রাজ্যে নব নির্বাচিত সরকারকে ‘ঠিক পথে’ চালিত করে মানুষকে ‘বাঁচাতে’ আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনে বামেদের জয় জরুরি বলে মনে করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। একই মত সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেবেরও।
বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বামফ্রন্টের প্রচার সভায় খোলাপোতায় এসেছিলেন সিপিএমের দুই হেভিওয়েট নেতা। শুক্রবার প্রায় একই সময়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে, মাটিয়া বাজারে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচারে আসেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁর আবার বক্তব্য, বামশাসনাধীন রাজ্যে যে সব নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, সেগুলি নিয়ে পর্যায়ক্রমে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে ওই নেতা-মন্ত্রীদের ‘কোমরে দড়ি বেঁধে’ জেলে পোরা হবে।
রাজনৈতিক দুই শিবিরের প্রচার সভাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার এ ভাবেই সরগরম হয়েছে বসিরহাট। দু’টি সভাতেই ভিড় হয়েছিল ভালই। |
মোস্তাফা বিন কাসেমের অকাল মৃত্যুতে বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে উপ নির্বাচন হচ্ছে। সিপিএম প্রার্থী সুবিদ আলি গাজির প্রচার সভায় এসে বিমানবাবু বলেন, “ওরা (তৃণমূল) বিরোধী থাকাকালীন নিউটাউনশিপে বিদ্যুতের খুঁটি বসাতে দেয়নি। সরকারি কাজে আগাগোড়া বাধা দিয়ে গিয়েছে। আগে শুধু গালগল্প করত। এখন মিটিং-মিছিল বন্ধ করতে চাইছে।” এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে বিমানবাবু বলেন, “মেট্রো চ্যানেলে ছাব্বিশ দিন মাচা বেঁধে বসেছিলেন। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখন সর্বদল ডেকে সভার জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা বলছেন। হোর্ডিং তুলে দেওয়ার কথাও বলছেন।” বিমানবাবুর মতে, উপ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েক দিনের মধ্যেই দুই এলাকা (ভবাণীপুর ও বসিরহাট উত্তর) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া হোর্টিংয়ে ভরে যাবে। অথচ, মুখ্যমন্ত্রীর দল তৃণমূলই বলছে হোর্ডিং লাগানো যাবে না।
বিমানবাবু বলেন, “এই দু’টি আসনে হার-জিতে সরকারের পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আপনাদের রায়ে ওদের কাজের উত্তর দেওয়া যাবে। ওদের (রাজ্য সরকার) ঠিক পথে চালনা করে মানুষকে বাঁচাতে ওই দু’টি আসনে আমাদের জেতা জরুরি।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জোট সরকারের সমালোচনা করে বিমানবাবু আরও বলেন, “ওরা সবই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ করছে। গণতন্ত্রের নামে দলতন্ত্র শুরু করেছে। টিএমসি-মার্কা বিদ্দজনদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সহ সর্বত্র বসানো হচ্ছে।”
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাম কর্মী-সমর্থকদের উপরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে বলেও অভিযোগ করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান। তাঁর কথায়, “গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে সন্ত্রাস চলছে।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ বিমানবাবুর বক্তব্য, “মহাকরণে ছবি রেখে প্রতি দিন গানের আসর বসছে। যদি এতই সঙ্গীতপ্রিয় হন, তা হলে বাড়িতে বা গানের আসরে গেলেই পারেন। মহাকরণ কাজর জায়গা।”
গৌতমবাবু ছাড়াও এ দিন নির্বাচনী প্রচার সভায় বিমানবাবুর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুস সাত্তার-সহ একাধিক বাম নেতা। গৌতমবাবু বলেন, “রাজ্যে প্রচুর চিটফান্ড। তারা মানুষকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু তৃণমূলের হয়ে প্রচার করায় তাদের তোল্লাই দেওয়া হচ্ছে।” |
অন্য দিকে, জ্যোতিপ্রিয়বাবুও এ দিন আগাগোড়া সিপিএমের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘কাসেমের (প্রয়াত বিধায়ক) মৃত্যু রহস্য নিয়ে ওঁর ছেলে দলের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছিলেন। সেই রহস্য উদ্ঘাটন হবে কয়েক দিন বাদেই। তখন কেউ রেহাই পাবে না। কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হবে।” মজিদ মাস্টার, বাবু মাস্টারদের ‘কীর্তি-কলাপ’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ নই। তাই ওরা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
সিপিএম প্রভাবিত সরকারি কর্মীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটিকে তাঁর হুঁশিয়ারি, “আসি যাই মাইনে পাই আর চলবে না। নির্দিষ্ট সময়ে সকলকে অফিসে আসতে হবে। কাজ করতে হবে।” এই প্রসঙ্গেই রাজ্য সরকারের ‘কর্মসংস্কৃতির’ কথা উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষা, পানীয় জল নিয়ে কোনও রকম দলবাজি, কালোবাজারি করতে দেওয়া হবে না।” বিপিএল তালিকা সংশোধনের কাজ অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। দলমত নির্বিশেষে দরিদ্র মানুষ বিপিএল কার্ড পাবেন বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
বিমানবাবু প্রচার সভায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ দিন বলেন, “হাড়োয়ায় বর্গা চাষিদের থেকে পাট্টা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ওদের দখলদারের মনোভাব।” জ্যোতিপ্রিয়বাবু আবার বলেন, “হাড়োয়া, শাসনে ভেড়ি দখল করে খেতেন কমরেডরা। আমরা তা গরিবের হাতে ফিরিয়ে দেব।”
|