একের পর এক ট্রাক ঢুকছে। নান্দনিক বা মধুর দৃশ্য কিছু নয়। কিন্তু এই ট্রাকের সারি দেখেই খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন হরেক আন্দোলন-অবরোধ আর বন্ধে নাজেহাল মণিপুরবাসী।
সদর হিল দাবি কমিটি ও ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলের বন্ধ-অবরোধের জেরে মাসখানেক ধরে মণিপুরের তিনটি প্রধান সড়ক বন্ধ। তার জেরে, রাজ্য জুড়েই তেল-গ্যাস-ওষুধ ও যাবতীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের নিদারুণ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তো আছেই, টানা অবরোধ আন্দোলনের ফলে অসুস্থ রোগীর ওষুধ অবধি মিলছে না। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত আটকে যাচ্ছে।
ডিজেল-পেট্রোলে টান পড়ায় লোকে গাড়ি ছেড়ে শরণ নিয়েছেন সাইকেলের। এমনকী সরকারি কর্তাব্যক্তিরও দেখা যাচ্ছে সাইকেলে চেপে কর্মস্থলে যেতে। দু’ দু’বার তেলের ট্যাঙ্কার আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। অবশেষে কাল বিকেল থেকে কড়া নিরাপত্তার ঘোরাটোপে তেল, গ্যাস এবং অত্যাবশ্যক পণ্য বোঝাই পাঁচশোর বেশি ট্রাক ৫৩ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে ইম্ফলে আনা শুরু হয়। কাল থেকে একে একে মণিপুর পৌঁছচ্ছে ট্রাক ও ট্যাঙ্কারগুলি। আজও দিনভর পণ্যবাহী ট্রাক ইম্ফল ঢুকতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা পণ্যবাহী ট্রাকে আক্রমণ না চালালেও একটি স্কুলের গাড়ি এবং দুটি ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার খবর মিলেছে।
আন্দোলন অবশ্য অব্যাহত। সদর হিল জেলা গঠনের দাবিতে সাপোমেইনায় বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আমরণ অনশন চালাচ্ছেন। অনশন আজ ১৩ দিনে পড়ল। অনশনরত আরও ছয় মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। এঁদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অনশনকারীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ জন। অন্য দিকে কাল রিমস্ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কেউ একটি গ্রেনেড রেখে যায়। কাগজে মোড়া গ্রেনেডটি দেখতে পেয়ে হাসপাতাল চত্বরে আতঙ্ক ছড়ায় পড়ে। পুলিশ এসে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে। হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার পি শান্তি বলেন, “অবরোধের জেরে হাসপাতালে ওষুধ নেই, অক্সিজেন নেই। চিকিৎসা হচ্ছে না ঠিকমতো। এর মধ্যে হাসপাতালে গ্রেনেড রেখে যাওয়ার মতো ঘটনা যারা ঘটায় তারা কাপুরুষ। একে আন্দোলন বলে না। জঘন্য কাজ করেছে দুষ্কৃতীরা।” |