এম আর বাঙুর
ওয়ার্ডে রোগীদের মাঝেই ২১ ঘণ্টা পড়ে দু’টি দেহ
দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। এক জনের শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটেয়, অন্য জনের রাত ৮টায়। কিন্তু হাসপাতালের শয্যা থেকে দু’টি দেহ সরানো হল ২১ ঘণ্টা পরে, রবিবার দুপুর ১২টায়। মাঝের এই দীর্ঘ সময়ে ওয়ার্ডের অন্য রোগীরা বাধ্য হলেন মৃতদেহ পাশে নিয়ে শুয়ে থাকতে। কোনও গণ্ডগ্রাম নয়, এই ঘটনা খাস কলকাতা শহরের এম আর বাঙুর হাসপাতালের। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখতে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য কাগজে-কলমে একটা তদন্ত কমিটি গড়েছেন। পাশাপাশি, তাঁরা এটাও বলেছেন, হাসপাতালে কোনও ডোম নেই। এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ওয়ার্ড থেকে দেহ মর্গে পাঠানোর কাজটা করেন। রাত ১২টার মধ্যে কারও মৃত্যু হলে দেহটি মর্গে পাঠানো হয়। কিন্তু তার পরে মৃত্যু হলে সারা রাত দেহ ওয়ার্ডেই পড়ে থাকে।
সারা রাত মৃতদেহের পাশে শুয়ে থেকে বহু রোগীই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সহ্য করতে না-পেরে কয়েক জন রোগী ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরের বারান্দায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “সাধারণত মৃত্যুর তিন-চার ঘণ্টা পরে ডেথ সার্টিফিকেট লেখা হয়। প্রথম জনের ক্ষেত্রে সে সব হতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় জন মারা যান আরও কয়েক ঘণ্টা পরে। তখন আর এই কাজের জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পাওয়া যায়নি।”
ওই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের অভিযোগ, রাতে দু’টি মৃতদেহ একই শয্যায় পাশাপাশি শুইয়ে রাখা হয়েছিল। মাঝরাত থেকে দেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। ওয়ার্ড-মাস্টার ও কর্তব্যরত নার্সদের একাধিক বার জানানো সত্ত্বেও কোনও প্রতিকার হয়নি। বাধ্য হয়ে ওই শয্যার পাশের কয়েক জন রোগী ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় মাটিতে কাপড় বিছিয়ে শুয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে এক জন রোগীর স্যালাইন চলছিল। তিনিও সব ছেড়ে বারান্দায় চলে যান।
কয়েক জন রোগীর পরিজনেরা কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে একাধিক বার বিষয়টি জানানোর পরেও কোনও প্রতিকার হয়নি বলে অভিযোগ। ওই পরিজনদের বক্তব্য: মৃতদেহ মর্গে পাঠানো তাঁদের দায়িত্ব নয় জানিয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
শনিবার টালিগঞ্জ পেট্রোল পাম্পের কাছে বেসরকারি বাসের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন কল্যাণ চক্রবর্তী (২১) ও রাহুল কুণ্ডু (২০) নামে দুই মোটরসাইকেল-আরোহী। তাঁদের ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দু’জনেরই মাথায় গুরুতর চোট ছিল বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, কল্যাণের চিকিৎসা হয়েছিল ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ নম্বর শয্যায়। হাসপাতালে আনার আধ ঘণ্টা পরেই তিনি মারা যান। রাহুলকে একটা ট্রলির উপরে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছিল। সন্ধ্যার পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। রাত আটটা নাগাদ মৃত্যু হলে রাহুলের দেহটি ট্রলি থেকে নামিয়ে এনে কল্যাণের মৃতদেহের পাশে শুইয়ে রাখা হয়।
রাহুলের আত্মীয় উত্তম কণ্ডু বলেন, “আমরা রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এসে দেখি, দেহ দু’টি বেডে পড়ে আছে। তার পরে পুলিশ এসে দেহ দু’টি হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।” কল্যাণের জেঠু স্বপন চক্রবর্তী বলেন, “শনিবার বিকেলে আমার ভাইপো মারা যাওয়ার পরে পুলিশ আমাদের রিজেন্ট পার্ক থানায় নিয়ে যায়। সেখানে কাগজপত্র সই করে বাড়ি ফিরে যাই। সকালে এসে দেখি, দেহ শয্যাতেই পড়ে রয়েছে। এমন যে হতে পারে, সেটা বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে।” কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মৃতদেহ ওয়ার্ড থেকে মর্গে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তাতে পুলিশের কোনও হাত নেই।”
হাসপাতালে তিনতলার চার নম্বর ওয়ার্ড থেকে মর্গের দূরত্ব সামান্য। লিফ্টে মৃতদেহ নামিয়ে কয়েক পা এগোলেই মর্গ। তা-ও কেন মৃতদেহ সরানো হল না? দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী বলেন, “সেই প্রশ্ন আমাদেরও। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত-কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সংশ্লিষ্ট সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে বুধবারের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। তার ভিত্তিতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.