জাভার গন্ডার সংরক্ষণে ভরসা এখন অসম
বৃষ্টি অরণ্যের আড়াল-আবডাল খুঁজে এগিয়ে চলেছেন কয়েকজন। তীক্ষ্ম দৃষ্টি মাটির দিকে। জঙ্গলে প্রাণীর সন্ধানে ঘুরলে নজর রাখতে হত সমুখপানে। কিন্তু, ওঁদের চোখ মাটি ছেড়ে নড়ছে না। হাতে, দস্তানা, বোতল, ক্যামেরা আর পলিথিনের থলে।
হঠাৎই উত্তেজনা। ইউরেকা! ইউরেকা! মিলেছে অভীষ্ট। একেবারে তাজা, খুব একটা গরম নয়, তবে কথায় বলে, নেই মামার চেয়ে ভাল। উপরের দিকটা শুকনো। কিন্তু, কাঠি দিয়ে শুকনো অংশ সরিয়ে দিতেই, কালচে, নরম বিষ্ঠার অমূল্য রতন! তাকে স্পর্শ আর গন্ধ নিয়ে যেন পরম প্রাপ্তির অনুভূতি। এরপর, ওই সম্পদ সযত্নে থলিতে ভরে ফেলা।
হবে না-ই বা কেন? বিরল বলে বিরল! জাভান গন্ডারের গুষ্টি বিলুপ্তপ্রায়। মেরেকেটে মাত্র ৫০টা বেঁচে রয়েছে। তারই কোনও একজন মলত্যাগ করে গিয়েছে এখানে। সেই দুর্লভ মল হাতে একগাল হাসিতে মেতে উঠলেন বিজ্ঞানীরা। এই মল সূত্র বিচার করেই বিশ্বের বিরলতম প্রাণীর সংরক্ষণ শুরু হবে। আর, জাভা ও সুমাত্রার গন্ডারের সংরক্ষণে ইন্দোনেশিয়া সরকারের ভরসা এখন অসমের প্রাণী বিজ্ঞানীরা।
একশৃঙ্গ গন্ডারের দুই বিপন্ন প্রজাতিকে রক্ষা করতে অসমের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেবে ইন্দোনেশিয়া। কাজিরাঙায় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা দুইহাজার ছাড়ানো ও অসমে ‘রাইনো ভিশন ২০২০’ র সাফল্যে অন্যতম অংশীদার অসমের একটি পশুপ্রেমী সংস্থা। তাদের জিন গবেষণা ও শুমারি পদ্ধতি এইবার জাভা ও সুমাত্রার গন্ডারদের বংশগতি ও বৃদ্ধির প্রতিকূলতাগুলি নির্ণয় করবে।
সেই অমূল্য বিষ্ঠা। ছবি: উদয়ন বরঠাকুর
বিশ্বে জাভান গন্ডারের সংখ্যা এখন মাত্র ৫০টি। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায়, উজু কুলোন জাতীয় উদ্যানেই একমাত্র এই প্রজাতির গন্ডারের দেখা মেলে। অন্য দিকে, সুমাত্রান গন্ডারের সংখ্যা দু’শো থেকে আড়াইশো। ইন্দোনেশিয়ার বুকিত বারিসান সেলাতান ও ওয়ে কাম্বাস জাতীয় উদ্যানে সুমাত্রান গন্ডারের বাস। আন্তর্জাতিক রাইনো ফাউন্ডেশন, ইয়াইয়াসান বাদাক ও ইন্দোনেশিয়া রাইনো প্রোটেকশন দীর্ঘদিন ধরে জাভান ও সুমাত্রান গন্ডারের সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করছে। এই ধরনের গন্ডারের বংশবৃদ্ধির হার খুব কম। এদের সুমারির কাজও তেমন বিজ্ঞানসম্মতভাবে হয়নি। সেই জন্য গন্ডার সংরক্ষণে দড় অসমের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার বন বিভাগ।
ডিএনএ-ভিত্তিক জেনেটিক গবেষণার ব্যাপারে অসমের সংস্থাটির বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তাদের গবেষণাগারে, গন্ডার ও বাঘের বিষ্ঠা থেকে আবাস, চারণভূমি ও লিঙ্গ নির্ধারণ করার ব্যবস্থা রয়েছে। গত বছর, উত্তরবঙ্গের বাক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে, বিষ্ঠার দ্বারা বাঘ সুমারির কাজ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করার পাশাপাশি, মানস, কাজিরাঙায় বাঘ সুমারির বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে সংস্থার ওয়াইল্ডলাইফ জেনেটিক্স প্রকল্পের কর্মীরা।
ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে, বর্তমানে, ঠিক কতগুলি জাভান ও সুমাত্রান গন্ডার রয়েছে তা জানতে সেখানকার জঙ্গলে ডিএনএ ভিত্তিক গবেষণা চালানো হবে। আরণ্যক ওয়াইল্ডলাইফ জেনেটিক্স প্রকল্পের প্রধান উদয়ন বরঠাকুর ইতিমধ্যেই গন্ডারের বিষ্ঠা ও জিনচর্চার প্রাথমিক কাজ সারতে ইন্দোনেশিয়া ঘুরে এসেছেন। ইয়াইয়াসান বাদাক, এস্কামান ইনস্টিটিউটের কর্তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে।
এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উদয়ন জানান, বিষ্ঠা সংগ্রহ করে অসমে এনে পরীক্ষা চালানো সম্ভব নয়, তাই বিষ্ঠা পরীক্ষার কাজ এস্কামান ইনস্টিটিউটেই হবে। বিষ্ঠা থেকে গন্ডারের সংখ্যা, তাদের মধ্যে পুরুষ-মহিলার অনুপাত, চারণভূমি ও খাদ্যাভ্যাসের প্রকৃতি, বংশগতির ধারা বিচার করা হবে। কেন জাভান ও সুমাত্রান গন্ডারের সংখ্যা বাড়ছে না, সেই বিষয়টি নিয়েও গবেষণা চালাবেন অসম ও ইন্দোনেশিয়ার প্রাণী বিশেষজ্ঞরা। গন্ডারের সূত্রেই এ এক সখ্য বন্ধন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.