প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের বিরোধী দলনেত্রী খালেদা জিয়া বার্তা দিলেন, তাঁরা কখনওই ভারত-বিরোধী নন।
ঘটনাচক্রে আজই দিল্লির হাইকোর্ট চত্বরে বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সন্দেহভাজন হুজি জঙ্গিরা। আর এর আগের খালেদা জিয়ার আমলে এই জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্তের অভিযোগ বরাবর করে এসেছে দিল্লি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রীর আজকের এই বার্তা কিন্তু বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছে। কারণ দৃষ্টিভঙ্গি বদলের ইঙ্গিত মিলছে বেগম জিয়ার দল বিএনপি-র দিক থেকে। |
গত কালই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের চলতি বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিএনপি-নেতৃত্ব আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু বৈঠকের পরেও তিস্তা চুক্তি কেন হল না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিএনপি নেতারা। তাঁরা জানান, পুরো বিষয়টি জেনে তবেই মন্তব্য করা হবে। কোনও সন্দেহ নেই যে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য সরকারের কড়া সমালোচনা করবে বিএনপি। ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনা-সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। দিন কয়েক আগে বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি একেবারে নিশ্চিত করে বলে দিয়েছিলেন, মনমোহনের সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছেই। তার পরেও চুক্তির রূপায়ণ কেন হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু এতদ্সত্বেও বিএনপি মনমোহন-সরকারের সরাসরি সমালোচনা করতে চাইছে না। উল্টে মনমোহনের এই সফরে যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি হয়েছে এবং ভারত যে বাংলাদেশ থেকে ৪৬টি বস্ত্র সামগ্রী শুল্কমুক্ত আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। বিরোধী নেত্রীর বক্তব্য, আমদানির ক্ষেত্রে আরও ছাড় দেওয়া দরকার, যাতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সব রকম বস্ত্রই ভারতে রফতানি করতে পারেন।
কৃটনীতিকদের অভিমত, সব মিলিয়ে ভারতের বিষয়ে মনোভাব বদলাচ্ছে বিএনপি। বেগম জিয়া বুঝতে পারছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ভারত যে আর্থিক সমৃদ্ধির জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যে ভাবে আমেরিকা-ইউরোপে মন্দা সত্ত্বেও ভারত আর্থিক বৃদ্ধির উঁচু হার অনেকটাই ধরে রাখতে পেরেছে, তার পরে তাদের অগ্রাহ্য করে চলা কঠিন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভারত আগের ‘দাদাগিরি’র মনোভাব ছেড়ে ঢাকাকে ন্যায্য গুরুত্ব দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার পক্ষেও কৌশলগত ভাবে ভারত-বিরোধিতা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। |
খালেদা তাই বার্তা দিয়েছেন, ঘরোয়া রাজনীতিতেও বিএনপি রণকৌশল বদলাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় স্তরে বিএনপি ও আওয়ামি লিগ এক সঙ্গে ছোট ছোট জনসভা করছে। সেখানে এলাকার নিরাপত্তা বা স্থানীয় সমস্যার বিষয়গুলি উঠে আসছে। বাংলাদেশের মননেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির মতো নতুন নতুন দিক খুলে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম এ দেশেও ভারতের মতো অর্থনৈতিক উন্নতি চাইছে। কাজেই বিএনপি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ফের ক্ষমতায় এলেও ভারতকে দরকার পড়বে। পাকিস্তানের পক্ষে রাজনীতি করে বিএনপি, এই তকমাটাও আর খালেদা জিয়া রাখতে চাইছেন না। তার কারণ, এর ফলে তাঁরা বাঙালি জাতিসত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। তাই আজ খালেদা মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের বার্তাই দিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ এর আগে জুলাই মাসে ঢাকায় এসে বিএনপি-র কার্যালয়ে গিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শেখ হাসিনাও দিল্লি সফরে গিয়ে লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। মনমোহনের সফরে ভারত বোঝাতে চাইছে, গণতন্ত্রে বিরোধীদেরও গুরুত্ব পাওয়া উচিত। গণতন্ত্র অটুট থাকলে কট্টর মৌলবাদ আর সন্ত্রাসবাদ সেই পরিসর নিতে পারবে না। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র অটুট থাকুক, সেটাই তো ভারতের কাম্য।
|