দু’চোখের কর্নিয়ায় আলসার হয়েছে এক দিনমজুরের। দৃষ্টি কমতে কমতে বাঁ চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। ডান চোখে ঝাপসা দেখতে পাচ্ছিলেন। তাঁর বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করানোর কথা বলে ডান চোখের কর্নিয়াটি তুলে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার মালদহ শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ওই ঘটনা ঘটেছে। নার্সিংহোম সূত্রের খবর, রোগীর নাম দীপু দাস। তিনি হরিশ্চন্দ্রপুরের কুশিদার বাসিন্দা। দীপুবাবুর অভিযোগ, “আমি বাঁ চোখে কিছুই দেখি না। ডান চোখে ঝাপসা দেখতাম। ডাক্তার বাঁ চোখ অপারেশন করবে বলেছিলেন। পরে জানলাম ডান চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন কিছু দেখতে পাচ্ছি না। ঘরে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা রয়েছে। ওঁদের কী হবে! আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” নার্সিংহোমের কর্ণধার তথা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ধূর্জটিপ্রসাদ রায় স্বীকার করেছেন, ওই রোগীর বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করানোর জন্যই ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর দাবি “ওটিতে নিয়ে গিয়ে দেখি বাঁ চোখের থেকে ডান চোখের অবস্থা খারাপ। তখন রোগীকে বারবার বলেছি আপনার ডান চোখ তুলতে হবে। উনি তাতে রাজি হন। উনি বলেছিলেন, কিছু করুন, যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না।” এই ঘটনার কথা শুনেছেন মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন ঝরিয়াত। তিনি বলেছেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। চোখ তুলে ফেলার আগে বাড়ির লোক কিংবা পরিচিত কাউকে সব বুঝিয়ে বলে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। যিনি অনুমতি দেবেন তাঁদের মধ্যে অন্তত এক জনকে কিছুটা পড়াশোনা জানতে হবে। সেই সঙ্গে অস্ত্রোপচার করার আগে দ্বিতীয় কোনও চক্ষু বিশেষজ্ঞের মতও নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নেওয়া হবে। রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ব্যাপারে চিকিৎসক ধূর্জটিপ্রসাদবাবু বলেন, “ওই রোগীর পরিবারের যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা পড়াশোনা জানেন না। তাঁদের মধ্যে পড়াশোনা জানা কেউ নেই বলে ওঁরা জানিয়ে দেন। তাই তাঁরা টিপছাপ দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি, দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ হিসাবে অস্ত্রোপচার করার পক্ষে মত দিয়েছেন আমার স্ত্রী। যিনি নিজে চোখের ডাক্তার এবং নার্সিংহোমের অন্য এক চিকিৎসক। বিধিভঙ্গের কোনও প্রশ্নই নেই।” ওই দিনমজুরের স্ত্রী পপি দেবী বলেন, ‘ডাক্তারবাবুরা ভুল করে আমার স্বামীর বাঁ চোখের বদলে ডান চোখ তোলার পর আমাকে দিয়ে জোর করে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নেন। আমাদের না জানিয়ে কেন আমার স্বামীর ডান চোখ তোলা হল ডাক্তারবাবুর কাছে জানতে চাইলে কেউ কোনও উত্তর দিচ্ছেন না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।” |