ট্যাক্সির মিটারে প্রিন্টার থাকাটা এ বার বাধ্যতামূলক হতে চলেছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে প্রতিটি ট্যাক্সিতে প্রিন্টারযুক্ত মিটার বসিয়ে ফেলতে হবে। জনস্বার্থের একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার এই রায় দিয়েছে। আদালতের ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, যদি নির্দিষ্ট সময়ের পরেও কোনও ট্যাক্সি ওই মিটার না বসায়, তা হলে আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ওই ট্যাক্সির পারমিট খারিজ করে দেবে। ২০০৮ সালে রাজ্য সরকার প্রিন্টারযুক্ত মিটার বসাতে ট্যাক্সি-মালিকদের নির্দেশ দিয়েছিল। কিছু ট্যাক্সিতে সেই মিটার বসানো হলেও অধিকাংশ ট্যাক্সিই তা মানেনি।
ট্যাক্সির প্রিন্টারযুক্ত মিটারে ভাড়ার বিল হিসেবে একটি প্রিন্ট-আউট বেরোয়। তাতে গাড়ির নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ, তারিখ, সময় এবং কতটা দূরত্ব অতিক্রম করা হয়েছে এ সব তথ্য থাকে। তা ছাড়াও, ট্যাক্সিচালকের নাম, মালিকের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, পথে কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে এ সবও লেখা থাকে। এই মিটার লাগালে কারচুপি করার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যায়। |
ট্যাক্সি-মিটারের জালিয়াতি থেকে যাত্রীদের রেহাই দিতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য অনেক ব্যবস্থার মতো নজরদারি ও সদিচ্ছার অভাবে সরকারি এই নির্দেশও ঠিকমতো কার্যকর হয়নি।
প্রদীপ কুমার নামে এক ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা করেন। আবেদনে তিনি বলেন, এই প্রিন্টার-মিটার অত্যন্ত জরুরি। কোনও ব্যক্তি যদি ভুলে ট্যাক্সিতে কিছু ফেলে আসেন, তা হলে পুলিশের কাছে ওই ট্যাক্সির বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। অনেকেই তা দিতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, অনেকেই অফিসে বিল জমা দিয়ে ট্যাক্সিভাড়া পান। কিন্তু দেখা যায়, একই পথ অতিক্রম করতে এক-এক দিন এক-এক রকম ভাড়া দিতে হচ্ছে। ফলে অফিসে সেই ব্যক্তিকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। এ ছাড়া, অনেক ট্যাক্সিতেই গিয়ারের পিনিয়ন বেআইনি ভাবে বদলে মিটারে বেশি ভাড়া তোলার ব্যবস্থা করা হয়।
ট্যাক্সিচালক ও মালিকদের সংগঠনের তরফে আদালতে বলা হয়, প্রিন্টারযুক্ত মিটারের দাম ১০ হাজার টাকা। তা এককালীন তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ট্যাক্সি চালিয়ে মুনাফা হয় বলেই ট্যাক্সির পারমিটের জন্য এত আবেদন জমা পড়ে। তাই যাঁরা কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ট্যাক্সি কিনতে পারছেন, তাঁরা ওই অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে পারবেন না, এই যুক্তি কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। |