আর্থিক সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সহমত গড়ার লক্ষ্যে শিল্পমহলের সাহায্য চাইলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, সংস্কার পর্বের পরবর্তী ধাপ রূপায়ণ করতে কেন্দ্র একাধিক পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু সে-সব সংসদে অনুমোদন করাতে রাজনৈতিক স্তরে বাধা পেতে হচ্ছে। শিল্পমহল সেই সমস্যা কাটাতে এগিয়ে আসুক।
একই সঙ্গে প্রণববাবু জানান, মূল্যবৃদ্ধির হার রুখতে ফের সুদের হার বৃদ্ধি আপাতত বাঞ্ছনীয় নয় বলেই মনে করছে অর্থ মন্ত্রক। তাঁর দাবি, কেন্দ্র যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে দীর্ঘ মেয়াদে কমবে মূল্যবৃদ্ধির হার। এবং বছরের শেষে তা ৬ থেকে ৭ শতাংশে নেমে আসবে বলেই তাঁর আশা। |
সিআইআই এবং সুরেশ নেওটিয়া সেন্টার ফর এক্সেলেন্স-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে রবিবার কলকাতায় শিল্পমহলের মুখোমুখি হন প্রণববাবু। সার্বিক ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ও দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার সময় সংস্কার এগিয়ে নিয়ে যেতে সংসদে রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য: এক দিকে যেমন নানা কারণে সংসদের কাজকর্ম বাধা পাচ্ছে, অন্য দিকে তেমনই নানা পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় অনুমোদন মিলছে না। কারণ কোনও দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। থমকে যাচ্ছে সংস্কার পর্ব। এমনকী সংসদের স্থায়ী কমিটির রিপোর্টও বাদল অধিবেশনে পাশ করাতে সমস্যা হয়েছে বলে আক্ষেপ জানান তিনি। প্রণববাবু বলেন, “ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংসদে পাশ করানোর কথা ছিল। মাত্র দু’টি হয়েছে। বাকিগুলির ক্ষেত্রে কী হবে জানি না।”
এ প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষ কর বিধি এবং পণ্য-পরিষেবা করের উল্লেখ করে প্রণববাবু জানান, পণ্য-পরিষেবা করে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সার্বিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই হবে না, বরং বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে। চাই অর্ধেকেরও বেশি রাজ্যের সম্মতি। যা রাজনৈতিক দলগুলির ঐকমত্য ছাড়া অসম্ভব। উল্লেখ্য, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির আপত্তিতে এ ব্যাপারে এখনও ঐকমত্য অধরাই। সে ক্ষেত্রেই শিল্পমহলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে আর্জি জানিয়ে সহাস্যে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকা বা না-থাকা, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তো শিল্প মহলের সুসম্পর্ক রয়েছে।”
সুদের হার বৃদ্ধির প্রসঙ্গও ওঠে এ দিনের আলোচনায়। উল্লেখ্য, সুদের হার বৃদ্ধির ব্যাপারে অর্থমন্ত্রক যাই বলুক না কেন এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। এর আগে অর্থমন্ত্রক না চাইলেও আরবিআই সুদের হার পরিবর্তন করছে, এমন ঘটনা দেশে একাধিকবার ঘটেছে। প্রণববাবু অবশ্য এ দিন আশা প্রকাশ করেন যে, সুদের হার (ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রে যা আরবিআই ঠিক করবে) আপাতত বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। প্রসঙ্গত, তার উপরেই নির্ভর করে সাধারণ গ্রাহকদের ঋণের উপর সুদের হার কতটা বাড়বে। প্রণববাবুর যুক্তি, বর্ষা ভাল হওয়ায় এবং চাহিদা-জোগানের ফারাক-সহ অন্য সমস্যা কমে আসায় মুল্যবৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমে দশ শতাংশের নীচে নামবে। ফলে নগদের জোগানে রাশ টানতে সুদের হার বৃদ্ধির আপাতত প্রয়োজন হবে না। |