উত্তরের চিঠি

রাধিকাপুরে আজও সেতু হল না
স্বাধীনতার চৌষট্টি বছর পরেও উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের শেষ রেল-স্টেশন রাধিকাপুরে জেলার বড় নদী টাঙ্গনের ওপর আজ পর্যন্ত একটি সেতুর সমস্যা সমাধানে কি কেন্দ্রীয় সরকার অথবা রাজ্য সরকার কেউ এগিয়ে এল না। ফলে, রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ত্রিশ হাজারের ওপর বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে টাঙ্গন নদী পেরিয়ে কালিয়াগঞ্জ শহরে আসতে হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এত দিন ধরে একমাত্র রেলের সেতুর ওপর দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অত বড় রেলের সেতু পার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় অসুস্থ রোগীদের রাত বে-রাতে।
টাঙ্গন রেলব্রিজের উপর দিয়ে নিত্য দিনের বিপজ্জনক যাত্রা। ছবি: তরুণ দেবনাথ।
কালিয়াগঞ্জ থেকে রাধিকাপুরে যেতে হলে সরাসরি ট্রেনই একমাত্র ভরসা। কিন্তু ট্রেন ছাড়া বাস বা ট্রেকারে যেতে হলে টাঙ্গন নদীর ব্রিজের আগে রামপুরঘাট পর্যন্ত গিয়ে বাস বা ট্রেকার-যাত্রীদের নেমে রেল-সেতু পার হয়ে তবেই রাধিকাপুর পৌঁছনো সম্ভব। রাধিকাপুরের মানুষ রাধিকাপুরের মাটিতে আজ পর্যন্ত অর্থাৎ স্বাধীনতার ৬৪ বছরেও কোনও বাস, ট্যাক্সি বা ট্রেকার দেখতে পায়নি শুধু একটি সেতুর অভাবে। উত্তর দিনাজপুর জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রান্তিক স্টেশন রাধিকাপুর থেকে দিল্লি গরিব নওয়াজ এক্সপ্রেস, রাধিকাপুর-কলকাতা (চিৎপুর) এবং রেল বাজেটে এ বার রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ডি এম ইউ ট্রেন যাতায়াত করে এবং করবে। এই সমস্ত ট্রেনের যাত্রীদের ট্রেন ধরার জন্য রেল-সেতুর ওপর দিয়ে আসার সময় কত বড় ঝুঁকি নিয়ে যে আসতে হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন। এ বিষয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি থেকে রাজ্যের মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরি, শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়, আনোয়ারুল হক, নারায়ণ বিশ্বাস, পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কেউ কথা রাখেননি। অথচ, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী-মন্ত্রী সবাই ভোটের সময় এলেই বার-বার প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। ভোট চলে গেলেই সব প্রতিশ্রুতি যেন নিমেষেই হারিয়ে যায়। উত্তর দিনাজপুর জেলার জেলা সভাধিপতিকে টাঙ্গন নদীর ওপর একটি সেতুর ব্যবস্থা করে হাজার হাজার মানুষের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য অনেকবার আবেদন ও অনুরোধ করা হয়। সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার বলেছিলেন যে, তিনি নিজে পরিদর্শন করবেন তাঁর বাস্তুকারদের সঙ্গে নিয়ে। বলেছিলেন, যথাসম্ভব চেষ্টা করে সেতু তৈরির ব্যবস্থা করব। কিন্তু সবাই যেন ‘কাগুজে বাঘ’। এলাকার হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে এ বার তাই একটাই সুর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সেতু তৈরি হওয়ার পরেই ভোট। কোনও রাজনৈতিক নেতার ভোটের মিটিং-মিছিল আর তাঁরা কোনও ভাবেই করতে দেবেন না। এক কথায় তাঁরা দীর্ঘ ৬৪ বছর ধরে অনেক প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর যখন দেখেছেন কেউই তাঁদের সমস্যার সমাধানে আসেননি, তাই তাঁদেরও রাধিকাপুরের ত্রিশ হাজার মানুষের ভোট থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে এ বার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামবাসীরা। সত্যিই তো, যে দেশের নেতারা তাঁদের পদাধিকারে প্লেনে ও রেলে বিনা পয়সায় যাতায়াত করেন, মাসের বেতন ছাড়াও সংসদে এলাকার উন্নয়নে কোনও কথা না বললেও দিন-হাজিরা দুই হাজার টাকা, বিনা পয়সায় বাড়ি-গাড়ি ও অন্যান্য অজস্র সুযোগসুবিধা পান তাঁরা আমাদের অশিক্ষিত গ্রামবাসীদের কথা কোন দুঃখে বলতে যাবেন বা আমাদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবেন? আজ গ্রামবাসীরা বিধায়ক, মন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতির ফাঁকা আওয়াজ আর শুনতে রাজি নন। তাই ভোট আসুক আর যা-ই আসুক, রাধিকাপুরের টাঙ্গন নদীর ওপর সেতু হওয়ার পরেই গ্রামবাসীরা আবার ভোট দেবেন।
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.