জেনারেটার জ্বালিয়ে রাতদিন কাজ করে, কয়েক হাজার বাঁশের ঝাড় গঙ্গায় ফেলেও বাঁচানো গেল না ভুতনির বাঁধ। শনিবার রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় ভাঙনের ধাক্কায় ভেঙে গিয়েছে ভুতনির হীরানন্দপুরের দুলর্ভটোলার বাঁধ। জলের তোড়ে বাঁধ ভাঙলেও জলস্তর নিচে থাকায় এখনও গঙ্গার জল ঢুকতে পারেনি হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। গঙ্গার জলস্তর নিচে থাকলেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় স্বস্তিতে নেই হীরানন্দপুরের বাসিন্দারা। কেননা, ভাঙা বাঁধের ফাঁকা অংশের পিছনে মাটির বস্তা ফেলে সেচ দফতর গঙ্গার জল ঢোকা রোখার চেষ্টা চালালেও জলস্তর বাড়লে যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন এলাকার মানুষ। যে কোন মুহুর্তে জল ঢুকে পড়তে পারে আশঙ্কায় হীরানন্দপুরের বাসিন্দারা ভাঙা বাঁধের উপরেই বসে থেকে রাত কাটাচ্ছেন। অসংরক্ষিত এলাকায় এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই জল বইছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির এখনও তেমন উন্নতি হয়নি। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার সুব্রত মজুমদার বলেন, “শনিবার রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পযর্ন্ত মারাত্মক ভাঙনে ভুতনির দুলর্ভটোলার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। দুই কিলোমিটার বাঁধের কোথাও ৫ শতাংশ, কোথাও ১০ শতাংশ বাঁধ টিঁকে আছে। গঙ্গার জলস্তর ২৫.২৬ মিটারে থাকায় জল এখন গ্রামে ঢুকতে পারেনি। তবে জল যাতে ঢুকতে না পারে সেই জন্য ভাঙা বাঁধের পিছনে মাটির বস্তা ফেলা হচ্ছে।” সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে কাছাকাছি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় মাটিও পাওয়া যাচ্ছে না। দূর থেকে মাটি এনে বস্তায় ভরতে হচ্ছে। এদিকে, ত্রাণ নিয়ে রবিবারও মালদহের রতুয়ায় বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। ত্রাণ না-মেলায় এদিন দুপুরে রতুয়া-১ বিডিও অফিসে চড়াও হয়ে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো বন্যা দুর্গত। পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকা সত্বেও স্রেফ নজরদারির অভাবেই সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। একই অভিযোগ করেছেন মালতিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বাম বিধায়ক রহিম বক্সিও। প্রশাসনের একাংশ অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলি অহেতুক নাক গলিয়ে ত্রাণ বিলিতে সমস্যা সৃষ্টি করছে। রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও পার্থ দে বলেন, “কয়েকটি এলাকায় সমস্যা রয়েছে। ত্রাণ বিলি নিয়ে অভিযোগও রয়েছে। প্রত্যেকেই যাতে ত্রাণ পান সেটা দেখা হচ্ছে।” ত্রাণ বিলি নিয়ে অভিযোগ ওঠায় শনিবার মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের গুদাম ইতিমধ্যেই সিল করে দেওয়া হয়েছে। তারই জেরে এদিন দুর্গতরা বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখান। ৩ ঘণ্টা বিক্ষোভ চলার পরে প্রশাসন গুদাম খুলে দেওয়ার আশ্বাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ করেছেন রতুয়ার ভেস্টপাড়া ও তেরবশিয়া প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণ শিবিরে থাকা দুর্গতেরা। ঘরে এখনও এখনও জল। ফুলহার বাঁধে ত্রিপলের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন জীবন মহালদার, প্রতিমা প্রামাণিকেরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, “একটা ত্রিপল, এক কেজি ছিড়ে ছাড়া কিছুই মেলেনি।” |