বরমের সমর্থনে দল ও সরকার এখন সরব।
এই সঙ্কটে দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও প্রণববাবু এই মুহূর্তে দলে কিছুটা কোণঠাসা, কিন্তু তাঁর সঙ্গে দিগ্বিজয় সিংহের মতো নেতারা যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
নিউ ইয়র্কে প্রণববাবুর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হবে ঠিকই। তবে দেশে ফিরে অর্থ মন্ত্রকের নোটটি সম্পর্কে কংগ্রেস সভানেত্রীকে অর্থমন্ত্রী কী রিপোর্ট দেবেন, এবং তাতে সঙ্কট মিটবে, না গভীরতর হবে, তা নিয়েও এখন কৌতূহল চরমে। একই সঙ্গে কৌতূহল রয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালত চিদম্বরমের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কি না, তা নিয়েও।
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে বিরোধীদের তোপ দাগার অবশ্য বিরাম নেই। মুরলী মনোহর জোশীর নেতৃত্বে লোকসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির বৈঠকে আজ বিজেপি সদস্যরা প্রণবের নোটটি নিয়ে ফের স্পেকট্রাম তদন্তের দাবি করেছেন। উল্লেখযোগ্য হল, পিএসি-তে কংগ্রেস সাংসদরা টুজি নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক অতীতে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও অন্তত আজকের বৈঠকে তাঁদের মুখে আপত্তি শোনা যায়নি। একই ভাবে স্পেকট্রাম তদন্ত নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটিও আজ সরকারের কাছে প্রণবের নোটটি চেয়ে পাঠিয়েছে।
এখানেই থেমে না থেকে বিজেপি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। দলের এক নেতার মতে, “তথ্য জানার অধিকার আইনে নোটটি প্রকাশ করল প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ই। এতে প্রণববাবুর প্রতি কংগ্রেসের অনেক নেতা রুষ্ট হলেন।
আবার চিদম্বরমের ইস্তফার দাবি উঠল। ফলে গোটা ঘটনার পিছনে প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সচিবালয়ের কোনও সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত।”
সরকারের একাংশ এর আগে প্রশ্ন তুলেছিল, কেন বেছে বেছে অর্থ মন্ত্রকের নোটটিই চাইলেন বিজেপি নেতা বিবেক গর্গ? তা হলে নিশ্চয়ই ভিতর থেকে কেউ তাঁকে খবর দিয়েছে। গর্গ আজ কিন্তু বলেন, গত জুনে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, টুজি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে কী কী তথ্যের আদানপ্রদান হয়েছে? সেখানে কোনও সুনিশ্চিত বিষয় বলা হয়নি। তার ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় থেকে নোটটি পেয়েছেন। তাঁর এই জবাবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অস্বস্তি বাড়ল।
বিজেপি মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদও বলেন, এর আগে ২০০৭ সালেও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে টুজি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রণববাবু। প্রধানমন্ত্রী সব কিছু জেনেও কেন চিদম্বরমকে সরালেন না? প্রণববাবু সরকারের দু’নম্বর মন্ত্রী। তিনি যদি আপত্তি তোলেন, তা হলে প্রধানমন্ত্রীই জবাব দিন, কে কার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন?
সব মিলিয়ে, সরকারের সঙ্কট কাটার কোনও চিহ্ন আপাতত নেই।

(সহ-প্রতিবেদন: দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.