গান শুধু গান নয়, গান এখানে মুক্তির পথ। আর সে পথে সেই নামকরণ থেকেই জড়িয়ে আছেন মুক্তির এক পথিক, কাজী নজরুল ইসলাম।
দেশে তখন বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলনের জোয়ার। বাংলার অনেক তরুণের মতো মনোরঞ্জন সেনও জড়িয়ে পড়লেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। শুরু করলেন ঘুরে ঘুরে স্বদেশি গান পরিবেশন করে চাঁদা তোলার কাজ। পাশে ছিলেন নজরুল। আর তখন থেকেই তাঁর দু’চোখে স্বপ্ন, শুধু দেশের স্বাধীনতা নয়, গানকেই করে তুলবেন দেশের মেয়েদেরও স্বাধীনতার পথ। ১৯২৮-এ সেই স্বপ্নের প্রথম রূপায়ণ, বাসন্তী বিদ্যাবীথি। |
শুরু থেকেই এখানে গান শিখিয়েছেন নজরুল। নাম দিয়েছিলেন তিনিই, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর নামে। শুধু নজরুলই নন, নানা সময়ে এর সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাপদ চক্রবর্তী, পঙ্কজকুমার মল্লিক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, জগন্ময় মিত্র, অনিল বাগচী প্রমুখ। অর্থাৎ এ কলকাতার গান-ছবির উজ্জ্বলতম অংশগুলোর সঙ্গে অনেকটাই জড়িয়ে আছে বাসন্তী বিদ্যাবীথি।
উল্টোডাঙার ধরবাগানে এখন এই গান-আবৃত্তি শেখানোর স্কুলের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু শুরুটা হয়েছিল নলিনী সরকার স্ট্রিটে। তার পরে ছাত্রীসংখ্যা বাড়তে থাকল, দরকার হল বড় জায়গার, স্কুল স্থানান্তরিত হল ৮৭ বিধান সরণিতে (তখন কর্নওয়ালিস স্ট্রিট)। |
বাসন্তী বিদ্যাবীথিতে গাইছেন যূথিকা রায়। রয়েছেন সুস্মিতা গোস্বামী, রামকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়,
সুদীপ সেন, পূবালী দেবনাথ, অলক রায়চৌধুরী, পার্থ ঘোষ ও পলি গুহ। |
শহর ও শহরতলিতে এখন বিদ্যাবীথির ১৩টি কেন্দ্র। আজও সেই উজ্জ্বল ঐতিহ্য বজায় রেখে চলতে চান মনোরঞ্জনবাবুর পৌত্র, বিদ্যাবীথির কর্ণধার সুদীপ সেন। বললেন, “শুধু ঐতিহ্য বজায় রাখাই নয়, স্কুলকে আরও ছড়িয়ে দিতে চাই আমি।” কেমন সেই ঐতিহ্য? বিদ্যাবীথির সঙ্গে যুক্ত পার্থ ঘোষ, পূবালী দেবনাথ, সুস্মিতা গোস্বামী, অলক রায়চৌধুরী সকলেই একবাক্যে বলছেন, ‘‘শুদ্ধতার ঐতিহ্য”। আর দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বলছেন, “বহু প্রখ্যাত শিল্পী এই স্কুল থেকে গান শিখেছেন। বিংশ শতকে গানের জগতে বাসন্তী বিদ্যাবীথি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য নাম। একে যথাযোগ্য মর্যাদায় তুলে না ধরলে গত শতকে গান শেখানোর ইতিহাসটাই হারিয়ে যাবে।” স্মৃতিচারণ করে যূথিকা রায়ও বললেন, “মোনাদা, মানে মনোরঞ্জন সেন ঘুরে ঘুরে মেয়েদের গান শেখায় উৎসাহ দিতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাবীথিকে নতুন করে তুলে ধরা দরকার মানুষের সামনে।” |
স্মৃতির অ্যালবাম: মনোরঞ্জন সেন, ক্ষিতীশ বসু, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অনিল বাগচী ও অন্যান্য। |