পেট্রাপোল স্থলবন্দরের এক বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কারবারিকে গলার নলি কেটে, কুপিয়ে খুন করে বাংলাদেশের দিকে পালাল আততায়ীরা। শুক্রবার সকালে সীমান্তঘেঁষা বনগাঁর মধ্য জয়ন্তীপুর গ্রামের ঘটনা। সীমান্ত পেরনোর আগে আততায়ীদের বাধা দিতে গিয়ে তাদের ধারালো অস্ত্রের কোপে জখম হন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান। তাঁকে বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ মধ্য জয়ন্তীপুর গ্রামে বাড়ির কাছেই পায়চারি করছিলেন মজনু মণ্ডল (৫২) নামে ওই ব্যক্তি। আততায়ীরা তাঁর দিকে প্রথমে বোমা ছোড়ে। মজনু প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী রণজিৎ বিশ্বাসের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। দুষ্কৃতীরা সেখানেই চড়াও হয়ে একটি খাটের উপরে তাঁকে ফেলে কোপায় বলে অভিযোগ। পরে আততায়ীরা বাংলাদেশের সাদিপুর গ্রামের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। পথে তাদের বাধা দেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। দুষ্কৃতীরা প্রথমে গুলি চালায়। গুলিতে কেউ হতাহত হয়নি। পরে সুলতান আলি নামে এক জওয়ানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় ওই দুষ্কৃতীরা। |
বনগাঁ হাসপাতালে জখম জওয়ান সুলতান আলি। ছবি: পার্থসারথি নন্দী। |
এসডিপিও (বনগাঁ) বিমলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পুরনো শত্রুতার জেরে ওই প্রৌঢ়কে খুন করা হয়েছে। নিহতের বিরুদ্ধেও অতীতে খুন, ডাকাতি-সহ নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।” পুলিশের দাবি, মজনু মণ্ডলের একটি বিরুদ্ধ গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আততায়ীরা বাংলাদেশ থেকে এসেছিল। খুন করে তারা বাংলাদেশেই ফিরে যায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময় নানা ‘অসামাজিক’ কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে অবশ্য বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের কারবারেই মন দিয়েছিলেন মজনু। তবে গত বছরও এক বার দুষ্কৃতীরা তাঁকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করে।
গ্রামে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, নিহতের পড়শি রণজিৎবাবুর বাড়ি ঘিরে ভিড়। রণজিৎবাবুর স্ত্রী অর্চনাদেবী বলেন, “হঠাৎ একটা শব্দ পেলাম। বোমা না গুলি বুঝতে পারিনি। দেখি, মজনুকে নিয়ে কয়েকজন ঘরে ঢুকে গেল। বাকিরা উঠোনে দাঁড়িয়ে রইল। আমরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। তার পরে এই ঘটনা।” শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন মজনুর মেয়ে রেশমাও। তিনি বলেন, “আমি বাবাকে বাঁচাতে যাচ্ছিলাম। এক দুষ্কৃতী আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।”
নিহতের পরিবারের তরফে এ দিন রাত পর্যন্ত থানায় কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ দায়ের করলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন নিহতের ছেলে ইমান হোসেন। তাঁর বক্তব্য, “বাবাকে পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমাদের কী ভাবে দেবে?” একই কথা তিনি পুলিশকেও জানিয়েছেন। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের ক্ষোভ, “প্রায়ই বনগাঁতে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা ঢুকছে। নানা অপরাধমূূলক কাজ করে পালাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ধরতে রাতে তল্লাশি চলছে। ইমানদের নিরাপত্তার অভাব হবে না বলেও পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে।এলাকায় উত্তেজনা থাকায় এ দিন মধ্য জয়ন্তীপুরে পুলিশ পিকেট বসানো হয়। ঘটনার পরে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস (বিবিজি)-এর সঙ্গে বৈঠকও করা হয়। মজনু মণ্ডলের দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। |