পুজোয় চাই ভাল একটা তাঁতের শাড়ি। সাধারণ বাঙালি মধ্যবিত্তের সেই আশাটুকুতেও এ বার ছাই। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শাড়ির অত্যধিক দাম। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভাল শাড়ি বাজেটে না পেয়ে কালনার অধিকাংশ মধ্যবিত্ত ক্রেতাই কম দামের শাড়ি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় ও ধাত্রীগ্রাম এলাকায় সারা বছর ধরে রমরমা ব্যবসা চলে তাঁতের শাড়ির। পুজোর মরসুমের জন্য তাঁতিরা কাপড় তৈরির কাজ শুরু করে দেন মাস ছ’য়েক আগে থেকেই।
ধাত্রীগ্রামে তৈরি শাড়ির দাম বেড়েছে গত বারের থেকে প্রায় দু’শো টাকা। ফলে তাঁতের শাড়ি বিক্রিও কমেছে। তাঁত ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ জানালেন, সমুদ্রগড় ও ধাত্রীগ্রামে এ বার তাঁতের শাড়ির দাম শুরু হয়েছে ৭০০ টাকা থেকে। দাম শুনেই অনেক ক্রেতা ‘কম্পিউটার’, ‘অ্যাপ্লিক’-এর মতো কম দামের তাঁতের শাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। দেদার বিকোচ্ছে পাওয়ার লুমে তৈরি শাড়িও। ফলে পুরনো ঘরানার তাঁতের শাড়ি আর ছুঁতে পারছেন না আম-জনতা। উচ্চ-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য অবশ্য মূল্যবৃদ্ধি সে ভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সিল্ক জামদানি, তসর জামদানি, আমকল্কা তাঁদের হাতে হাতে। |
তাঁতের শাড়ির অগ্নিমূল্যের কারণ হিসেবে তিনটি কারণের কথা জানিয়েছেন তাঁতিরা। প্রথমত, এখন সুতোর দাম কমলেও পুজোর শাড়ি তৈরির কাজ যখন শুরু হয়েছিল, সেই সময়ে সুতোর দাম ছিল চড়া। দ্বিতীয় কারণ, চাহিদা মতো শ্রমিক এলাকায় না থাকা এবং মজুরি বৃদ্ধি। তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি। এর জেরে বহু তাঁতঘরে জল ঢুকে যাওয়ায় অনেক শাড়ি তৈরি করাই যায়নি। সমুদ্রগড় এলাকার বধূ রেবতী মালিক বলেন, “পুজোয় প্রতি বছর বাড়ির জন্য দশটা তাঁতের শাড়ি কিনি। কিন্তু এ বার যা হাল, তাতে অত শাড়ি কিনতে গেলে দু’হাজার টাকা বাজেট বেড়ে যেত। তাই তিনটি তাঁতের শাড়ি ও অন্য কম দামি শাড়ি কিনেছি। এলাকার মন মাতানো শাড়ি আর এ বার সে ভাবে কেনা হল না।”
তাঁতের শাড়িতে মন না ভরলেও পুজোর বাজার ভালই জমে উঠেছে কালনা শহরে। কলেজ মার্কেট, চকবাজার-সহ বিভিন্ন বাজারে বিকেল হলেই ক্রেতাদের ঢল নামছে। কালনার বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে রেডিমেড পোশাক। ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রাউজারের মধ্যে সব থেকে বেশি চাহিদা রয়েছে কার্গো ও ন্যারো ফিটিং প্যান্ট। এ ছাড়া শর্ট শার্টের ভালই চাহিদা রয়েছে। যে সব জামায় এমব্রয়ডারির কাজ রয়েছে, ক্রেতারা সে গুলি বেশি পছন্দ করছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কালনার বেশির ভাগ গ্রামে অষ্টমীর দিন পরার জন্য ভালই বিক্রি হচ্ছে ধুতি-পাঞ্জাবি। ৪০০-৫০০ টাকা দামের সাদা পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে দেদার।
দামী তাঁত রইল দূরেই। মন ভরল না। কালনায় এ বার খানিকটা সস্তা দিয়েই বাজার সারলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলারা। পুজো আসার আনন্দে তাতে কিছু ভাটা পড়ল কি? |