|
|
|
|
আমাদের চিঠি
|
পর্যটন-পরিকল্পনা কোথায়? |
|
কাজিপাড়ার মসজিদ। |
নদিয়া জেলার চাকদহ পৌরসভার পালপাড়ায় অবস্থিত ইটের বিশালাকৃতি মন্দিরটি অন্তত ছশো বছরের পুরনো। তবে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা কে বা কারা, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। মন্দিরটি ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এটি নদিয়া জেলার প্রাচীন মন্দিরগুলির অন্যতম এবং সম্ভবত সর্ববৃহৎ চারচালা মন্দির। এই দক্ষিণমুখী মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ২৬ ফুট ৮ ইঞ্চি, প্রস্থ ২১ ফুট এবং উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। ভেতরের ছাদ গম্বুজাকৃতির। মন্দিরের সামনে কোনও বারান্দা নেই। প্রবেশপথ পত্রাকৃতি খিলানের ওপর, দু’পাশে টেরাকোটার কাজ ভগ্নাবস্থায় বিদ্যমান। পেছনের দেয়ালেও টেরাকোটার পদ্ম আছে। প্রবেশ খিলানের উপরে অতি সূক্ষ্ম নকশিলতা, তার উপর মোট ১৪টি আটচালা দেবালয়ের প্রতিটির ভেতরে ছোট ছোট উপাসক মূর্তি উৎকীর্ণ আছে। অতি সুন্দর বড় বড় পদ্মগুলির অধিকাংশই ভিন্ন ভিন্ন গঠনের। দেয়ালের বাঁ-দিকে প্রান্ত সংলগ্ন খাড়া ছয় সারি জ্যামিতিক নকশাও লক্ষণীয়। প্রবেশপথের ঠিক উপরে লঙ্কা যুদ্ধের দৃশ্য। বাম দিকে ধনুর্বাণধারী রামচন্দ্র ও বানর সেনা ও ডান দিকে রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও রাক্ষসবৃন্দ। প্রবেশপথের চার পাশে বিচিত্র ধরনের আটটা দু’মুখো সাপ চিত্রিত। এই মন্দিরটিতে ব্যবহৃত ইটের আকৃতি ও গঠন বিন্যাসেও এর প্রাচীনত্ব স্পষ্ট। |
|
পালপাড়ার মন্দির। |
শোনা যায়, বহু পূর্বে রানাঘাট মহকুমাশাসক মন্দিরের ভিতরে প্রাপ্ত দু’টি শিলালিপি খুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য পরবর্তী সময়ে ওগুলির আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। কাছাকাছি কয়েকটি ঢিবি আছে, যেগুলির খননকার্য কখনও হয়নি। এ ছাড়া, কাছাকাছি আছে জোড়া শিবমন্দির, মহেশ পণ্ডিতের পাট এবং প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে কাজিবাড়ির প্রাচীন মসজিদ। এই কাজিবাড়ির সন্তান মির্জা মহম্মদ ইহ্তেশামুদ্দিন ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিলাত যাত্রা করেন। কুমুদনাথ মল্লিক তাঁর নদীয়া কাহিনী-তে (১৯১০) কাজিপাড়া সম্পর্কে লিখেছেন: “এই কাজিপাড়ার প্রাচীন নাম পাঁজনুর, এখনো এতদঞ্চল পরগনা পাঁজনুরের অধীন। কথিত আছে এই কাজীগণের পূর্বপুরুষ পাণ্ডুয়ায় যুদ্ধকালে এদেশে আগমন করেন।” কাজিপাড়ার মসজিদটি আনুমানিক তিনশো বছরের পুরনো। মুঘল শৈলীর এই তিন গম্বুজ মসজিদটি একদা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের পবিত্র ধর্মস্থান ছিল। সংস্কারের অভাবে জীর্ণ হলেও এখনও তা ভেঙে পড়েনি। তবে মুসলমান বসতি অনেক দূরে সরে যাওয়ায় এখানে আর নমাজ হয় না। কাজিপাড়ার অদূরে বর্তমান রেল লাইনের পূর্ব দিকে আছে প্রাচীন পাঁজনুরের স্মৃতিরূপে বিশিষ্ট দু’টি মাজার শরিফ। একটি হজরত শাহ সুলতান জাহিরুদ্দিন বাকি-র সমাধি, অপরটি হজরত শাহ আদম শহিদের। সম্ভবত দ্বিতীয়জনই ছিলেন পাঁজনুর এলাকার প্রতিষ্ঠাতা। এটি প্রায় পাঁচশো বছরেরও বেশি আগের কথা। কারণ, পুরী যাওয়ার পথে চৈতন্যদেব এখানে বিশ্রাম করেন বলে একটা কিংবদন্তি আছে। ১৮৫৫-য় পাঁজনুরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় কাজিপাড়া। এখানে সর্বশেষ কাজি ছিলেন কাজি ওয়াহিদুদ্দিন। সম্রাট আকবরের সময় থেকে ১৮৭৫ পর্যন্ত পাঁজনুর বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম পীঠস্থানে পরিণত হয়। ১৯৪৭-এর পর থেকে এলাকার গৌরব হ্রাস পেতে শুরু করে, কারণ ১৯৪৮-এ এই বংশের প্রভাবশালী বংশধর মৌলবি এন হক চৌধুরি সহ অন্য সদস্যরা দেশত্যাগ করেন। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে পালপাড়া বা চাকদহ স্টেশনে নেমে রিকশা বা ভ্যানে এলাকায় যাওয়া যায়। এই এলাকার পর্যটন সম্ভাবনা যথেষ্ট, কিন্তু সে ভাবে কোনও মহলেই কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।বিপুলরঞ্জন সরকার। নেতাজি পার্ক, চাকদহ, নদিয়া
|
ছবি: বিপুলরঞ্জন সরকার। |
|
|
|
|
|