...সময় এল কাছে
পুজোয় ‘পরিবর্তন’
ণ্ডপে ঢুকতেই এক জন নয়, চোখে পড়বে তিন জন অসুর। প্রত্যেককেই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এক দিকে রয়েছে দুর্গাপ্রতিমা। তার সামনে মানুষের ভিড়। এঁরা সকলেই বিচারপ্রার্থী। প্ল্যাকার্ড নিয়ে মায়ের কাছে এসেছেন বিচার চাইতে। কেউ এসেছেন সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে, কেউ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম থেকে, কেউ বা চাইছেন তাপসী মালিকের হত্যার বিচার। পুরো বিষয়টির সাক্ষী থাকতে পারবেন উত্তর ২৪ পরগনার অশ্বিনীপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব দেখতে এলে। থিম: বামেদের চৌত্রিশ বছর বনাম তৃণমূলের চার মাসের শাসন। মহাকরণের আদলে তৈরি এই মণ্ডপে ছবি ও মডেলে দেখানো হবে এ রাজ্যের চেহারা। ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে প্রাক্তন ও বর্তমান, দুই মুখ্যমন্ত্রীরই জীবনযাত্রার ছবি।
থিম পুজোর বাজারে একে অন্যকে টেক্কা দিতে গিয়ে এ ভাবেই ঢুকে পড়তে পারবেন মহাকরণের অলিন্দে। শুধু তা-ই নয়, হাজারখানা ঘণ্টা, হাজারটা টেরাকোটার ঝাড়বাতি আর বাংলা গানে এ বার মেতে উঠবে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসত। পাহাড়ে উঠে গা ছমছম করা গুহা পার হয়ে সোজা চলে যাওয়া যাবে হীরক রাজার দেশে। দেখা মিলবে নাটমন্দির বা রাজস্থানের জৈন মন্দির বা আগ্রার বুদ্ধমন্দিরেরও।
হৃদয়পুরের হরিহরপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এ বার রজতজয়ন্তী বর্ষ। তাই ব্রতী সঙ্ঘের সমস্ত মাঠ জুড়ে ফাইবার ও প্যারিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে নবদুর্গা মণ্ডপ। ন’টি মন্দিরে দেখা যাবে দেবীর ন’টি রূপ। আলো আর শব্দের খেলায় গা ছমছমে পরিবেশের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি গুহা পেরিয়ে পৌঁছতে হবে মূল মণ্ডপে।
নজর কাড়বে উদয়রাজপুর হরিহরপুর দুর্গাপুজো কমিটির ৫৫ ফুট উঁচু বাঁকুড়ার টেরোকোটার মন্দির। ৬২তম বর্ষে এ বার তাদের মণ্ডপের দেওয়ালে থাকবে অসংখ্য দেবদেবীর মূর্তি।
ভিতরে থাকবে একশো বাতির ঝাড়। সবুজায়নের কথা মাথায় রেখে এখানে প্রতিমাকে সাজানো হচ্ছে সবুজ রঙে। মণ্ডপের সামনে থাকছে বাহারি বাগান। আলোয় সাজিয়ে তোলা হবে মণ্ডপ সংলগ্ন জলাশয়টি।
এ বার পুজোয় হীরক রাজার দেশে নিয়ে যাবে বারাসতের চারের পল্লি সর্বজনীন পুজো কমিটি। মাটির মডেলে দেখা মিলবে সত্যজিৎ রায়ের এই বিখ্যাত চলচ্চিত্রের টুকরো সব ছবির। মণ্ডপে ঢোকার মুখেই থাকবে অত্যাচারী হীরক রাজার বিশাল মূর্তি। থাকবে রাজসভা, যন্তর-মন্তর ঘর, হিরের খনিও। প্রতিমা এখানে যেন পাথরের মূর্তি। পুজোয় বস্ত্রদান করা হবে দুঃস্থদের।
নাটমন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে হাটখোলা সঙ্ঘমিত্র সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। তাদের থিম: ‘অশুভ শক্তির বিনাশ’। পুজোর ক’দিন দুঃস্থদের বস্ত্রদান করা হবে। চলবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
৬৫তম বর্ষে চড়কডাঙা যুবগোষ্ঠী সর্বজনীন দুর্গোৎসবে দেখা মিলবে রাজস্থানের জৈন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ। ৬৫ ফুট উঁচু ও ৫৫ ফুট চওড়া এই মণ্ডপের চারপাশে থাকবে বিভিন্ন দেবদেবীর মডেল। তবে দুর্গা পূজিত হবেন সাবেক রূপেই।
পাহাড়ের গুহার আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে কলুপুকুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব। ওই গুহায় মাটির সাবেক প্রতিমা দেখে মনে হবে যেন তা পাথরের তৈরি। মণ্ডপে থাকবে ঝরনাও। ৫০ ফুট উঁচু ও ৬০ ফুট চওড়া এই গুহায় দেখা মিলবে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তির। এগুলিও পাথরের তৈরি বলে মনে হবে।
পোড়ামাটির শিল্পকর্মের নিদর্শন দেখা যাবে নতুনপুকুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটিতে। আগ্রার বুদ্ধমন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে পোড়ামাটির ঝাড় ও দেবদেবীর বিভিন্ন মডেল। এখানে দুর্গাকে দেখা যাবে নটরাজের ভঙ্গিতে।
৫১তম বর্ষে রং-তুলিতে শিবের দক্ষযজ্ঞের নানা ছবি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে রথতলা স্পোর্টিং ক্লাবের আটচালা মণ্ডপ। ৫১তম বর্ষে দক্ষিণ ভারতের এক দুর্গামন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে কল্যাণকৃৎ সঙ্ঘ। মণ্ডপ ঘিরে থাকবে এক হাজার ঘণ্টা। মণ্ডপের গায়ে দেখা মিলবে বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিকৃতির।
সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে তামিলনাড়ুর মামাল্লাপুরমের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে সবুজ সঙ্ঘ। আলোর খেলায় মহাভারতের যুদ্ধের পাশাপাশি দেখা যাবে জাদুও।
দক্ষিণপাড়া সর্বজনীনে এ বার দক্ষিণ ভারতের এক মন্দিরের আদলে বেত, বাঁশ ও প্যারিস দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। থাকবে মানানসই মডেলও।
ন’পাড়া ওয়েলফেয়ার কমিটির এ বারের থিম, গ্রামীণ সভ্যতা। খড়ের ছাউনি দেওয়া মণ্ডপে থাকবে সাবেক প্রতিমা। আবার গুজরাতের রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বিজয়নগর স্পোর্টিং ক্লাবে। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে থার্মোকলের শিল্পকর্ম এবং মাটির বিভিন্ন মডেল। এখানে প্রতিমা দেখতে হবে প্রায় ২০ ফুট উপরে উঠে।
এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য বারাসতের দক্ষিণপাড়ার শঙ্করবংশীয় শিবের কোঠায় মোগল বধূর পুজো। দর্শক টানবে কালিকাপুর সর্বজনীন, পাইওনিয়ার, নন্দননগর, কালিকাপুর, শেঠপুকুর সর্বজনীন, যুবক সঙ্ঘ, মেঘদূতের মতো পুজোগুলিও।

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.