উইকিলিকসের তথ্য নিয়ে বিতর্ক দেশ জুড়ে
দল কিন্তু বদলেছে, বুদ্ধদেবের মন্তব্য
নিয়ে বিড়ম্বনার মুখে ব্যাখ্যা কারাটের
স্বস্তির মুখে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামলেন প্রকাশ কারাট।
গত দু’বছর ধরে দলের মধ্যে প্রকাশ কারাটকে সব থেকে বেশি যিনি অস্বস্তিতে ফেলেছেন, এ বারও অস্বস্তির কারণ সেই তিনিই। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নির্দিষ্ট করে বললে, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া মার্কিন নথিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, নিজেদের পরিবর্তন করতে না পারলে কমিউনিস্ট পার্টিকে ধুয়েমুছে যেতে হবে। এখনও সেকেলে মতাদর্শই দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও বুদ্ধদেব মত জানিয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক আজ দাবি করেছেন, “আমাদের দল স্থবির নয়। আমরা তো আমাদের পার্টি কমর্সূচিরও পরিবর্তন করেছি, তাকে আধুনিকীকরণ করেছি।”
আজ, রবিবার বেলা ১২টায় দিল্লির এ কে গোপালন ভবনে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন কারাট। বিষয় বলা হয়েছিল, ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে এ দেশে ব্যাঙ্ক খুলতে দেওয়ার বিরোধিতা এবং অন্যান্য বিষয়। কিন্তু উইকিলিকসের সৌজন্যে ‘অন্যান্য বিষয়’-ই প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে সাংবাদিক বৈঠকে। বস্তুত উইকি-প্রসঙ্গ এ দিন নিজেই তোলেন কারাট। ব্যাখ্যা দেন, বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন কূটনীতিকদের কাছে সিপিএম-নেতারা দলীয় অবস্থানই ব্যাখ্যা করেছেন।
সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ কারাট। নয়াদিল্লিতে রবিবার।
এর বাইরে তাঁর দলের নেতারা অন্য কোনও ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করতে পারেন, এটা মেনে নিতে মোটেই রাজি নন কারাট। তাঁর কথায়, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যই হোন বা ভি এস অচ্যুতানন্দন, কিংবা প্রকাশ কারাট আমরা আমাদের পার্টি কর্মসূচি অনুযায়ীই চলি।”
কারাটের মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, বুদ্ধদেবের ওই মন্তব্য তাঁকেই অস্বস্তিতে ফেলেছে সব থেকে বেশি। দলের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধ মত রয়েছে, তা কারাটের অজানা নয়। কিন্তু সেই মত একেবারে ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তি’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের কাছে জানানো হচ্ছে, এটা প্রকাশিত হয়ে পড়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে কারাটের। মার্কিন নথি অনুযায়ী, বুদ্ধদেব ওই মন্তব্য করেছিলেন লোকসভা নির্বাচনের পরে। যে নির্বাচনে দলের ভরাডুবির পর থেকেই দিল্লিতে গুরুত্বপূর্ণ পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়া বন্ধ করে দেন বুদ্ধদেব। বিধানসভা নিবার্চনে হারের পরে দিল্লিতে পলিটব্যুরো বা হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও সেই ধারা অব্যাহত। দলে বুদ্ধদেবের এই ‘নীরব অনুপস্থিতি’কে সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রে ইউপিএ-র উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর অনাস্থা প্রকাশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বরাবরের মতো আজও তাই কারাট বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, দলের মধ্যে কোনও মতবিরোধ নেই। এমনকী বুদ্ধদেবও তাঁর সঙ্গে আছেন বোঝানোর চেষ্টায় কারাট নিজেও আজ উইকিলিকসের পাল্টা একটি তথ্য ‘ফাঁস’ করেছেন। তাঁর দাবি, ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ওয়ালমার্টের প্রধানকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে পাঠিয়েছিলেন, যাতে বামেরা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগে সাড়া দেন। সে সময় বামেরা কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করছিল। কিন্তু বুদ্ধদেব ওয়ালমার্টের প্রধানকে দলীয় বিরোধিতার কথা জানিয়ে দেন। বুদ্ধদেব নিজেই তাঁকে সে কথা জানিয়েছিলেন বলেও জানান কারাট। কারাট শিবিরের বক্তব্য, রাশিয়ার পতনের পরে ১৯৯২ সালে চতুর্দশ পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়, পার্টি কমর্সূচির বদল করা প্রয়োজন। ২০০০ সালে তিরুঅনন্তপুরমে বিশেষ সম্মেলন ডেকে সেই বদল করা হয়। সাম্প্রতিক শুদ্ধকরণ অভিযানেও দলের নেতাদের মধ্যে পরিবর্তন আনার চেষ্টা হয়েছে। কাজেই বুদ্ধদেব যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, সেই পরিবর্তন ও সময়ের সঙ্গে বদলানোর চেষ্টা কমিউনিস্ট পার্টিতে একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া।
সিপিএমের কাণ্ডারীর ব্যাখ্যা, মার্কিন কূটনীতিকরা পশ্চিমবঙ্গ-কেরলে দলের নেতা-মন্ত্রীদের কাছে গিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে তাঁদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। বাস্তবে যা কথাবার্তা হত, তার সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকরা নিজেদের পর্যালোচনা ও মন্তব্য যোগ করতেন। সঠিক প্রেক্ষাপটে তা দেখা দরকার।
কিন্তু সমস্যা হল, উইকিলিকসের ফাঁস করা কেবলে দেখা যাচ্ছে, বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও বুদ্ধদেবের মন্তব্য দলীয় অবস্থানের বিপরীত। মার্কিন নথি অনুযায়ী, সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ভারতে শাখা খোলার ব্যাপারে তাঁর সমর্থন রয়েছে। কিন্তু কারাট আজও বলেছেন, খুচরো ব্যবসার মতো উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রেও সিপিএম বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে। তাঁর যুক্তি, বিশেষ কিছু ক্ষেত্র বাদে বিদেশি বিনিয়োগে যদি উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধি, নতুন প্রযুক্তির আমদানি ও কর্মসংস্থান তৈরির শর্ত পূরণ হয়, তা হলে দল তাতে আপত্তি করবে না। আগেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারাট বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সেই অনুযায়ী যদি বুদ্ধদেব বা অচ্যুতানন্দন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মার্কিন বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করে থাকেন, তাতে দোষের কিছু নেই। উল্টে মনমোহন সরকারকে এক হাত নিয়ে আজ সিপিএমের শীর্ষ নেতা মন্তব্য করেছেন, “(উইকিলিকসের) কেবলগুলি দেখলে বোঝা যাবে, বরাবরই কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশ নীতি নিয়ে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নুইয়েছে।”
এর আগে উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া নথিকে ‘একপেশে’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। এই দফায় এখনও মুখ খোলেননি তিনি। প্রশ্ন উঠছে, কারাট দলের মধ্যে বিরোধ ধামাচাপা দিতে চাইলেও, বুদ্ধদেব কি সেই পথে হাঁটবেন? দিল্লিতে দলের পলিটব্যুরো বৈঠক ২৯-৩০ সেপ্টেম্বর। এবার কি বুদ্ধবাবু আসবেন? প্রশ্নটা ছিল কারাটের কাছেই। শুধু একটু মুচকি হাসিই মিলেছে এর জবাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.