আমাদের চিঠি

নিখিল এখনও লড়তে চান
হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার নিখিল দত্ত। খর্বকায় এই মানুষটি প্রকৃতির খামখেয়ালের পরোয়া না করে বত্রিশটা বছর সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছেন টালিগঞ্জ স্টুডিয়োপাড়ায়। সারা বাংলার রস-পিপাসু সিনেমাপ্রেমী মানুষের চোখে করুণায় নয়, ক্যারিশমায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলা ছবির একনিষ্ঠ দর্শকরা একবার মনে করে দেখুন ‘বন পলাশীর পদাবলী’-র সেই বাসের ‘হেল্পার’ কিংবা ‘সন্ন্যাসী রাজা’র লাঠিয়ালকে। মনে পড়ে উত্তমকুমারের গোঁফ কামাতে গিয়ে এক দিকে চেঁছে ছেড়ে দেওয়া, ‘আনন্দমেলা’-র বেভুলো নাপিতকে? মনে আসে কি ‘নহবত’ থিয়েটারের সেই খুদে ফোটোগ্রাফারটিকে? যাকে প্রতিটি স্ন্যাপ নেওয়ার জন্য উঠতে হচ্ছিল কাঠের চেয়ারে? এ ভাবেই ‘অঙ্গার’ ‘অর্পণ’ ‘রক্তঋ ণ’ ‘সজারুর কাঁটা’ এ রকম অজস্র বাংলা ফিল্মের বেঁটেখাটো কমেডিয়ানটিকে আমরা মহানগরের মঞ্চসফল বহু নাটকেও পেয়েছি একজন পেশাদার কমেডিয়ান হিসেবে। ‘চৌরঙ্গি’ ‘আসামি হাজির’ ‘পরস্ত্রী’ ‘নাগপাশ’ ‘কাকের বাসা’ ‘শেষ থেকে শুরু’-র মতো অসংখ্য দর্শক-ধন্য নাটকে হাসির অ্যাকটিং করে এই নটটিই এক সময় সত্তর-আশি এবং নব্বই-এর দশকে পেটে খিল ধরিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে তাঁর অভিনয় প্রতিভার উজ্জ্বল উৎকর্ষ।
চলচ্চিত্র-নাটক-যাত্রাপাড়ার কমেডিয়ান গুরুতর অসুস্থ। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়
নিখিলবাবু ঘুরে এসেছেন ‘কল্পতরু’ নাট্যগোষ্ঠীর সহযোগে আমেরিকাতেও। মনোরঞ্জন করে এসেছেন প্রবাসী ভারতীয় তথা বাঙালি নাট্য-বোদ্ধাদের। ‘লড়াই’, স্রেফ এই তিনটি বর্ণের শব্দটি যাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, সেই শিল্পীকে দেখে খোদ উত্তমকুমারও পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন: ‘লড়ে যা নিখিল, হারিয়ে দে তোর হাইটকে’, সেই লড়াকু রসিক নিখিলের এখন লড়াই ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও আর নেই। একদা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পালিত পুত্র’ হিসেবে টলিউডে পরিচিত এই মানুষটি যাত্রাপাড়াতেও রেখেছেন তাঁর অভিনয়ের অভিঘাত। ‘মানুষ মানুষের জন্য’, ‘মা হওয়া কি মুখের কথা’ ছাড়াও টিভি সিরিয়াল করেছেন মুনমুন সেনের ‘আয়না বুড়োর গল্প’-এর লিড রোল-এ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত হিন্দি টেলিফিল্ম ‘বাঘ বাহাদুর’-এ পবন মলহোত্রর সঙ্গে অন্য রকম ‘শেড’-এ অভিনয়ও করেছেন চুটিয়ে। বাংলা থেকে মাত্র তিন জন আমন্ত্রিত শিল্পীর এক জন ছিলেন তিনি সেই ছবিতে। রবিন মজুমদার, বিকাশ রায়, পাহাড়ী সান্যাল, উৎপল দত্তের কাছ থেকে তন্নিষ্ঠ শিক্ষার্থীর মতো গ্রহণ করেছেন অভিনয়ের পাঠ, তেমনই পরবর্তী প্রজন্মের চিরঞ্জিত, প্রসেনজিৎ, সন্তু মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি আয়ত্ত করেছেন অভিনয়-শিল্পের খুঁটিনাটি। শ্রেষ্ঠ মঞ্চাভিনেতা হিসেবে সুচিত্রা সেনের হাত থেকে ওঁর পুরস্কার নেওয়ার দৃশ্যটি মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয় তাঁর স্বজন-কুশীলবদের।
এক সময়ে লক্ষ লক্ষ দর্শকের মুখে হাসি ফোটানো নিখিলদা বর্তমানে প্রায় চলৎশক্তিহীন অবস্থায় জীবনধারণ করছেন উলুবেড়িয়ার লকগেটপাড়ার খালপাড়ের বাড়িটিতে। টেনে নিয়ে চলেছেন নিজেকে, স্ত্রী আর একমাত্র নন্দনকে। স্পাইনাল কর্ডের একটা বড় অপারেশনের পর থেকেই ধীরে ধীরে এই অবস্থা হয়ে পড়েছে তাঁর। যাঁর প্রতি মাসে ওষুধ-খরচই প্রায় পাঁচ হাজার টাকার মতো, তাঁর হাতে ‘শিল্পী সংসদ’-এর মাসকাবারি ১০০০ টাকা ছাড়া আর কোনও সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য পৌঁছয়নি। আসেনি কোনও নাটকের দল, যাত্রা প্রতিষ্ঠানেরও অনুভবী অনুদান। শরীরের নিম্নাংশ অসাড় হয়ে আসায় তাঁর দৈনন্দিন জীবনযাপনও আবর্তিত হচ্ছে হুইলচেয়ার-এর করুণ আবর্তে। তিনি বলেন, ‘বুড়োদা আমার জন্য অনেক করেছেন। সত্যবাবু তো আমাকে পিতার মতো সাহায্য করে গিয়েছেন, কিন্তু এই সহৃদয় মানুষগুলি চলে যাওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে কে যেন কেড়ে নিচ্ছে আমার অস্তিত্বের অবলম্বনটুকু। তবে রত্নাদি এখনও মাঝেসাঝে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।’ তরুণকুমার, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, রত্না ঘোষালের পর বাংলার চলচ্চিত্র তথা বিনোদন জগতের কেউ কি নেই যিনি বাড়িয়ে দিতে পারেন তাঁর ঔদার্যের হাত, মুছিয়ে দিতে পারেন ওঁর বুকের জমাট অভিমান? ষাটোর্ধ্ব নিখিল দত্ত যে এখনও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে লড়াইটা চালিয়ে যেতে চান।
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
আমাদের চিঠি,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.