|
|
|
|
লোহালক্কড়ের নিলাম ঘিরেই মাফিয়া-রাজ বাড়ছে খড়্গপুরে |
সুমন ঘোষ • খড়্গপুর |
উস্কে উঠেছে মাফিয়া-রাজের পুরনো স্মৃতি। দিনেদুপুরে বাসব রামবাবুর ‘কনভয়’-এ হামলা, গুলির লড়াইয়ে রামবাবুর এক সঙ্গী ও নিরীহ এক পথচারীর জখম হওয়া প্রমাণ করে দিয়েছে ফের অন্ধকার জগতের দাপট বাড়ছে রেলশহরে। আতঙ্কিত শহরবাসী। আতঙ্কিত খোদ পুরপ্রধানও!
একটা সময় রেলের ঠিকাদারি আর লোহালক্কড়ের নিলাম ঘিরে খুন-জখমের হিড়িক পড়েছিল খড়্গপুরে। রামবাবুর পরিচিতি ছিল ‘ত্রাস’। সোমবারের ঘটনা প্রসঙ্গে খড়্গপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের জহরলাল পাল বলেন, “গোটা শহর আতঙ্কে ভুগছে। একটা সময় খড়্গপুর মাফিয়া-রাজ দেখেছে। আবার অন্ধকার দুনিয়ার কিছু লোক সেই রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। শারদোৎসবের মুখে এ যেন অশনি সঙ্কেত।” প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেসের কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডেও বলেন, “আবার মাফিয়ারা খড়্গপুরকে অশান্ত করতে চাইছে। তার সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে রাজনীতিও।” গৌতম চৌবে হত্যা মামলায় জামিন পেয়ে বছর খানেক হল খড়্গপুরে রয়েছেন রামবাবু। |
|
ধৃত বংশীকৃষ্ণা রাও। সৌমেশ্বর মণ্ডল |
ইতিমধ্যে তেমন কোনও গোলমালে নতুন করে তাঁর নাম জড়ায়নি। তবে সোমবারের পরে ফের সংবাদ শিরোনামে তিনি। ঘটনার পরেই ৫ জনের নামে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন রামবাবু। সোমবার রাতে তাদের এক জন বংশীকৃষ্ণ রাওকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে ৪ দিনের জন্য পুলিশ-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের দাবি, বংশীকৃষ্ণ আর এক ‘রেল-মাফিয়া’ শ্রীনু নায়ডুর লোক। শ্রীনু নিজে রেলকর্মী। পুলিশ সূত্রের খবর, শ্রীনু ছাড়াও শিবাজি রাও, বাগ্গা রাও এখন রামবাবুর শত্রু। একদা রামবাবুর ঘনিষ্ঠ বাগ্গা খড়্গপুর পুর-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন। আর শিবাজি তৃণমূল কাউন্সিলর।
তবে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না রামবাবু। তাঁর বক্তব্য, “কোনও দল আমার বিরুদ্ধে নয়। জেল থেকে বেরিয়ে এসে আমি নীরবে থাকতে চেয়েছি। কিন্তু আমি শহরে থাকায় কয়েকজন নেতার তোলাবাজি করতে আসুবিধে হচ্ছে। শ্রীনু নায়ডুকে সামনে রেখে তাঁরাই আমাকে খুনের চক্রান্ত করেছে।” রামবাবুর শত্রু হিসেবে যাঁদের নাম উঠে আসছে, সেই বাগ্গা রাও, শিবাজি রাওদের পাল্টা অভিযোগ, “আগে গোটা তেলুগু সমাজ ওঁর (রামবাবু) কথায় চলত। আমরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আমাদের কাছেও মানুষ আসছে। তা ছাড়া, খড়্গপুরে যাতে কেউ মাফিয়া-রাজ কায়েম করতে না পারে সে জন্য প্রতিবাদ করছি। তোলাবাজিতে অসুবিধে হওয়ায় রামবাবু আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।”
পুলিশ সূত্রের খবর, রেলের পুরনো লোহালক্কড়ের নিলাম ঘিরেই ফের দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে। খড়্গপুরে এমন লোহালক্কড়ের গুদাম রয়েছে দু’টি। একটি রেল ইয়ার্ডে, অন্যটি মথুরাকাটিতে। রেল ইয়ার্ডে রামবাবুর ‘আধিপত্য’ তেমন নেই। তবে মথুরাকাটি গুদামটি রামবাবুর ‘নিয়ন্ত্রণে’।
এলাকায় ঘুরলে শোনা যায়, রেল ইয়ার্ডের গুদাম থেকে পুরনো লোহালক্কড় বার করার জন্য মাফিয়াদের টন প্রতি ৩০০ টাকা এবং মথুরাকাটির ক্ষেত্রে টন প্রতি ৩৭০ টাকা ‘গুন্ডা ট্যাক্স’ দিতে হয় নিলামে ওই মাল কেনা ব্যবসায়ীকে। নিলাম ‘পাইয়ে দেওয়ার’ জন্য মাফিয়াকে লাভের ৫-৭ শতাংশ কমিশন দেওয়ার ‘প্রথা’ও রয়েছে। তবে মাফিয়াদের ভয়ে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করার রাস্তায় হাঁটতে চান না কেউই।
পুলিশ সূত্রে খবর, রেলের পুরনো লোহালক্কড়ের নিলাম ঘিরে কার ‘আধিপত্য’ থাকবে, তা নিয়েই শ্রীনুর সঙ্গে বিরোধ বাধে রামবাবুর। মাস তিনেক আগে লোহার নিলামের সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে ডেকে বৈঠক করেছিলেন খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, কেউ ‘দাদাগিরি’ করলে যেন তা পুলিশকে জানানো হয়। তার পরেও ছোটখাট গোলমাল হচ্ছিলই। কয়েকজনকে ধরা হয়। কিন্তু তাতে যে সমাজবিরোধীরা দমে যায়নি, সোমবারের ঘটনাই তার প্রমাণ। |
|
|
|
|
|