|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা নতুন আশা |
কোনিদের জন্য |
অনুপ চট্টোপাধ্যায় |
প্রত্যাশা ছিল দীর্ঘ দিনের। এ বার তা পূরণ হতে চলেছে। উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কে গড়ে উঠছে উন্নত মানের সুইমিং পুল। এত দিন এই অঞ্চলে কোনও সুইমিং পুল ছিল না। দেশবন্ধু পার্কে ছিল একটা জলাশয়, সেখানেই সাঁতার কাটতেন ছোট-বড় অনেকেই।
স্থানীয় হাটখোলা ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখানকার পুকুর থেকেই সাঁতার কেটে ভারত সেরা হয়েছিলেন আরতি সাহা। ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারুর শিরোপা পেয়েছিলেন তিনি।
প্রবল বাসনা থাকলেও শুধুমাত্র পুলের অভাবে এখানে প্রথাগত সাঁতার শেখার সাধ পূর্ণ হয়নি অনেকেরই। পরে স্থানীয় বিধায়ক সাধন পাণ্ডে উদ্যোগী হন। তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিকল্পনা মতোই কাজ এগোচ্ছে। ওখানে একটা কমিউনিটি সেন্টারও গড়ে তোলা হচ্ছে।” |
|
প্রায় ৫৪ বিঘে এলাকা নিয়ে দেশবন্ধু পার্ক উত্তর কলকাতার ফুসফুস বলে পরিচিত। খেলাধুলোর অন্যতম চর্চাকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই পার্কের জলাশয় ক্রমশই নষ্ট হচ্ছিল। স্বভাবতই সেখানে এত বড় একটি সুইমিং কমপ্লেক্স গড়ে ওঠার খবরে খুশি স্থানীয় অনেকেই। এলাকার বাসিন্দা সজল মাইতি, প্রত্যুষ দেবনাথ ও সমীরণ দত্তের বক্তব্য, উন্নয়নের ব্যাপারে দক্ষিণ কলকাতা বরাবরই অগ্রাধিকার পেয়েছে। বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। এ বার দেশবন্ধু পার্কে সুইমিং পুল হওয়ায় তাঁদের ক্ষোভের আঁচ কিছুটা প্রশমিত হবে বলেই প্রশাসনের ধারণা।
স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের উপভোক্তা বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “সাঁতার নিয়ে উদ্যোগের অভাব বরাবরই। তা সত্ত্বেও এই পার্কের জলাশয়ে সাঁতার শিখে কেউ কেউ দেশ-বিদেশে নাম করেছেন। এ রকম একটা জায়গায় সাঁতার শেখানোর উপযুক্ত পরিবেশ কাজে লাগানো জরুরি ছিল।”
কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য সরকারের যৌথ সহায়তায় গত বছর এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে খরচের পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “এত বড় মাপের সুইমিং পুল পূর্ব ভারতে আর নেই। প্রথম পর্যায়ে ইতিমধ্যেই ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।” তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সাঁতার প্রতিযোগিতার কথা ভেবেই এই পর্যায়ে ৫০ বাই ২৫ মিটার মাপের একটি বড় পুল বানানো হচ্ছে। তার পাশে একটি ২৫ বাই ১৫ মিটার মাপের ক্লাবপুল ও তিনটি ১৫ বাই ১০ মিটার মাপের কিড্স পুল হবে।
|
|
পুরসভার পার্ক ও স্কোয়্যার বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার দিয়েছে ২ কোটি, সিএমডিএ ৫০ লাখ এবং বিধায়ক তহবিল থেকে মিলেছে ৩৫ লাখ টাকা। বরাদ্দের বাকি টাকার মধ্যে ৩ কোটি টাকা দেবে পুরসভা। দেবাশিসবাবু বলেন, “সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী আর্থিক বছরের শুরুতেই সুইমিং পুল চালু করা সম্ভব হবে।”
সুইমিং পুল দেখভাল করবে কোন সংস্থা? সাধনবাবু জানান, ওই পুলের দেখভালের দায়িত্ব সাই-কে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তিনি বলেন, “সাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা প্রশিক্ষণরত সাঁতারুদের থাকার জন্য একটি হস্টেল বানানোর কথা জানিয়েছেন।” মেয়র শোভনবাবু-সহ পূর্ত ও পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ ব্যাপারে সব রকম সহায়তা করছেন বলে তিনি জানান। |
|
দেশবন্ধু পার্কে ওই প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি বেসরকারি সংস্থার ডিরেক্টর সৌমেন বিশ্বাস বলেন, “প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি পুল হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্যালারি, ডাইভিং বোর্ড, প্র্যাকটিস বোর্ড, জিমন্যাসিয়াম ও আরও দুটি পুল হবে।” তিনি জানান, এই প্রকল্পের মধ্যে প্রশিক্ষণরত সাঁতারুদের থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে স্থানীয় বিধায়কের উদ্যোগে পার্কের পাশে ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের পাশে প্রায় ১২ হাজার বর্গ ফুট জায়গার উপর নির্মীয়মাণ একটি বাসস্ট্যান্ডের উপরের তলায় সাঁতারুদের গেস্ট হাউস করা হবে। সেখানে রেলওয়ে রিজার্ভেশন কাউন্টার, এটিএম বুথ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
এত দিন স্থানীয় তিনটি ক্লাব ওই পার্কের জলাশয়ে সাঁতার শেখাত। সাধনবাবু জানান, সুইমিং প্রকল্পে গড়ে ওঠা তিনটি কিড্স পুল ও একটি ক্লাব পুল দেখভালের দায়িত্ব ওই ক্লাবগুলোকে দেওয়ার কথা হচ্ছে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই এই প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে। সরকার ও পুরসভার যৌথ আলোচনার পরেই সব কিছু চূড়ান্ত হবে।
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|