পুর কর্তারাও মাথা ঝাঁকিয়ে বলছেন, “ছেলেটা মাথা খাটিয়েছে বটে!”
সন্ধের মুখে গঞ্জ জুড়ে সাইকেল দাপিয়ে রাস্তার আলো জ্বালানো আর ভোরের আলো ফোটার আগেই তা ফের নিভিয়ে দেওয়াকম ঝক্কি? পুরসভার চেনা ঠিকাদার সে কাজ কতটা মন দিয়ে করত তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ, জঙ্গিপুর শহরের বহু পথেই বেলা দশটাতেও হামেশাই দেখা যায় গন গন করছে হ্যালোজেন। ছবিটা ঠিক উল্টে যায় সন্ধ্যায়। বেশ কিছু পাড়া সাঁঝেও ডুবে অন্ধকারে। আর, অনাবশ্যক জ্বলে থাকা পথবাতির দাম মেটাতে হচ্ছে পুরসভাকে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভায় গড়ে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে প্রতি মাসে। যার ফলে বিদ্যুৎ কাতে খরচের বহর বেড়েছে প্রায় দু লক্ষ টাকা।
সেই সব পুর-ঝক্কি মেটাতে ছেলেটা বাস্তবিকই মাথা খাটিয়েছিল বটে! পুরসভার অস্থায়ী কর্মী গোপাল দাসের ‘টাইমার’-এ বুক বেঁধে এখন বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ের পথ খুঁজছে জঙ্গিপুর পুরসভা। |
কী সেই যন্ত্র? ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে জুড়ে দিলেই কেল্লাফতে। রাস্তায় সার দেওয়া পথ বাতি নির্দিষ্ট সময়ে জ্বলবে আর নিভবে। কিলো দুয়েক ওজনের যন্ত্রটি বানানো হয়েছে সাকুল্যে হাজার পাঁচেক টাকায়। নেহাতই কিছু আটপৌরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম দিয়ে। গোপালবাবু বলেন, “টাইমার গড়ার জন্য প্রয়োজন একটি বড় লোহার গিয়ার বক্স। তার মধ্যে রিলে যন্ত্রটি এবং দু’টি সারকিট ব্রেকার লাগিয়ে তৈরি করা হয় টাইমার। যন্ত্রে তাকছে এটিএম যন্ত্রে ব্যবহৃত একটি টাইম ফিক্সিং খড়িও। যার সাহায্যে সময় দিয়ে আলো জ্বালানো ও নেভানো সম্ভব। হাজার পাঁচেক টাকার এই যন্ত্রের ক্ষমতা বাড়িয়ে ১০ থেকে ২০ কিলোওয়াটের ভেপার ল্যাম্পও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”
দিন কয়েক ধরে গোপালবাবুর ‘অভিনব’ টাইমার জঙ্গিপুরের রাস্তায় পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারও শুরু হয়েছে। পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষায় পাস করেছে গোপালবাবুর ওই যন্ত্র। মাস খানেক দেখি। তারপর না হয় পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতেই তা জুড়ে দেওয়া হবে।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের খরচ নিয়ে রীতিমত সমস্যায় পড়েছে পুরসভা। রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর, দুই গঞ্জের ২০টি ওয়ার্ডে সড়কপথে পথবাতি জ্বালাতে মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা বিদ্যুতের খরচ দিতে হত পুরসভাকে। কিন্তু বিদ্যুৎ বন্টন দফতর সম্প্রতি প্রতিটি ট্রান্সফর্মারে আলাদা করে মিটার বসানোয় বিদ্যুতের বিল এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে মাসিক প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। কেন? পুরসভার দাবি, বিদ্যুতের অন্তত ২০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। ভোর সাড়ে ছটায় আলো নেভানোর কথা থাকলেও অধিকাংশ সময়েই বেলা দশটাতেও দেখা যায় সে আলো জ্বলে রয়েছে।
আগে, পথ-বাতি জ্বালানো-নেভানোর দায় ছিল রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের। এখন তার দায় বর্তেছে পুরসভার উপরে। পুরপ্রধান বলেন, “প্রতি দিন অন্তত ৪ ঘণ্টা করে বেশি সময় বাতি জ্বলছে। কখনও বা বিকেল থেকেই জ্বলে উঠছে বাতি। আর বেলা হয়ে গেলেও তা নেভানো হচ্ছে না। টাইমার যদি ঠিকমত কাজ করে তবে এই অপচয় কমানো যাবে।” এর আগে বর্ধমানের কাটোয়া এবং বীরভূমেও এই টাইমার লাগিয়ে রাস্তায় অনাবশ্যক জ্বলে থাকা আলোর অপব্যবহার বন্ধ করা যায়।
গোপাল দাস বিদ্যুৎ মিস্ত্রি হিসেবে এলাকায় পরিচিত। পুরসভার রবীন্দ্রভবন দেখভালের অস্থায়ী কর্মী তিনি। গোপালবাবু বলেন, “বছর খানেক আগে এক দিন রবীন্দ্রভবন মঞ্চের ‘স্ক্রিন’ খোলার রিলে মেসিনটা খারাপ হয়ে যায়। সেই বিকল ৭০ অ্যাম্পিয়ারের রিলে যন্ত্রটিকেই সারানোর সময়ে টাইমার তৈরির কথাটা মাথায় আসে। শেষ পর্যন্ত দিন কুড়ি আগে পরীক্ষামূলক ভাবে সফল হওয়ার পরই পুরসভাকে জানাই।”
গোপালবাবুর এখন অপেক্ষা, পুর-সম্মতির। |