সম্পাদক সমীপেষু...
কেমন ছিল প্রেসিডেন্সি
১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত আমি প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলাম। এই কলেজের ছাত্রজীবন ভোলার নয়। বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছে। লেখাও বেরোচ্ছে। খুব সংক্ষেপে আমাদের সময়ের প্রেসিডেন্সি, যা দেশ-বিদেশের সম্মান পেত, তখনকার কথা বলছি। হয়তো প্রেসিডেন্সি নিয়ে যাঁরা ভাবছেন, চিন্তা করছেন, তাঁদের কাজে দিতে পারে। বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম, মনে পড়ে রসায়ন বিভাগের এক বিখ্যাত শিক্ষক প্রায়ই বলতেন “কোনও প্রতিযোগিতায় যদি আমার ছাত্রছাত্রী ব্যর্থ হয় তা হলে সেটা আমি আমার ব্যর্থতা বলে মনে করি।” আমরা তাঁর প্রাত্যহিক জীবনধারা থেকে বুঝেছিলাম যে এটা তাঁর অন্তরের কথা। শিক্ষকই শিক্ষার প্রধান বাহন। যা বর্তমান সময়ে প্রায় যেতে বসেছে। যে শিক্ষকের কথা বললাম তাঁর জীবনটা কেটেছে ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব বহন করে। আর এখন বিদেশ ফেরা, বহু গবেষণা করা, গর্বিত যুবকদের সচরাচরই দেখছি শিক্ষা দেওয়া বা ছাত্রছাত্রীদের সম্বন্ধে দায়িত্ব বোধ করা শুধু গৌণ নয়, তুচ্ছ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের নিজের কেরিয়ার তৈরি করাটাই তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে ধরে নিচ্ছেন। হয়তো সবাই তাই নয়। সেই সময়ের আরেক বিখ্যাত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকের কথা মনে আছে। যাঁর ক্লাস করতে পাশের মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তার হওয়ার ছাত্রছাত্রীরা আসত।
এত সুন্দর উনি পড়াতেন। তিনি বেকার ল্যাবেরটরির বারান্দায় কোনও কাগজের টুকরো পড়ে থাকলে কুড়িয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতেন। একদিন দেখলেন যে সেটা দেখে আমি দাঁড়িয়ে গেছি। হেসে বলেছিলেন, “পরিবেশ পরিচ্ছন্ন না হলে শিক্ষার মান বাড়ে না”। প্রেসিডেন্সি কলেজে গত বছর একটি কমিটির সদস্য হিসাবে গিয়েছিলাম। দেখলাম, বেকার ল্যাবেরটরির সিঁড়ির প্রত্যেকটি ধাপে ধুলো ময়লা জমে আছে। বয়স্ক লোক সিঁড়ি দিয়ে উঠছে দেখতে পেয়েও ছাত্রছাত্রীরা সরে জায়গা দিচ্ছে না। যে ঘরে সভাটি চলছে তার বাইরে ছাত্রছাত্রীরা এত জোরে কথা বলছে যে অনেক কথাই ভাল করে শোনা যাচ্ছে না। এই হচ্ছে এখনকার প্রেসিডেন্সির পরিবেশ। দুঃখ হল, মনে হল এই সেই কলেজ যেখানে শিক্ষকরা সিঁড়িতে উঠছে দেখলে আমরা শ্রদ্ধায় সরে দাঁড়াতাম। তাঁরাও হেসে বলতেন, ঠিক আছে, ঠিক আছে।
রবি ঠাকুরের ভাদ্রের গান
উত্সব ক্রোড়পত্রে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (২৭-৮) লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ অজস্র বর্ষার গান লিখেছেন। আষাঢ় ও শ্রাবণের উল্লেখ অজস্র, তার পরই ভাদ্রকে টপকে চলে গেছেন আশ্বিনে”। তিনি একটি মাত্র গান মনে করতে পেরেছেন, যাতে ভাদ্রের উল্লেখ রয়েছে। ‘আজ বারি ঝরে ঝরঝর ভরা ভাদরে’। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই গানের প্রথম পঙ্ক্তিতে ‘ভাদরে’ নেই, আছে ‘বাদরে’। ‘ভাদরে’ আছে গানটির শেষ দিকে, ‘হৃদয় মাঝে জাগল পাগল আজি ভাদরে।’ এ ছাড়াও ভাদ্র মাসের উল্লেখ আছে, এমন বর্ষার গানগুলি হল‘ঝরে ঝরঝর ভাদর-বাদর’, ‘রিমিকি ঝিমিকি ঝরে ভাদরের ধারা’ ওবং ‘বাদল ধারা হল সারা’। শেষোক্ত গানের অন্তরায় আছে, ‘ছাড়ল খেয়া ও পার হতে ভাদ্রদিনের ভরা স্রোতে।’
ট্রেনের ঘোষণা
হাওড়া, শিয়ালদহ, খড়্গপুর, আসানসোল পশ্চিমবঙ্গেরই স্টেশন। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রীর অধিকাংশই বাঙালি। সংবিধানগত ভাবেও রাজ্যের ভাষাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। অথচ এই স্টেশনগুলিতে ট্রেনের আসা-যাওয়ার সময় ঘোষণা করা হয় প্রথম ইংরেজিতে। তার পর হিন্দিতে এবং শেষে বাংলায়। কেন? পশ্চিমবঙ্গেও বাঙালিরা কি তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক? বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, রেলের অফিসগুলির গায়ে লাগানো সাইনবোর্ডগুলি থেকে বাংলা মুছে গিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার স্টেশনগুলির নতুন চাকতিতে উঁচু থেকে একবারে নীচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাকে। সেখানে ইংরেজি সবার উপরে, হিন্দি রয়েছে মধ্যমণির মতো। রেলের টিকিটে ইংরেজ আমলেও বাংলা ছিল। স্বাধীন ভারতেও ছিল অথচ বর্তমানে নেই। বাংলায় ‘শুভযাত্রা’ লেখাটাও তুলে দিয়ে হিন্দিতে লেখা রয়েছে। হাজার বার খুঁজেও বাংলায় ছাপা রেলের সময় সারণি (টাইম টেবিল) পাওয়া যায় না কেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.