দু’বছর আগে বেলপাহাড়িতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা জলদবরণ কর ও তাঁর ভাই আশিস। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ সিপিএমের যুব সংগঠনের এক নেতাকে গ্রেফতার করল। যদিও মাওবাদীরাই এই খুনে জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি করেছিল পুলিশ। গত বছর ওই দুই ভাইয়ের পরিবার মাওবাদী হানায় নিহতদের জন্য প্রাপ্য ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন রাজ্য সরকারের কাছে।
২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর বেলপাহাড়ির বামুনডিহা গ্রামে খুন হন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য তথা যুব-তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য জলদবরণবাবু ও তাঁর ভাই। ঠিকাদারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জলদবরণবাবু। ভাই ছিলেন রেশন ডিলার। ঘটনার কিছু দিন আগে ‘চুক্তিভঙ্গকারী তৃণমূল নেতাদের শাস্তি দেওয়া’র হুমকি দিয়ে মাওবাদী পোস্টারও পড়েছিল বামুনডিহায়। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তখন অভিযোগ করেছিলেন, ‘পুলিশের সাহায্য নিয়ে এই খুন করেছে সিপিএম’। মাওবাদী নেতা কিষেণজিরও বক্তব্য ছিল, ‘সিপিএম এবং মাওবাদী বিরোধী গণ প্রতিরোধ কমিটি মিলেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” সিপিএম অবশ্য কঙ্কাল-কাণ্ডের পরে এই ঘটনাতেও ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র অভিযোগ তুলেছে।
২০১০ সালে নিহতদের পরিজনেরা সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে এফআইআরের বিষয়বস্তু উল্লেখ করে পুলিশ। এই মামলার মূল এফআইআর-এ অবশ্য কোনও অভিযুক্তের নাম ছিল না। তবে ঘটনার পরপরই এক জনকে ধরা হয়। পরে তিনি জামিনও পান। গত দু’বছরে তদন্তে আর বিশেষ এগোয়নি।
সম্প্রতি নিহত দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। গত ৯ অগস্ট জলদবরণবাবুর স্ত্রী অনুশ্রীদেবী ও আশিসবাবুর স্ত্রী প্রতিমাদেবী বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন। পুলিশ শনিবার বিকেলে ডিওয়াইএফের বেলপাহাড়ি লোকাল কমিটির সম্পাদক তপন মাহাতোকে গ্রেফতার করে। রবিবার তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠায় ঝাড়গ্রামের এসিজেএম আদালত।
যুব-তৃণমূলের বেলপাহাড়ি ব্লক সভানেত্রী অনুশ্রীদেবী বলেন, “আমার স্বামী ও দেওরকে সিপিএমের লোকেরাই খুন করেছে বলে প্রথম থেকে অভিযোগ জানিয়ে আসছি।” তা হলে মাওবাদী হানা হিসেবে ক্ষতিপূরণ চাইলেন কেন? অনুশ্রীদেবীর দাবি, “পুলিশই আমাদের আবেদন করতে বলেছিল।” তাঁর সংযোজন, “আমার স্বামীই যেখানে বেঁচে নেই, সেখানে ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে কী করব!” এই ‘পরিস্থিতিতে’ এখন কি আর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক? ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার গৌরব শর্মার বক্তব্য, “খোঁজখবর নিয়েই এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব।”
এ দিন তপনবাবুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বেলপাহাড়ি থানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন স্থানীয় সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদার অভিযোগ, “রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই তপনবাবুকে ফাঁসানো হল।” সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “নতুন করে ওই খুনের ঘটনায় আমাদের লোককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অথচ এর আগে নিহতদের পরিবার মাওবাদী হানার সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এটা ঠিক বোঝা গেল না।” |