সম্পাদকীয় ১...
বুদ্ধি থাকিলে আয় হয়
ন্তত পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর রাজস্ব প্রস্তাব তাহাই দাবি করিতেছে। অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব লইবার পরে অমিত মিত্র জানাইয়াছিলেন, প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করিবেন তিনি। সাধারণ মানুষের উপর বাড়তি করের বোঝা না চাপাইয়াই। কী ভাবে, তাহার রূপরেখা বর্তমান প্রস্তাবটিতে স্পষ্ট। তিনি ইনাম ও শাস্তির যুগলবন্দির ব্যবস্থা করিয়াছেন। যাঁহারা যথাসময়ে কর জমা করিবেন, তাঁহাদের জন্য কর ছাড়ের ইনাম; যাঁহারা ফাঁকি দিবেন, তাঁহাদের জন্য কঠোর আর্থিক শাস্তি। ‘গেম থিয়োরি’ বা ‘দ্বন্দ্বতত্ত্ব’ নামক শাস্ত্রে এই ‘ইনাম ও শাস্তি’-র ব্যবস্থাটি যথেষ্ট প্রচলিত। তবে, শাস্ত্রের পাঠ সচরাচর রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশাধিকার পায় না। অমিত মিত্র ভগীরথের কাজটি করিয়াছেন। কিন্তু, প্রবেশাধিকার এক কথা, আর গুরুত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া আর এক। ‘ইনাম ও শাস্তি’ ব্যবস্থাটির প্রবেশাধিকার জুটিয়াছে, সমাদর জুটিবে কি? সমাদরের একটিই পন্থা যাহার শাস্তি প্রাপ্য, তাহাকে শাস্তি দেওয়া। অর্থাৎ, ‘ইনাম ও শাস্তি’ ব্যবস্থায় যে হুমকিটি আছে, তাহাকে বাস্তবায়িত করা। ইহা জরুরি। কারণ, সরকারের সহিত করদাতাদের সম্পর্ক এক বারের নহে। এক দিকে যেমন প্রতি বৎসর অজস্র মানুষ কর দেন, তেমনই একই মানুষ প্রতি বৎসর কর দেন। দ্বন্দ্বতত্ত্বের পরিভাষায় ইহার নাম ‘রিপিটেড গেম’। যদি দেখা যায়, সরকার শাস্তির হুমকি দিলেও বাস্তবে শাস্তি দেয় না, তবে করদাতারা বুঝিবেন, হুমকিটি ফাঁকা। ফলে, তাঁহারা স্বভাবতই সেই হুমকিকে গুরুত্ব দিবেন না। তাহার পরিণাম সহজ ‘ইনাম ও শাস্তি’ ব্যবস্থাটি মাঠে মারা যাইবে। প্রশ্ন হইল, সরকার কি সত্যই কঠোর হইবে? এই প্রশ্নের উত্তর দ্বন্দ্বতত্ত্বে নাই, অর্থনীতিতেও নাই। প্রশ্নটি রাজনীতির। তাহার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা ভিন্ন উপায় নাই।
অর্থমন্ত্রীর রাজস্ব প্রস্তাবের দ্বিতীয় দিক, তিনি ই-গভর্ন্যান্সের কথা বলিয়াছেন। অর্থাৎ, কর জমা করিবার জন্য, বা টাকা ফিরত পাইবার জন্য আর সরকারি দফতরের টেবিলে টেবিলে হন্যে হইয়া ঘুরিতে হইবে না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত হইতেই কাজগুলি করা সম্ভব হইবে। এই সংস্কারটিও অতি জরুরি। ‘কর্মসংস্কৃতি’ কথাটি শুনিতে ভাল, তাহা ফিরাইয়া আনিবার উদ্যোগ আরও ভাল কিন্তু সেই উদ্যোগ অদূর ভবিষ্যতে প্রবল ফলবতী হইবে, তেমন আশা না রাখাই বিধেয়। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে যদি অকুশলী সরকারি কর্মচারীদের দুস্তর ব্যবধান রহিয়াই যায়, তবে কর সংস্কারের যত আধুনিক প্রস্তাবই অর্থমন্ত্রী করুন, তাহার পূর্ণ ফল পাওয়া যাইবে না। ই-গভর্ন্যান্স এই দূরত্ব ঘুচাইবার পন্থা। অধিকাংশ উন্নত দেশে এখন ই-গভর্ন্যান্সই একমাত্র ব্যবস্থা। পশ্চিমবঙ্গকেও সেই পথেই হাঁটিতে হইবে। কিন্তু, এইখানেও একটি প্রশ্ন রহিয়া গেল। পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ওয়েবসাইট দেখিবার দুর্ভাগ্য যাঁহাদের হইয়াছে, তাঁহারাই জানেন, ব্যবস্থাটি নামমাত্র। তাহার উন্নতিসাধন হয় না, সংস্কার হয় না। সেই ওয়েবসাইট সরকারের কাজের গতি বাড়াইবে, ভরসা হয় না। তাহার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। আশা করা যায়, অর্থমন্ত্রী সেই কথা ভাবিয়াছেন। দুর্বল তথ্যপ্রযুক্তিকে ভরসা করিয়া আধুনিক সংস্কারের পথে নামিলে একটি বড় বিপদ আছে ভুল বার্তা পৌঁছাইবার বিপদ। বিকল ওয়েবসাইট নিশ্চিত ভাবেই বলিয়া দিবে, এই সরকারের পেশাদারিত্ব নাই। আজকের দুনিয়ায় পেশাদারিত্বের অভাবের বাড়া অপবাদ আর নাই। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে হাজার শঙ্কা, লক্ষ আপত্তি রহিয়াছে। কাজেই, নূতন ব্যবস্থাটির আনখশির যাহাতে পেশাদারিত্বের কথা বলে, সরকারকে তাহা সুনিশ্চিত করিতেই হইবে। তাহাতে সংস্কারের পালেও হাওয়া লাগিবে, রাজ্যের ভাবমূর্তিরও উন্নতি হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.