মাটির মানুষ অলক্ষ্যেই কাজ করছেন
নজরুল গবেষক
তাঁর প্রথম প্রেম কাজী নজরুল আর দ্বিতীয় প্রেম বাংলার কৃষিজমির ভূগোল। বীরভূমের সূচপুরের এই ভূমিপুত্র অবশ্য আজকের সূচপুর নিয়ে বেশ ব্যাথিত। সত্তরোর্ধ্ব মানুষটি খেদের সঙ্গেই বলে ওঠেন, “শুধু মামার বাড়ির শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি বলেই নয়, সূচপুর গ্রাম ছিল ‘সোনার গ্রাম’। বড় বড় দিঘি। মোল্লার দিঘিটার আয়তনই ছিল ষাট বিঘে। সূচপুর তখন এক সম্পদশালী গ্রাম। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিল সহজ-সরল। আজ সে কথা ভাবলে নিজেকেই মিথ্যাবাদী বনে মনে হয়।” বাংলা সংস্কৃতি বিশেষত, নজরুলমনস্ক মানুষটির বতর্মান ঠাঁই অবশ্য দুর্গাপুর।
নজরুল সংক্রান্ত গবেষণায় তৈরি করেছিলেন নজরুল অ্যাকাডেমি। পরে নানা কারণে সরে এসেছিলেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আর সরকারি নজরুল সংক্রান্ত গবেষণার কাজে যুক্ত না থাকলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির পাঠ থেমে নেই। থেমে নেই নজরুল চর্চাও। তবে এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বাংলার জমি, কৃষিজমির চরিত্র, তার আকার-আয়তন, রেভিনিউ নিয়ে নিত্য গবেষণা। কাজী খায়রুল আলম সিদ্দিকির কাছে জমি শুধু একমাত্র একটি ভূখণ্ড নয়, সম্পদশালী জৈবিক সত্তা।
এখানে একটু হোঁচট খেতে হয়। বিদ্রোহী কবি, প্রেমিক সুরকার ও গায়ক কাজী নজরুলের সঙ্গে মেলে কি ভূমি-রাজস্ব জরিপ? আসলে খায়রুল আলম সাহেবের প্রথম প্রেম যে কাজী নজরুল। আর বাংলার কৃষিজমির ভুগোলের ইতিবৃত্ত তাঁকে ফের প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে। আর পরবর্তীতে এই দ্বিতীয় প্রেমই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর অন্নদাতা অর্থাৎ চাকরি।
তা সরকারি রেভিনিউ নিয়ে এত খাটাখাটনি, গবেষণার কি প্রয়োজন ছিল?
প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই মুখ খোলেন জমি বিশেষজ্ঞ, “নিশ্চয়ই প্রয়োজন ছিল। যে কাজ আমাকে অন্ন দেয়, আমার কাছে সেটা শুধু চাকরি নয়। সে কাজের গোড়া থেকে আগা অবধি না জানলে কাজটাই যে ক্লান্তিকর হয়ে উঠবে। চাকরিটা ভালবাসলে কাজের মূল বিষয়টি সম্পর্কে জানা দরকার।”
১৯৬৯ সালে পরীক্ষা দিয়ে সরকারি বিভাগের ল্যান্ড অ্যান্ড রেভিনিউ দফতরে চাকরি। প্রথম পোস্টিং পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে।
নিশ্চয়ই আজকের বান্দোয়ান নয়?
‘‘না না। বান্দোয়ানের ল্যান্ড অ্যান্ড পিপল দুটোই আমার অভিজ্ঞতার নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সামগ্রিক উন্নয়ন চাই না বলেই পিছিয়ে পড়ে জেলা-ব্লক-পাড়া ও পরিবার।” কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে উন্নয়নের ভাবনার প্রতিফলন এক সময়ের সিউড়ির এসডিও খায়রুল সাহেবের কথায়।
কাজী নজরুলকে নিয়ে অ্যাকাডেমি তৈরি করা থেকে আজও গবেষণার কাজ চালিয়ে গেলেও নজরুলকে নিয়ে সরকারি তরফের যাবতীয় উদ্যোগে বরাবার ব্রাত্যই থেকে গিয়েছেন খায়রুল আলম। তবে তা নিয়ে মনে কোনও খেদ নেই মানুষটির। তা হলে সরকারি দাক্ষিণ্য থেকে কী একেবারেই বঞ্চিত তিনি? কিছুই কী পাননি? একটু হেসে নজরুল গবেষকের উত্তর, “পেয়েছি তো। যেমন সকলেই পেয়ে থাকেন, অবসরের পরে আমৃত্যু পেনশন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.