|
|
|
|
আইরিনের দাপটে আমেরিকায় মৃত্যু ১৪ জনের |
বিধ্বস্ত নিউ ইয়র্কে নামছে আঁধার, আশঙ্কা বন্যারও |
সংবাদসংস্থা • নিউ ইয়র্ক |
চারদিকে শুধু জল থইথই। আলো নেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সপ্তাহান্তের শহর ঘরে বন্দি। আসলে জলবন্দি। রবিবার এই ছবি দেখা গেল খাস নিউ ইয়র্কে।
রবিবারের সকালেই হারিকেন আইরিন তার দ্বিতীয় আঘাত হানল নিউ জার্সি আর নিউ ইয়র্কে। যদিও আবহবিদেরা আশার বাণী শুনিয়েছেন আজ। ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে ঝড়। ক্রমশ পূর্বে সমুদ্রের দিকে সরেও যাচ্ছে আইরিন। তবে নিউ জার্সির সমুদ্রতট বরাবর কাল সারা রাত ধরে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। আইরিনের দাপটে ইতিমধ্যেই গোটা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন।
ঝড়ের অভিঘাতে পুরোপুরি বিধ্বস্ত নিউ ইয়র্ক। বৃষ্টি চলছে। শুধু নিউ ইয়র্কেই বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন প্রায় দু’লক্ষ মানুষ। মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ বলেছেন, “লোকজন যথাসম্ভব সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।” ঝড়ের প্রকোপে নিউ ইয়র্কের হাডসন নদীতে বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। সম্ভাবনা রয়েছে ম্যানহাটনের নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার। আজ সকাল থেকেই শহরের বেশ কিছু রাস্তায় জল ঠেলে গাড়ি পার হওয়ার ছবি দেখা গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছ। ব্রঙ্কসের একটি আশ্রয় শিবিরের তিন তলায় ঠাঁই হয়েছে জিল রুবেনস্টেইনের। নিউ ইয়র্ক শহরের এমন ছবি কখনও দেখেননি তিনি। আশ্রয় শিবির থেকে ভয়ার্ত গলায় বললেন, “মনে হচ্ছে যেন হলিউডের কোনও ছবি দেখছি। চার দিকে শুধু জলের স্রোত। আর হু হু করে হাওয়া বইছে।” নিউ ইয়র্কের সব মন্দির এবং গুরুদ্বারও বন্ধ। সাধারণত সপ্তাহান্তে এই সব জায়গায় ভিড় জমান ভারতীয় বংশোদ্ভূতেরা। সাবওয়ে (নিউ ইয়র্কের মেট্রো) থেকে বাস, যান পরিষেবা পুরোপুরি স্তব্ধ নিউ ইয়র্কে। এই অবস্থায় ঘরবন্দি শহরবাসীর চিন্তা এখন একটাই। সোমবার কাজে বেরোনো যাবে কি?
|
|
জলছবি এ বার খাস নিউ ইয়র্কেও। হারিকেন বিধ্বস্ত শহরে
তাই জল ভেঙেই যাত্রা। রবিবার এ এফ পি-র তোলা ছবি। |
নিউ ইয়র্কে জন এফ কেনেডি, লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর এবং নিউ জার্সিতে নেওয়ার্ক বিমানবন্দর এখনও বন্ধ। বাতিল হয়েছে ৮৩৩৭টি বিমান। নয়াদিল্লি এবং মুম্বই থেকে নিউ ইয়র্ক ও নিউ জার্সিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার সব বিমানও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আগেই নিউ জার্সির অয়েস্টার ক্রিক পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই কেন্দ্র থেকে ছ’লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। আরও বেশ কিছু এলাকায় যে কোনও মুহূর্তে অন্ধকার নামতে পারে বলে সতর্ক করেছে প্রশাসন।
আইরিনের কোপে বিধ্বস্ত আমেরিকার গোটা পূর্ব উপকূলের বিভিন্ন এলাকা। বন্ধ করতে হয়েছে পূর্ব উপকূলের তেল শোধনাগারগুলিও। ‘ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার’ জানাচ্ছে, স্থলভাগ থেকে ঝড়ের কেন্দ্র সরে গিয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া বইছে প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ মাইল বেগে। গত কালও আইরিনের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ মাইল। যা থেকে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, দুর্বল হচ্ছে হারিকেন। নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ভার্জিনিয়ায় ঝড়ে ভেঙে পড়েছে বেশ কিছু বাড়ি। নর্থ ক্যারোলাইনাতেই হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। পুলিশ জানাচ্ছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুই হয়েছে গাছ বা চিমনি পড়ে। একটি বাড়িতে আগুন লেগেও মারা গিয়েছেন এক ব্যক্তি। প্রশাসন জানাচ্ছে, ১৩ হাজার মানুষ উপকূল এলাকার রেড ক্রসের ১৫০টি কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকটি শহরে কার্ফুও জারি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কনফারেন্স কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তাঁর প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় অফিসারদের সঙ্গে। নিউ জার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে কয়েকশো কোটি ডলারের সম্পত্তি। ঝড়ের বেগ কমলেও বৃষ্টি হচ্ছে অবিরাম। ‘ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার’ জানিয়েছে, জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে। তাদের নির্দেশ, নিজেদের কাছে খাবার, ফ্ল্যাশলাইট, ব্যাটারি, জল মজুত রাখুন। প্রতিরক্ষা সচিব লিওন পানেত্তা ত্রাণ পৌঁছতে ৬৫০০ জনের বিশেষ বাহিনীকে নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|