গুজরাত বিতর্কের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের মতো ‘আলঙ্কারিক’ পদ টিকিয়ে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন এনডিএ নেতৃত্ব।
গুজরাত সরকারকে পাশ কাটিয়ে রাজ্যের রাজ্যপাল যে ভাবে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করেছেন, তার প্রতিবাদে দিল্লিতে আজ এক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বিজেপি। দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী, বিশিষ্ট আইনজীবী রাম জেঠমলানী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ-সহ এনডিএর আহ্বায়ক শরদ যাদব উপস্থিত ছিলেন এই সম্মেলনে। গডকড়ীর উপস্থিতিতেই শরদ যাদব সেখানে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের মতো পদ বিলোপের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। বিভিন্ন প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্যপালের ভূমিকাকে বেনজির ভাবে তীব্র কটাক্ষও করেন শরদ। রাজ্যপাল পদের মর্যাদা ‘ক্ষুণ্ণ’ হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন গডকড়ীও।
অতীতে রাজ্যপাল নিয়োগ এবং সংবিধানের ৩৫৫ ধারার (বাইরের আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের কিছু বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ) অপব্যবহার নিয়ে বারবার সরব হয়েছে সিপিএম। বছর তিনেক আগে কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসের সময়ই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যপাল নিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুর প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর ভূমিকা নিয়ে তখন সরব ছিল রাজ্যের শাসক দল। |
শরদ যাদব |
এখন গুজরাতের রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে যে ভাবে মুখর হচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব ও নরেন্দ্র মোদী, সেই সময়ও বুদ্ধদেব
ভট্টাচার্য দাবি করেন, রাজ্যপালের নিয়োগ প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো নামে কেন্দ্রের
সায় দেওয়া উচিত। গোড়া থেকেই সংবিধানের ৩৫৫ ধারার অপব্যবহারের বিপক্ষে সিপিএম নেতৃত্ব। ইয়েদুরাপ্পার আমলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও কর্নাটকের রাজ্যপাল হংসরাজ ভরদ্বাজ যে ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেছিলেন, তার পর থেকে বিজেপি নেতৃত্বও রাজ্যপাল ও মনমোহন সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচক। |
|
কিন্তু আরও একধাপ এগিয়ে বিজেপি সভাপতির উপস্থিতিতেই শরদ যাদব এ দিন দাবি করেন, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালের মতো ‘আলঙ্কারিক’ পদ রাখারই প্রয়োজন নেই। যথেষ্ট কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির পদ তো হাতি পোষার সামিল। যত বাজে খরচ। আগেপিছে পুলিশ-সেনা। কোনও প্রয়োজনই নেই। গাঁধীজিও এক বার যখন জানতে পারেন, সেই সময় ভাইসরয়ের এক দিনের খরচ ন’হাজার টাকা, তিনি বলেছিলেন আর এক দিনও ভাইসরয়ের বাঁচার অধিকার নেই। এখন রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সেই খরচ কত বেড়ে গিয়েছে!” অতীতে বুটা সিংহ থেকে হাল আমলে কর্নাটকের হংসরাজ ভরদ্বাজ, বিহারের দেবানন্দ কুঁওয়ার, গুজরাতের কমলা বেনিওয়ালের মতো রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করে শরদ অভিযোগ করেন, “এঁরা এত রাজার হালে থাকেন, অথচ কোনও কাজ নেই। সে কারণেই যাবতীয় গরমিল করেন। দিল্লি থেকেও মদত মেলে।”
তাঁর বক্তব্য, এই কাজ করার জন্য এমন ব্যক্তিকেই বাছা হয়, যাঁদের ‘আর কোথাও যাওয়ার নেই’। অথচ রাজভবনগুলো সাধারণের জন্য খুলে দিলে রাজ্যের পর্যটন শিল্পে লাভ হতে পারে। গডকড়ী বা অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এর কোনও বিরোধিতা করেননি। বরং তাঁর মন্তব্যের সূত্র ধরেই গডকড়ী অভিযোগ তোলেন, কর্নাটক, গুজরাতের রাজ্যপাল সংবিধানের আওতা ভেঙে কাজ করছেন।
তবে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “শরদের মন্তব্য দলের অনেকেরই মনের কথা। এনডিএর আহ্বায়ক যে যুক্তি তুলে ধরেছেন, তা নিয়ে অন্তত বিতর্ক হোক।” |