দুই ভাইপো ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন সিপিএম কর্মী কাকাকে খুনের অভিযোগ জানাতে। এক কংগ্রেস কর্মীকে খুন ও দেহ লোপাটের অভিযুক্ত হিসেবে সেখান থেকেই তাঁদের গ্রেফতার করল পুলিশ। কাটোয়ার গুসুম্ব গ্রামের ওই ‘নিখোঁজ’ কংগ্রেস কর্মী নিমাই সাহার হদিস মেলেনি রবিবারেও। পক্ষান্তরে, শনিবারের হামলায় নিহত ওই সিপিএম কর্মী নারায়ণ দাসের দেহ ময়না-তদন্তের পরে গ্রামে নিয়ে যেতে আসেননি তাঁর পরিবারের কেউই।
শুক্রবার বিকেলে পাশের গ্রাম বরমপুরে ভাইঝির শ্বশুরবাড়ি থেকে গুসুম্বয় ফেরার সময়ে নিখোঁজ হন কংগ্রেস কর্মী নিমাইবাবু। অভিযোগ ওঠে, খুন করে লোপাট করা হয়েছে নিমাইবাবুর দেহ। শনিবার দুপুরে ‘পাল্টা’ হামলা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই গুসুম্বর পাশে মঙ্গলকোটের বাজার গ্রামে খুন হন সিপিএম কর্মী নারায়ণবাবু। বাড়ি পোড়ানো হয় দুই সিপিএম সমর্থকের। |
শনিবার সকালে ২১ জনের বিরুদ্ধে নিমাইবাবুকে খুন ও দেহ লোপাটের অভিযোগ করেন তাঁর ভাই শান্তনু সাহা। সন্ধ্যায় মঙ্গলকোটের কৈচর ফাঁড়িতে নারায়ণবাবুকে খুনের ঘটনায় সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাঁর ভাইপো মিঠুন দাস ও সুশান্ত দাস। কিন্তু নিমাই সাহাকে খুন ও দেহ লোপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে মিঠুন ও সুশান্তকে ধরে পুলিশ। বাড়ি পোড়ানোয় জড়িত সন্দেহে রাতে আরও ২১ জনকে ধরা হয়। কাটোয়া আদালতে এ দিন হাজির করানো হলে ধৃতদের ১৪ দিন জেল-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সিপিএম কর্মী খুনের ঘটনায় অবশ্য কেউ ধরা পড়েনি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।”
গুসুম্ব গ্রামের দাসপাড়ায় এ দিন সকালে গিয়ে দেখা যায়, সব বাড়িতেই তালা। নারায়ণবাবুর বাড়িতেও কেউ নেই। এ দিন কাটোয়া হাসপাতালে নারায়ণবাবুর দেহের ময়না-তদন্ত হয়। তবে দেহ নিতে যাননি তাঁর স্ত্রী-ছেলেরা। কাটোয়ায় দেহ সৎকারের সময়ে ছিলেন নদিয়া থেকে আসা নারায়ণবাবুর কয়েক জন আত্মীয়। সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সদস্য অভেদানন্দ ঠাকুর বলেন, “আতঙ্কে এলাকা জনশূন্য। কে কোথায় রয়েছে, খোঁজ নেই। গ্রাম থেকে কে আসবে দেহ নিতে?” |
কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের কর্মীকে খোঁজার কথা বলেছি পুলিশকে। খুন ও দেহ লোপাটের ঘটনায় অন্য অভিযুক্তদের ধরার দাবি জানিয়েছি।” এ দিকে, সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সদস্য সুরাত আলির অভিযোগ, “ধৃত ২৩ জনই আমাদের কর্মী-সমর্থক। আমাদের সমর্থকদের বাড়ি পুড়ল, কর্মী খুন হলেন। তবু ষড়যন্ত্র করে আমাদের লোকজনকেই ধরা হল।” দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকেরও দাবি, “পুলিশ নিরপেক্ষ থাকলে গুসুম্বায় এমন ঘটত না।” পুলিশ সুপারের দাবি, “আমরা নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছি।”
|