সম্পাদকীয় ১...
চাকুরির সন্ধানে
মার্কিন অর্থনীতির রক্তশূন্যতা এখন প্রশ্নাতীত। সরকারি হিসাবে, যত মানুষ চাকুরি করিতে ইচ্ছুক, তাহার নয় শতাংশেরও বেশি চাকুরি পান নাই, বা হারাইয়াছেন। অনেকেরই মতে, প্রকৃত হার আরও বেশি, এমনকী দ্বিগুণও হইতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন বেকারত্বই বৃহত্তম সমস্যা। সমস্যাটি যে বাস্তব, এবং তাহার যে আশু সমাধান প্রয়োজন, তাহা লইয়া শাসক এবং বিরোধী পক্ষের কোনও মতবিরোধ নাই। সমাধানের পথ কোনটি, তর্ক তাহা লইয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেন ওবামা সম্প্রতি ‘অ্যামেরিকান জবস অ্যাক্ট’ নামক একটি আইনের রূপরেখা পেশ করিলেন। তাহার মূল বক্তব্য, সরকার দেশে কর্মসংস্থান বাড়াইতে বিভিন্ন উদ্যোগ করিবে। তাহার মধ্যে সড়ক, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ যেমন আছে, তেমনই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে কর ছাড়, চাকুরিজীবীদের আয়করে ছাড় ইত্যাদিও রহিয়াছে। এই প্রকল্পে মোট ৪৪,৭০০ কোটি ডলার ব্যয় করা হইবে। অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট ওবামা লর্ড কেইনস-এর পথে হাঁটিতে চাহেন। ২০০৮ সালের মহামন্দার পর এই পথে পথিকের সংখ্যা প্রচুর। বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি প্রেসিডেন্টের এই প্রকল্পটিকে পত্রপাঠ নস্যাৎ করিয়া দিয়াছে। তাহাদের মতে, আইনটি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করিবার জন্য নহে, ২০১২ সালে ওবামার পক্ষে ভোট বাড়াইবার জন্য রচিত হইতেছে। রিপাবলিকান পার্টির দাবি, সরকার নিজের পরিধি গুটাইয়া লউক, খরচ কমাক, করের পরিমাণ হ্রাস করুক। অর্থনীতি তাহার নিজস্ব নিয়মেই কর্মসংস্থান বাড়াইবে। অতি-উৎসাহী সরকার দেশের সমস্যা বাড়াইতেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসক ও বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে যে মতানৈক্য, তাহা নূতন নহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্বও নহে। ইহা অর্থনীতির দুইটি ভিন্ন দর্শনের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। অর্থনীতিতে সরকারের যথার্থ ভূমিকা কী, তাহা লইয়া দ্বন্দ্ব। যত দিন কমিউনিজম জীবিত ছিল, এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র ছিল। এখন বাজারকে অস্বীকার করিবার কথা কেহ ভাবেন না, কিন্তু সরকার বাজারকে কত দূর প্রভাবিত করিতে পারে, তাহা তর্কের বিষয়। ওবামা যেমন বলিয়াছেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কাজটি শেষ পর্যন্ত বাজারই করিবে। তিনি শুধু বাজারকে সেই পথে চালনা করিতে চাহেন। রাজকোষ হইতে ব্যয় করিয়া বাজারে গতিজাড্য সৃষ্টি করিবার প্রচেষ্টাটি যে কার্যকর হইতে পারে, তাহা প্রমাণিত। কিন্তু, সেই পথে কত দূর হাঁটা বিধেয়, তাহাই প্রশ্ন। কারণ, এই পথে যত দূর যাওয়া যায়, রাজকোষের উপরও ততই চাপ বাড়ে। রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ বাড়িতে দিতে রিপাবলিকানদের আপত্তি। অগস্ট মাসের গোড়ায় সেই আপত্তি তাঁহারা প্রবল ভাবে জাহির করিয়াছিলেন। আপত্তিটি অমূলক নহে। কাজেই, বাজারকে উৎসাহ দেওয়া এবং রাজকোষ ঘাটতির লাগাম ধরিয়া রাখা এই দুইটির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখাই মূল। কী ভাবে অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থসংস্থান হইবে, তাহার একটি উত্তর প্রেসিডেন্ট ওবামার নিকট আছে। তিনি ইঙ্গিত দিয়াছেন, ধনীতম শ্রেণির প্রদত্ত করের হার বৃদ্ধি করা হইবে। রিপাবলিকানদের তাহাতেও তীব্র আপত্তি। অর্থনৈতিক সমতার কথা ভাবিলে ধনীর নিকট হইতে অতিরিক্ত কর আদায় করিয়া সেই অর্থ দরিদ্রের কল্যাণে ব্যয় করিবার যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে। কিন্তু, যে বিপুল খরচের কথা প্রেসিডেন্ট ভাবিয়াছেন, সেই অর্থ যদি করের মাধ্যমে তুলিতে হয়, তবে তাহা ধনীর অর্থোপার্জনের বাসনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিতে পারে। অর্থনীতিতে তাহার প্রতিক্রিয়া ভাল হইবে না। অনুমান করা চলে, সরকারের আয় বৃদ্ধির ভিন্নতর পথ ওবামা প্রশাসনের সম্মুখে এখনই নাই। কাজেই, বেহাল রাজকোষের উপর ভরসা করিয়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রকল্পটিকে কত দূর অগ্রসর করা যায়, তাহা ভাবিতে হইবে বইকি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.