দুপুর একটা। বিধাননগরের প্রবেশপথ থেকে লাবণির দিকে এগোতেই দেখা গেল, বুলেভার্ড জুড়ে রকমারি আবর্জনার প্রদর্শনী। অথচ সেখানেই পুরসভার তরফে জঞ্জাল না ফেলার নির্দেশিকা রয়েছে। আবার বিধাননগরের সরকারি কলেজের পাশে বাসস্টপের ধারেই আবর্জনায় পরিপূর্ণ বিশাল খোলা ভ্যাট।
জঞ্জাল ছাড়িয়ে পড়েছে ফুটপাথে। স্ট্যান্ডের রিকশাচালক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানা গেল, সেখানে রোজ জঞ্জাল নেওয়ার গাড়ি আসে না।
একই অবস্থা ১৩ নম্বর ট্যাঙ্কের কাছের একটি ভ্যাটের। রাস্তার উপরেও জমে গিয়েছে আবর্জনার স্তূপ। আবার লাবণি আইল্যান্ড থেকে পুরভবন যেতে গিয়ে দেখা গেল, টানা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাথ কিংবা বুলেভার্ডে পড়ে রয়েছে আবর্জনা। বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এ রকম টুকরো টুকরো আবর্জনাময় ছবি মিলবে বিধাননগরের প্রতিটি ওয়ার্ডেই। এমনকী, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধার ঘেঁষে বিধাননগরের প্রবেশপথ থেকে কাদাপাড়া-ফুলবাগান মোড় পর্যন্ত দত্তাবাদ অংশেও জমেছে আবর্জনার স্তূপ। কোথাও আবার জমে রয়েছে প্লাস্টিক। পুরনির্বাচনে জিতে আসার পরে এক বছর কয়েক মাস হল নতুন পুর-বোর্ডের। জঞ্জাল সাফাই ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজা হয়েছিল। কর্মীদের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে পরিবেশ-বিধি মেনে আবর্জনা সংগ্রহ-সহ, গোটা প্রক্রিয়াকে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথমে কয়েকটি ওয়ার্ডে চালু করা হয়েছিল। পরে প্রতিটি ওয়ার্ডেই তা চালু হয়। দ্রুত এই কাজে সাফল্য এসেছে বলেই দাবি পুরসভার। অথচ এই টুকরো টুকরো ছবিগুলি একেবারেই উল্টো কথা বলছে। |
এ ভাবেই সর্বত্র ছড়িয়ে জঞ্জাল। অর্কপ্রভ ঘোষের তোলা ছবি। |
পুরসভা সূত্রে খবর, বিধাননগরে প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি থেকে ফেলা ও রাস্তায় জড়ো হওয়া আবর্জনার মোট পরিমাণ ১২৫ মেট্রিক টন। প্রতিদিন এই পরিমাণ আবর্জনা মোল্লার ভেড়িতে ফেলতে পর্যাপ্ত গাড়িরও প্রয়োজন। কিন্তু বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ২০টি লরির মধ্যে ৭টি খারাপ, রাস্তার আবর্জনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৯টি বড় গাড়ির মধ্য ৫টি খারাপ। তবে এ ছাড়াও ৭টি ট্রাক্টর আছে।
কী বলছেন বিধাননগরবাসী?
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নিয়মিত সাফাই না হলেই আবর্জনা জমবে। আগের থেকে পরিষেবার মান কমেছে। বাসিন্দাদের সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “নিরাপত্তা নিয়ে যেমন বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক হয়, তেমনই পরিষেবা
উন্নয়নেও বাসিন্দাদের যুক্ত করা হোক।” বিধাননগর পুরসভার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সঙ্গীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় বলেন, “জঞ্জাল জমে থাকছে। পাশাপাশি, মেট্রোর কাজ চলার জন্যও কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে আশা করছি পুজোর আগেই শহর আবর্জনা মুক্ত হবে।” বিধাননগর উপদেষ্টা কমিটির আর এক সদস্য শিল্পী শুভাপ্রসন্ন এ বিষয়ে বলেন, “সল্টলেকে নতুন পুর-বোর্ড দায়িত্ব নিয়েছে। তারা কাজের বিষয়ে যথেষ্ট উদ্যোগী। তবে একটু ধৈর্য ধরে তাদের কিছুটা সময় দিতে হবে। রাজ্য সরকারও বিধানগরের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সমস্যাগুলি দ্রুত কেটে যাবে।”
প্রাক্তন চেয়ারম্যান পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) সিপিএমের রাধানাথ চাঁদ বলেন, “বিধাননগরে প্রতিদিন যে পরিমাণে জঞ্জাল জমা হয়, তা সাফ করতে গেলে পরিকাঠামো বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক সমস্যা থাকায় তা করা যায়নি। এখানে কয়েক দিন সাফাইয়ের কাজ বন্ধ হলেই বর্জনার
পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়। এখন দায়িত্বে এসে বর্তমান শাসক দল তা বুঝতে পারছে।”
তবে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হচ্ছে না বলে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান চেয়ারম্যান পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা বলেন, “জঞ্জাল সাফাই ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। সে কাজে সাফল্য এসেছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের পরিকাঠামো হলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যেমন, গাড়িগুলির অবস্থা বেশ খারাপ। সে কারণেই কয়েকটি ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া করা হচ্ছে। পুজোর আগেই প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশেষ অভিযান চালিয়ে আবর্জনামুক্ত করা হবে। তবে এই কারণে বাসিন্দাদের যে দুর্ভোগ হচ্ছে, তার জন্য দুঃখিত।” |