|
|
|
|
অর্থই বাধা |
পুজোর আগে শ্রী ফিরছে না খন্দপথের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
সেতু তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেতু সংলগ্ন দু’দিকের রাস্তা (অ্যাপ্রোচ রোড) তৈরি হয়নি। ফলে চালু হচ্ছে না ডেবরা ব্লকের অন্তর্গত লোয়াদা সেতু। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির জন্য এখনও জমি অধিগ্রহণের কাজই শুরু হয়নি। কবে জমি অধিগ্রহণ হবে, কবেই বা তৈরি হবে সেতু সংযোগকারী রাস্তা, সেই প্রশ্নের সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্ট কারও কাছে। সব মিলিয়ে লোয়াদা ও আশপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদত্ত চৌধুরীর অবশ্য বক্তব্য, “সেতু সংলগ্ন রাস্তার কাজ দ্রুত শুরুর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” তবে জেলা প্রশাসনেরই একটি সূত্রে খবর, এখনই জমি অধিগ্রহণ শুরু করা সম্ভব নয়। কারণ, রাজ্যের নতুন সরকার জমির মতো ‘স্পর্শকাতর’ ব্যাপারে সাবধানে এগোতে চাইছে।
ডেবরা ব্লক হয়ে চলে গিয়েছে কাঁসাই নদী। লোয়াদায় এই নদীর উপরেই তৈরি হয়েছে সেতু। এখানে স্থায়ী সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের। সংলগ্ন দাসপুরের মানুষও নানা কাজে এই এলাকায় আসেন। নদী পেরিয়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নৌকোই ভরসা। স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, সেতু তৈরি হলে পরিস্থিতি পাল্টাবে। কিন্তু সেতু তৈরি হয়ে গেলেও সেই এক অবস্থা। নদী পারাপারের ক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের ভরসা সেই নৌকোই। নদীর এক দিকে লোয়াদা বাজার। অন্য দিকে মলিঘাটি, ত্রিলোচনপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। লোয়াদা বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে, লোয়াদা সেতু চালু হলে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। |
|
হবিবপুরের রাস্তার হাল।- নিজস্ব চিত্র। |
শহরের রাস্তার হাল এমনিতেই খারাপ। খন্দ-পথে নিত্য ভোগান্তি, দুর্ঘটনা মেদিনীপুরবাসীর গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বর্ষার পরে শহর জুড়েই হতশ্রী রাস্তাঘাট। শারদোৎসবের আগে হাল ফেরার তেমন আশা নেই। উপ-পুরপ্রধান এরশাদ আলির কথাই তার প্রমাণ। তিনি বলেন, “পুজোর আগে সব রাস্তা সংস্কারের মতো অর্থ নেই। তবে যেখানে বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ হয়, সেই এলাকার রাস্তাগুলি সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য কমপক্ষে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে পরিকল্পনা রিপোর্ট জমা দিয়েছি। টাকা পেলে তবেই কাজ করা সম্ভব হবে।”
কিছু দিন হল শহরের অলিতেগলিতে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাস্তা ঢালাই করে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা বরাদ্দ টাকায় এই কাজ করাচ্ছেন। কিন্তু ওয়ার্ডের ভেতরে বড় রাস্তা বা শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কেউ হাত দিচ্ছে না। কাউন্সিলরদের বক্তব্য, ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ টাকায় বড় রাস্তার কাজ করতে গেলে শহরের কোনও উন্নয়নই সম্ভব নয়। একটি বড় রাস্তাও সম্পূর্ণ মেরামত করা কঠিন। তাই ছোটখাটো গলিপথ, কালভার্ট, কিছু নিকাশি নালা পাকা করেই ওয়ার্ডের উন্নয়ন সারছেন কাউন্সিলররা। এতদিন তৃণমূল-কংগ্রেস পরিচালিত মেদিনীপুর পুরসভার বক্তব্য ছিল, রাজ্যের বাম সরকার উন্নয়ন খাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয় না। মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদকে পরিকল্পনা রিপোর্ট দিয়েও নাকি লাভ হয়নি। রাজ্যে পালাবদলের পরে এই অভিযোগের আর সুযোগ নেই। কারণ, রাজ্য সরকার থেকে পর্ষদ-পুরসভা সবই জোটের দখলে।
মেদিনীপুর শহরের নিকাশিও বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমে। এতে রাস্তার অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়। তৈরি হয় খানাখন্দ। রাজাবাজার, সিপাইবাজার, কোতবাজার, বার্জটাউন, জগন্নাথমন্দির, পাটনাবাজার, হাঁসপুকুর, নতুনবাজার, কর্নেলগোলা, কুইকোটা শহরের সর্বত্রই রাস্তার হাল খারাপ। সিপাইবাজারের বাসিন্দা শেখ সাবির আলি বলেন, “হাঁটাচলা করাই বিপদ। সাইকেল-মোটরসাইকেল উল্টে যে কোনও সময় বড় বিপদ হতে পারে। বৃষ্টি হলে তো বলারই নেই। শহরে থাকি বলে মনেই হয় না। তা সত্ত্বেও পুরসভা নীরব।” একই অভিযোগ, আর এক শহরবাসী গোপাল সাহার। তাঁর বক্তব্য, “একবার রিকশায় যাতায়াত করলেই বুঝতে পারবেন রাস্তার অবস্থা কেমন। ঝাঁকুনির চোটে মনে হবে বুঝি কোমর ভেঙে যাবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর মুখে রাজ্য সরকার কিছু টাকা দিলে জগন্নাথমন্দির, কোতবাজার, সিপাইবাজার, বিধাননগর-সহ কয়েকটি বড় মণ্ডপ-সংলগ্ন রাস্তার সংস্কার করা হবে। কিন্তু তার বাইরে থেকে যাবে শহরের বেশিরভাগ রাস্তা। অতএব শহরের খন্দপথে ভোগান্তির দৃশ্য আপাতত বদলাচ্ছে না। |
|
|
|
|
|