বাউড়িয়ার কারখানা খোলার উদ্যোগ
কানোরিয়ার পরে বাউড়িয়া ফোর্ট গ্লস্টার কেব্ল কারখানা খুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পরে গত ২২ অগস্ট খুলে গিয়েছে উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের কানোরিয়া জুটমিল। অন্য দিকে ২০০৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ ঘোষণা করায় ওই দিন থেকে বন্ধ রয়েছে ফোর্ট গ্লস্টার কেব্ল কারখানা। ফলে কাজ হারিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। সম্প্রতি মহাকরণে কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠনগুলিকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী তথা উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক হায়দর আজিজ সফিও। বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানা চালানোর ব্যাপারে একমাসের মধ্যে শ্রমমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব দেবেন বলে জানিয়ে দেন। প্রস্তাবটি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সঙ্গে নিয়ে ফের বৈঠক ডাকা হবে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর।
বাউড়িয়া ফোর্ট গ্লস্টার কেব্ল কারখানা এক সময়ে ছিল এশিয়ার বৃহত্তম কেব্ল তৈরির কারখানা। কিন্তু ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে কারখানাটি রুগ্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে কারখানাটির শুনানি চলছে বিআইএফআর-এ। কারখানা খোলার জন্য ২০০৭ সালে একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে এই মর্মে কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তিও হয়। ওই চুক্তির ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেন। উৎপাদন চালু হওয়ার কথা ছিল ২০০৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে।
কিন্তু উৎপাদন শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগেই ঋণদানকারী তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মধ্যে একটির সঙ্গে গোলমাল বাধে কর্তৃপক্ষের। কারখানার যে সব সম্পত্তি ওই ব্যাঙ্কের কাছে জামানত হিসাবে রাখা ছিল তা তারা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয় একটি আর্থিক সংস্থার কাছে। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে কথা হয়েছিল এককালীন চুক্তির ভিত্তিতে তাদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়া হবে। ওই টাকা তাঁরা জোগাড় করে ফেলেছিলেন বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। অন্য দিকে, পাল্টা বক্তব্যে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, এককালীন নিস্পত্তির কোনও চুক্তি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের হয়নি। এমনকী, ওই আর্থিক সংস্থাকে কারখানার সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করার আগে বিষয়টি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সর্বত্র জানানো হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনও আপত্তি জানাননি বলেও ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়।
এই বিবাদের জেরে কারখানা খোলার প্রক্রিয়াটি ভন্ডুল হয়ে যায়। কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, তারা তৎকালীন রাজ্য সরকারের কাছে বার বার আবেদন জানিয়েছিল যাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ, ব্যাঙ্ক এবং যে আর্থিক সংস্থা নিলামের মাধ্যমে কারখানার সম্পত্তি কিনেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি মিটিয়ে দিয়ে কারখানাটি খুলে দেওয়া যায়। আবেদনের ভিত্তিতে তৎকালীন রাজ্য সরকার একাধিকবার বৈঠক করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। একই সমস্যা নিয়ে বিআইএফআর-এ ২৩ বার শুনানি হয়েছে। কিন্তু তাতেও জট কাটেনি।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে পাঁচটি শ্রমিক সংগঠন এবং একটি কর্মচারীদের সংগঠনের ‘যৌথ কমিটি’ কারখানা খোলার দাবি জানিয়ে ফের গত ১৫ জুন চিঠি দেয় মুখ্যমন্ত্রী-সহ শ্রমমন্ত্রী, সমবায়মন্ত্রী এবং উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদকে। চিঠি পাওয়ার পরেই হায়দর আজিজ সফি এবং সুলতান আহমেদ কারখানাটি খোলার বিষয়ে নতুন করে উদ্যোগী হন। দু’জনের উপস্থিতিতে মহাকরণে গত ১৯ জুলাই এবং ২৬ জুলাই, ১৬ অগস্ট সহাকরণে বৈঠক হয়। তিনটি বৈঠকেই কারখানা কর্তৃপক্ষ, ব্যাঙ্কগুলির প্রতিনিধি এবং বাউড়িয়ার স্থানীয় কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্বকে ডাকা হয়।
১৬ অগস্ট যে বৈঠক হয় তার সিদ্ধান্ত মোতাবেকই কারখানার সব স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠন, কর্মচারী সংগঠন, কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং ব্যাঙ্কগুলি এবং আর্থিক সংস্থাটির প্রতিনিধিদের নিয়ে শ্রমমন্ত্রী বৈঠক করেন। তিনি বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলেছি একমাসের মধ্যে প্রস্তাব জমা দেওয়ার জন্য। সেটি আসার পরে তা খতিয়ে দেখে ফের বৈঠক ডাকা হবে। তার আগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকেও আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের যদি কোনও বক্তব্য থাকে সেটাও আমি শুনে নেব। কারখানা খোলার বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.