পুজোর বেড়ানো

সমুদ্র-পাড়ায় স্বাগত
পুজোর ছুটি মানেই বাঙালি মন বলে, ‘চল যাই’! শহুরে ভিড়ভাট্টা থেকে অনেক দূরে কোথাও।
অথচ, হাতে গোনা ক’টা দিনের ছুটির মধ্যে শহর ছেড়ে দূরে মানেই সারা বছরের মতো বাদ রয়ে যায় প্রতিমাদর্শন, অষ্টমীর অঞ্জলি, দশমীর দেবীবরণের আনন্দ। তাই মন চায় এমন কোথাও যেতে, যাতে সারা বছরের আনন্দের ঝুলিতে পুরে ফেলা যায় সব রকম স্বাদেরই নানা মুহূর্ত।
সব দিক রাখতে গিয়ে তাই কলকাতাবাসীর সর্বকালের পছন্দের তালিকায় রয়ে গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রসৈকত। শহর থেকে একটু দূরের এই ঝাউবন আর নোনাজলের ছুটিতে ধরে রাখা যায় শারদোৎসবের গন্ধও। হাতে মাত্র দু’-তিনটি দিন নিয়ে বেরিয়ে পড়লেই হল। বাদ দিতে হবে না কোনও আচার-অনুষ্ঠানই।
পুজোর শহরে যেমন চলছে মণ্ডপসজ্জা আর প্রতিমা গড়ার কাজ, তেমনই জোর কদমে প্রস্তুতি চলছে পূর্ব মেদিনীপুরের মন্দারমণি, তাজপুর, শঙ্করপুরের সমুদ্র-পাড়ায়। বাঙালি মেনু থেকে বিচ গেমস, হোটেল-রিসর্টগুলিতে চলছে এখন পুজোর নানা প্যাকেজ নিয়ে তোড়জোড়।
মন্দারমণির এক রিসর্টে যেমন পুজো উপলক্ষে রাখা হচ্ছে খাওয়াদাওয়া থেকে ছোটদের খেলার জন্য বিভিন্ন ধরনের আয়োজন। শান্ত সমুদ্রের ধারের এই রিসর্টের রেস্তোরাঁ রূপসী বাংলায় পুজোর দু’-একটা দিন কব্জি ডোবানো যায় কিছু বাঙালি স্বাদে-গন্ধে। শহরের পুজোর ভিড় ছেড়ে এসে শুধু সমুদ্রের পাড়ে বালি আর ঝিনুকে যদি মন না ভরে খুদেদের, তার জন্যও ব্যবস্থা থাকছে। মন্দারমণির রোজভ্যালি রিসর্টের ভিতরেই ছোটদের জন্য করা হয়েছে ওয়াটার পার্ক। সেখানে ওয়েভ পুল, ওয়াটার ফল আর ওয়াটার স্লাইডসে খুদেদের সঙ্গে দিব্যি আনন্দে মাততে পারেন বড়রাও। উৎসবের মরসুমে পর্যটকদের জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে এখন থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে পুজোর প্যাকেজ। কালীপুজোর মরসুম পর্যন্ত ওই রিসর্টে থাকা-খাওয়ার জন্য চার জনের পরিবারপিছু ছাড় মিলবে ২৫ শতাংশ। বড় দল হলে ছাড় পাওয়া যাচ্ছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।
ওই এলাকাতেই আর এক রিসর্টে পর্যটকদের মন কাড়তে আবার চলছে দুর্গাপুজোর আয়োজন। বেড়াতে গিয়ে যাতে বাদ না পড়ে যায় বাঙালির কোনও আচার, সে কথা মাথায় রেখেই রীতিমতো প্রতিমা এনে পাঁচ দিন ধরে পুজো হয় দেবরাজ রিসর্টের ভিতরেই। অতিথিদের জন্য থাকছে বিশেষ প্যাকেজে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও।
আর একটু এগোলেই শঙ্করপুরের সৈকত। এই বেলাভূমিও বেশ পরিচিত বাঙালি পর্যটকদের মধ্যে। পুজোর দিনগুলোয় একটু অন্য রকম আনন্দ দিতে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখছে এখানকার হোটেল নেস্ট। খাওয়াদাওয়া আর থাকার বিশেষ আয়োজনের পাশাপাশি পুজোর সন্ধ্যাগুলোয় রাখা হবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
এই অঞ্চলে তুলনামূলক ভাবে নতুন এবং স্বল্পপরিচিত জায়গা তাজপুরে থাকছে একটু অন্য ধাঁচের ছুটির মজা। সেখানকার নির্জন তটে নানা অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে মেতেই কাটিয়ে দেওয়া যায় উৎসবের চারটি দিন। প্যারাসেলিং থেকে বাঞ্জি জাম্পিং, কোস্টাল বাইকিং থেকে সি র্যাফটিং ব্যবস্থা থাকছে সবেরই। পুজো উপলক্ষে সেখানকার রিসর্ট তাজপুর রিট্রিটের তরফে কলকাতায় পর্যটকদের বাড়ির দরজা থেকে নিয়ে যাওয়া ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিশেষ আয়োজন থাকছে সঙ্গে।
বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় দিঘা অবশ্য এখনও অভ্যস্ত নয় পুজোর প্যাকেজে। তবে অতিজনপ্রিয় এই জায়গায় উৎসবের দিনগুলোয় পর্যটকদের সুবিধার জন্য কিছু হোটেল অনেক সময় থাকা-খাওয়ার দাম একসঙ্গে ধরে নেয়। এ কথা জানালেন দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী।
শরতের মেঘে মাখামাখি খোলা আকাশের নীচে রুপোলি সমুদ্রতটে বসে নিজের মনের মতো আয়োজন বেছে নিয়ে কাটুক না উৎসবের কয়েকটা দিন!




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.