|
|
|
|
পাড় উপচে জল ঢুকছে নির্মলচরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিতলা |
মিশে গিয়েছে পদ্মা আর চর। ডুবে গিয়েছে পানীয় জলের নলকূপগুলিও। বানভাসি চরের মানুষের তেষ্টা মেটাচ্ছে পদ্মার জলই।
গত দু’দিনে নির্মলচরের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। উত্তর দিক লাগোয়া মূল পদ্মার পাড় উপচে জল ঢুকছে চর এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে। ফলে আগামী দিন বন্যা পীড়িতদের মধ্যে বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে পেটের রোগ ছড়াবে বলে আতঙ্কিত বানভাসি মানুষ।
এই অবস্থায় ভগবানগোলা-২ ব্লক কার্যালয় থেকে রবিবার বিকেলে ত্রাণ লুঠের ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। আখরিগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের নায়েব আলি শেখ বলেন, “নির্মলচরের পাতিবোনা সংসদ এলাকার বানভাসি মানুষের মধ্যে বিলি করার জন্য ৫০টি ত্রিপল ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এলাকায় পৌঁছানোর আগেই তা ব্লক কার্যলয় থেকেই লুঠ হয়ে যায়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্লক প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে লিখিত অভিযোগ বিডিও-র কাছে জমা দিয়েছি।”
|
|
আশ্রয় এখন নৌকা। |
ভগবানগোলা-২ ব্লকের বিডিও আশিসকুমার রক্ষিত অবশ্য ত্রাণ লুঠের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু ত্রাণ লুঠের কোনও ঘটনা ঘটেনি। নিজেদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে ত্রাণ হিসেবে যে ত্রিপল দেওয়া হয়েছিল, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আশা করছি তা খুঁজে পাওয়া যাবে। এ নিয়ে কোনও জটিলতা নেই।” নির্মলচরের ৫টি সংসদ এলাকা পাইকমারি, মাঝচর, মনসুরপুর, ঘোষপাড়া, পাতিবোনায় এই মুহূর্তে বানভাসি মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “গত কয়েক দিনের বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সকলেরই বাড়ির উঠোনে এক কোমর জল। তাই টিনের চালার উপরে পলিথিন খাটিয়ে তার তলায় দিন কাটাচ্ছি। বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে মাচান করে টিন কেটে উনুন তৈরি করা হয়েছে।”
এদিকে বানের জলে ভাসছে বিঘার পর বিঘা পাট। একই অবস্থা আউস ধানেরও। এ মাসের শেষের দিকেই আউস কাটার সময়। কিন্তু তার আগেই বন্যায় আউস ডুবেছে।
নির্মলচর ফ্লাড সেন্টার ও জাকিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী বসত গড়েছেন গোটা ২০ পরিবার। গবাদি পশু বিশেষ করে গরু-বাছুর জলের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। ছাগল রয়েছে টিনের চালার উপরে। পাতিবোনার বাসিন্দা আখরিগঞ্জের উপপ্রধান ফরওয়ার্ড ব্লকের সারথি মণ্ডল বলেন, “ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষ-গবাদি পশু একই জায়গায় বসবাস করছে। পানীয় জলের আকাল দেখা দিয়েছে। পদ্মার জলই মানুষ খেতে বাধ্য হচ্ছেন।” |
|
ত্রাণের অপেক্ষায় নির্মল চরের পাইকমারি গ্রামে। |
তিনি বলেন, “এতে পেটের রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্তকুমার মণ্ডল বলেন, “নির্মলচরের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যে পরিকল্পনা, প্রশাসনের তরফে তার অভাব রয়েছে। এমনকী এখন পর্যন্ত বিডিও এলাকা সরজমিনে তদন্ত করতেও যাননি। ত্রাণের অভাব রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বানভাসি মানুষদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারি কোনও নৌকারও ব্যবস্থা ছিল না। মেডিক্যাল টিমও এখন পর্যন্ত এলাকায় যায়নি। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, তবে র্দীঘ দিন ধরে তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।”
রবিবার অবশ্য ব্লক কার্যালয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সোমবার থেকে চর এলাকায় যাতায়াতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রশাসনের তরফে ৭টি নৌকা রাখা থাকবে। লালবাগের এসডিও চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “নির্মলচরের বাসিন্দাদের হতাশার কোনও কারণ নেই। চর এলাকার প্রতিটি পরিবারকে পর্যপ্ত পরিমাণে ত্রাণ দেওয়া হবে। বন্যা পরিস্থিতির উপরে আমরা নজর রাখছি।”
|
ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
|
|
|
|
|