সিকিম এখনও বিপর্যস্ত। তবে ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে দার্জিলিং পাহাড়। সব ঠিকঠাক থাকলে এ বার পুজোর মরসুমে অনেকদিন পরে দার্জিলিং জমজমাট হয়ে উঠবে, পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়বে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট সব মহল। শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে নিউজলপাইগুড়িগামী নানা ট্রেনের ‘ওয়েটিং লিস্ট’ও তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাই পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে পুজোর আগেই এনজেপি থেকে দার্জিলিঙের তিন মহকুমায় যাওয়ার সরকারি মিনিবাস চালু করছে ‘নর্থ বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন’ (এনবিএসটিসি)।
সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ শুক্রবার বলেছেন, “ভূমিকম্পের ধাক্কা অনেকটা সামলানো গিয়েছে। যা পরিস্থিতি, তাতে আমাদের অনুমান, দার্জিলিং পাহাড়ে পর্যটকদের রেকর্ড ভিড় হবে। সে জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এনজেপি থেকে দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পং রুটে সরকারি মিনিবাস চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চালানো হবে দু’টি সিটি-বাসও। দার্জিলিং মেল ও পদাতিক এক্সপ্রেস এনজেপি-তে পৌঁছনোর সময়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পাহাড়ের বাসগুলো যাতায়াত করবে। পুজো মরসুমে চালু হলেও তা সারা বছর চালানোর চেষ্টা হবে।”
সংস্থা সূত্রের খবর, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় এনজেপি থেকে দার্জিলিং ও কালিম্পং রুটে একাধিক বাস চালানো হবে। আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই বাস-রুট চালু করবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। একই সঙ্গে এনজেপি থেকে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস ও পিসি মিত্তল বাস টামির্নাস হয়ে শালুগাড়া পর্যন্ত দু’টি সিটি-বাসও চালু হবে। কাজেই পর্যটকেরা এনজেপি থেকে সরাসরি পাহাড়ের বাসে জায়গা না পেলেও সিটি-বাসে উঠে শহরের দু’টি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে সেখান থেকে পাহাড় কিংবা অন্যত্র যেতে পারবেন। আগাম টিকিট কাটার কোনও ঝক্কি নেই। স্টেশনে নেমে বাইরে গিয়ে বাসে উঠে টিকিট কাটলেই হবে। বছর দশেক আগেও এনজেপি থেকে দার্জিলিং-সহ তিন মহকুমায় যাতায়াতের জন্য সরকারি বাস চলত। নানা কারণে তা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। বছর পাঁচেক আগে ওই বাস চালানো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যে নয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী পুজোয় পর্যটকদের হয়রানি কমাতে উদ্যোগী হন। বন, পর্যটন দফতরের সঙ্গে আলোচনার পরে এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করেন গৌতমবাবু। সব দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে পর্যটকদের ভোগান্তি এড়ানোর জন্য রূপরেখা তৈরি করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর।
তখনই ঠিক হয়, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা পর্যটকদের অনেকেই এনজেপিতে নামার পরে পাহাড়ে যাওয়ার গাড়ি পেতে সমস্যায় পড়েন। সেই সমস্যার মোকাবিলায় এনবিএসটিসি-র তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এনজেপি স্টেশন থেকে পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য তারা একাধিক মিনিবাস চালাবে। যাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে প্রয়োজনে আরও একটি করে বাস পুজোর মরসুমে এনজেপি থেকে চালানো হবে।
পাশাপাশি, ‘প্রাইভেট কার’ নিয়ে যাঁরা পাহাড়ে যাতায়াত করবেন, তাঁদের যাতে হয়রানি না হয়, সে জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর একটি ‘ট্যুরিস্ট হেল্প সেন্টার’ চালু করবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ইতিমধ্যেই এনজেপি এলাকার পুর-কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দীকে ওই ব্যাপারে বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছেন। গৌতমবাবু বলেন, “এনজেপি থেকে পাহাড়ে যাতায়াত করতে পর্যটকদের যাতে ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে না হয়, সে জন্য সব রকম সহায়তা করার চেষ্টা হচ্ছে।” |