কুকুর সামলান, বলল আদালত
বাঁচান ধর্মাবতার, ‘উৎপাতে’ উত্ত্যক্ত দাদার আর্তি
‘উৎপাত’-এর উৎপাত বন্ধ করতে তার মালিককে সতর্ক করল আদালত!
রায় শুনে অট্টহাসি হেসে ৬৬ বছরের দীপক রায় বলছেন, “এ বার বুঝবে বাছাধন, কত মাংসে কত হাড়!”
আর ৫৯ বছরের অচিন্ত্যবাবুর হুঙ্কার, “আমার ‘উৎপাত’কে তাড়ানোর ধান্দা? আমি ছাড়ব না। দরকার হলে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাব।”
যত কাণ্ড দুই ভাই আর এক পোষা নেড়িকে নিয়ে।
ফ্যাটফ্যাটে সাদার উপর হালকা বাদামি বুটিদার ভোলাভালা চেহারার নেড়ি কুকুর। ছোটবেলায় কামড়াকামড়ি করে উৎপাত করত বলে তার নামই হয়ে গেল ‘উৎপাত’। আদরের ডাক, ‘উতু’।
তিন বছর আগে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে পুষেছেন সেলিমপুরের অচিন্ত্যবাবু। খাওয়ান-দাওয়ান, বেড়াতে নিয়ে যান। মশারি টাঙিয়ে ঘুম পাড়ান। এ হেন ‘উতু’কে আদালতে টেনে নিয়ে গিয়েছেন অচিন্ত্যবাবুর মেজদা দীপকবাবু। একেই কুকুর-টুকুর তাঁর একেবারে না-পসন্দ। তার উপর ছোট ভাই নাকি তাঁকে পৈতৃক বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য পোষা কুকুর লেলিয়ে দিচ্ছেন! আলিপুর আদালতে মামলা ঠুকে দীপকবাবু বলেছেন, “হিংস্র কুকুর পুষে রেখেছে ভাই। সেই কুকুর কামড়ে রক্তারক্তি করেছে। বড় বড় ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে। অন্যদেরও কামড়াতে পারে। এর বিহিত হোক।”
বৃহস্পতিবার অচিন্ত্যবাবুকে কুকুর সামলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। উতুর উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে কসবা থানার পুলিশকেও। বাড়িতে যাতে এ নিয়ে অশান্তি না হয়, তা-ও দেখার জন্য ওসিকে বলেছে আদালত। অচিন্ত্যবাবু অবশ্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
অচিন্ত্যবাবু ব্যাঙ্কে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন কম্পিউটারের ব্যবসা করেন। সেলিমপুরের নস্করপাড়া লেনে পৈতৃক বাড়িতে থাকেন স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে। দীপকবাবু ইঞ্জিনিয়ার। তাঁরও নিজের ব্যবসা আছে। থাকেন কাঁকুলিয়া রোডে। মাঝে মাঝে সেলিমপুরের বাড়িতে যান। দুই ভাইয়ে বনিবনা নেই। পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা অনেক দিনের।
দীপকবাবুর অভিযোগ, সেলিমপুরের বাড়িতে তাঁর চারটি ঘর আছে। কিন্তু পুরো বাড়িটাই দখল করতে চাইছেন অচিন্ত্য। গেলেই নাকি কুকুর লেলিয়ে দেন।
উল্টো দিকে অচিন্ত্যবাবুর দাবি, বাড়িটা তাঁকেই লিখে দিয়েছেন তাঁদের মা। তা সত্ত্বেও বাড়িটি কব্জা করতে চাইছেন দাদা। উতু রয়েছে বলে যখন তখন বাড়িতে ঢোকা যাচ্ছে না। সেই কারণেই দাদার রাগ।
‘উৎপাতে’র কথা উঠতেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন দীপকবাবু, “পাজি কুকুর আমাকে দেখলেই কামড়াতে আসে। ১২ অগস্ট আমি সেলিমপুরের বাড়িতে যাই। সকালবেলা বাথরুমে যাব। দেখি ভাই বারান্দায় জিনিস ডাঁই করে রেখেছে। সরাতে বলতেই কুকুর লেলিয়ে দিল। কুকুরটা আমার ডান পায়ের কড়ে আঙুলে কামড়ে প্রায় মাংস বার করে দিল। এমন কুকুরকে জেলে দেওয়া উচিত।”
শুক্রবার সেলিমপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বিরসবদনে দোতলার বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছেন অচিন্ত্যবাবু আর উতু। অচিন্ত্যবাবুই জানালেন, রায় শোনার পর থেকেই তাঁর মন খারাপ। উতুরও মন ভাল নেই। উতু আপনার দাদাকে কামড়ে দিল কেন? তেলেবেগুনে জ্বলে অচিন্ত্যবাবু বলেন, “কে বলল কামড়েছে? শুধু গরগর করেছিল। দাদা উতুকে সহ্য করতে পারে না। দাদা এলে তাই উতুও ঘেউঘেউ করে।” ১২ অগস্ট কী হয়েছিল? অচিন্ত্যবাবু এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন, “সে দিন দাদা আমাকে মারছিল।
উতু তেড়ে গেল। দাদা দু’বার উতুকে লাথি মারল। তাতেই দরজায় লেগে পা কেটে গেল। দোষ হল বেচারা কুকুরের! উতু আমার ছেলের মতো। আমি এটা সহ্য করব না।” একটা ডিজিটাল ক্যামেরা বার করে উতুকে লাথি মারার ভিডিও ফুটেজও দেখিয়ে ফেললেন অচিন্ত্যবাবু। তার পর ‘দেখে নেব’ মার্কা হাসি হেসে ঘোষণা করলেন, “এই ফুটেজ নিয়ে আমি উচ্চ আদালতে যাব। প্রমাণ হয়ে যাবে, কে বেশি হিংস্র? দাদা না উতু?”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.